হলুদ চাষের কৌশল

0

কৃষি সংবাদ :  হলুদ বাংলাদেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মসলা ফসল। বাংলাদেশের এমন কোন ব্যঞ্চন নাই যাতে হলুদ ব্যবহার হয় না। ভেষজ চিকিৎসায় এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। খাদ্য হিসেবেও এটি বেশ উপকারী। এতে প্রচুর পুষ্টিমাণ রয়েছে।

হলুদ চাষের জলবায়ু : হলুদ উষ্ণ, অবউষ্ণ ও আদ্র জলবায়ুর ফসল। ছায়া, আধোছায়া, বৃষ্টিপাত সমৃদ্ধ পাহাড়ি অঞ্চলে হলুদ জন্মে। তবে প্রখর রোদযুক্ত জায়গায় বেশি কন্দ উৎপাদন হয়। কম তাপমাত্রায় বা ঠান্ডায় হলুদের বৃদ্ধি কমে যায়। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১০০-২০০ সে:মি: হলুদ চাষের জন্য ভাল। হলুদ ২০-৩০০ সে: তাপমাত্রায় ভাল জন্মায়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচুঁতেও হলুদ জন্মে।

হলুদ চাষের মাটি : প্রায় সব ধরনের মাটিতেই হলুদ চাষ হয়। তবে পানি নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দো-আঁশ থেকে পলি দো-আঁশ মাটিতে হলুদের ফলন বেশি হয়। প্রচুর জৈব পদার্থযুক্ত মাটি হলুদ উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। মাটির অম্ল বা চঐ ৫-৬ হলে ভাল হয়।

হলুদের জাত : এ দেশে বেশ কিছু স্থানীয় জাতের হলুদ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাষ হয়ে আসছে। তবে এসব জাতের ফলন তুলনামূলক ভাবে কম। এদেশে উচ্চ পলনশীল (উফশী) জাত হিসেবে কয়েকটি জাত কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে।

হলুদের উৎপাদন মৌসুম : বাংলাদেশে খরিপ মৌসুমে হলুদের চাষ হয়। মধ্য মার্চ হতে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত হলুদের কন্দ লাগানোর উত্তম সময়। দেরিতে হলুদ লাগালে শুধু গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। মোথা বা হলুদ কম হয়।

হলুদের বীজ শোধন ও পরিমাণ : হলুদকে কন্দ পঁচারোগ থেকে রক্ষার জন্য বীজ রোপণের পূর্বে কন্দ শোধন করে নিতে হবে। এজন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা রিডোমিল গোল্ড অথবা ডারথেন এম- ৪৫ ছত্রাক নাশক গুলে সেই পানিতে ২০ কেজি হলুদের কন্দ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর বীজগুলো পানি থেকে উঠিয়ে বাঁশের চাটির উপর দিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে চাষকৃত জমিতে লাইন ধরে রোপণ করতে হবে। হলুদের বীজ হিসেবে কন্দ (জযরুড়সব), মোথা (ঈড়ৎস), কুশি  (ঋরহমবৎ) ব্যবহার করা যায়। বীজ হিসেবে কন্দকে কেটে টুকরা করা হয়। কিন্তু মোথা ও কুশি আস্ত লাগাতে হয়। প্রতিটি কন্দের ওজন ৩০-৪০ গ্রাম হওয়া বাঞ্চনীয়। প্রতি হেক্টরে ২-৩ টন কন্দের দরকার হয়। এক একরে লাগে ২৫-৩০ মন বীজ।হলুদের সার ব্যবস্থপনাঃ ভাল ফলনের জন্য হলুদের জমিতে প্রচুর জৈবসার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। কৃষি পরিবেশ অঞ্চলের উপর সারের পরিমান নির্ভর করে। হলুদ চাষের জন্য প্রতি হেক্টর জমিতে সার প্রয়োগের পরিমাণ সারণি আকারে দেখানো হলো।

বি:দ্র: ইউরিয়া ও এমওপি সার উপরে বর্ণিত সময়ের মধ্যে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাটিতে দস্তা ও বোরনের অভাব থাকলে হেক্টর প্রতি ৩.৫০ কেজি জিংক সালফেট ও ২ কেজি বোরিক এসিড দিতে হবে।

হলুদের অন্তর্বর্তিকালীন পরিচর্যা : হলুদ চাষে লতা-পাতা বা ধানের খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, মালচিং পঁচে মাটিতে জৈব সার যোগ করে উর্বরতা বাড়ায়। মাটি শুষ্ক থাকলে বীজ বপনের পর পরই জমিতে সেচ দেয়া প্রয়োজন। জমি বেশী ভিজা থাকলে কন্দ পঁচে যেতে পারে, তাই জমিতে অতিরিক্ত পানি রাখা যাবে না। বীজ লাগানোর ৩-৪ দিন পর প্রথম আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। এরপর যথাক্রমে ৫০, ৮০, ১০০ ও  ১২০ দিন পর আগাছা নিড়ানি দিয়ে নিড়িয়ে দিতে হবে।

হলুদের রোগ লক্ষণ ও প্রতিকারঃ হলুদ গাছে পোকার চেয়ে রোগের আক্রমণ বেশী হয়। রোগের মধ্যে কন্দ পঁচা রোগ প্রধান। তবে পাহাড়ী অঞ্চলে সম্প্রতি পাতা ঝলসানো রোগও ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। পোকার মধ্যে হলুদ গাছের ডগা ছিদ্রকারী পোকা অম্যতম।

হলুদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ বপনের ৯-১০ মাস পর গাছের পাতা যখন হলদে রং ধারণ করে শুকিয়ে যায় ঠিক তখনই হলুদ সংগ্রহের সময়। জানুয়ারির শেষ হতে মার্চের প্রথম পর্যন্ত হলুদ সংগ্রহ করা হয়। যথা সময়ে হলুদ সংগ্রহ করা না হলে হলুদের ‘কারকিউমিন’ রং কমে যায়। লাঙ্গল বা কোদাল দিয়ে খুব সতর্কতার সাথে জমি খুড়ে হাত দিয়ে হলুদ সংগ্রহ করা হয়। হলুদে লেগে থাকা মাটি, গাছের পুরানো পাতা ও কান্ড আলাদা করা হয়। এরপর শিকড় কেটে মোথা ও ছড়া (কুশি) আলাদা করা হয়। ভালভাবে পরিষ্কারের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে পানি ব্যবহার করতে হবে।

হলুদের পরিষ্কারকৃত মোথা ও ছড়াকে পরিচ্ছন্ন ছায়াযুক্ত স্থানে গাঁদা করে রেখে পরিষ্কার পাতা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ২-৩ দিনের মধ্যে হলুদ থেকে উৎপন্ন ঘাম ঝরে যাবে। এই প্রক্রিয়াকে হলুদের ঘাম ঝরানো বা সুয়েটিং বলে।

হলুদ চাষ করলে হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ টন হলুদ পাওয়া যায়। ১০০ কেজি কাঁচা হলুদ হতে ২৫-৩০ কেজি শুকনা হলুদ পাওয়া যায়। হলুদ গাছ ছায়া সইতে পারে বলে বাড়ির আঙ্গিনায়, ফল বাগানে এর চাষ করা যায়। আমবাগান, নারিকেল বাগান, লেবু গাছের নিচে হলুদ চাষ করা যায়। পাহাড়ে হলুদের সাথে শিমুল আলু, ভূটা, কাউন, চুকুর ইত্যাদি লাগানো হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.