আনোয়ারা উপজেলার বটতলী রুস্তমহাটের বিকল্প সড়ক হতে পারে শাহ্ মোহছেন আউলিয়া ডাইভারশন সড়ক

0

— এডভোকেট সালাহ্উদ্দিন আহমদ চৌধুরী লিপু

“আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর, থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর, পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই, এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই, আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান, আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে, বাঁচিয়েছে প্রাণ, মাঠ ভরা ধান আর জল ভরা দিঘি, চাঁদের কিরণ লাগি করে ঝিকিমিকি, আম গাছ, জাম গাছ, বাঁশঝাড় যেন, মিলে মিশে আছে যেন আত্মীয় হেন।” গ্রামের কথা মনে হলে এ কবিতাটি মনে পড়ে যায়। গ্রামে রয়েছে নির্মল বায়ু, সবুজের সমারোহ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী গ্রামে বসবাস করে। সে গ্রাম উন্নয়ন হলে দেশ উন্নয়ন হবে। এখনো পর্যন্ত গ্রাম অনুন্নত বলে উন্নত জীবন ও পরিবেশের জন্য গ্রামের মানুষ শহরের পানে ধাবিত হচ্ছে। যদি গ্রাম বাংলায় ব্যাপক উন্ন্য়ন হয় তবে গ্রামের মানুষ আর শহরে ছুটে আসবে না। ফলে শহরের ক্রমবর্ধমান চাপ হৃাস পাবে। বাঙালী জাতির যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের অধিকাংশ নেতা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নিয়েছেন এবং তারা দেশ বরেণ্য হয়েছেন।

lipu pic
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী রুস্তমহাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সুপ্রাচীন এক ঐতিহ্যবাহী হাট। অতীত কালে চকরিয়া, পেকুয়া, সাতকনিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পটিয়া এলাকার লোক রুস্তম হাটে এসে হাট বাজার করতো। এখনো এ হাটের সুনাম ও ঐতিহ্য অক্ষুন্ন থাকলেও বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা ম্লান হচ্ছে। মূলতঃ আদিকাল হতে সপ্তাহের দুইদিন সোম ও শুক্রবার হাটবার বসলেও এখন প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে বাজার বসে। গ্রামের বিনোদনের একটি মাত্র স্থান স্থানীয় হাট বাজার। প্রতিদিন এখানে দুরদুরান্ত থেকে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। এখন বটতলীকে উপ-শহর বলা যায়। আনোয়ারার উপজেলার মধ্যে বটতলী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান। একটি উপশহরে যা কিছু বিদ্যমান থাকার কথা তা সব কিছুই এ এলাকায় রয়েছে। এ এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় এখানে শিক্ষিতের হার অনেক বেশী। এখানে আইনজীবি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ব্যাংকার, সরকারী আমলা সহ অনেক প্রতিথযশা ব্যক্তি জন্ম নিয়েছে, তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রেখে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করছেন।
এ রুস্তম হাটের দক্ষিণ প্রান্তে শায়িত আছেন প্রসিদ্ধ সাধক অলিকুল শিরোমনি হযরত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া (রাঃ)। যার কারণে অত্র এলাকা গর্বিত ও আলোকিত হয়েছে। এখানে প্রতিদিন রুস্তম হাট দিয়ে দুরদুরান্ত থেকে অগণিত ভক্তগণ গাড়ী যোগে মাজার জেয়ারতের উদ্দেশ্যে এখানে আসেন। তাছাড়া রুস্তম হাটে রয়েছে তিন সহস্্রাধিক দোকানপাঠ, মার্কেট, বিভিন্ন এনজিও সংস্থার দপ্তর, তিনটি ব্যাংক, বীমা, ভূমি অফিস, ডাকঘর,নিকাহ্ নামা অফিস, স-মিল, রাইস মিল, কলকারখানা ইত্যাদি রয়েছে। তাছাড়া অত্র হাটের দক্ষিণ পার্শ্বে শাহ মোহছেন আউলিয়া (রাঃ) উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, এয়াকুবিয়া দাখিল মাদ্রাসা, শাহ মোহছেন আউলিয়া (রাঃ) জামে মসজিদ, কিন্ডারগার্টেন, পল্লী বিদ্যুৎ সাব-ষ্টেশন, বাজারের মধ্যে রয়েছে রুস্তম হাট জামে মসজিদ ও হাটের অনতিদুরে শাহ মোহছেন আউলিয়া (রাঃ) ডিগ্রি কলেজ স্থিত আছে।
বটতলী ইউনিয়নের প্রধান সড়ক রুস্তম হাটের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে দক্ষিণে জুঁইদন্ডি ও পশ্চিমে রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা পর্যন্ত। রুস্তম হাট সড়কের মাধ্যমে প্রতিদিন বটতলী ইউনিয়নবাসী ছাড়াও জুঁইদন্ডি, সরেঙ্গা, রায়পুর, গহিরা, বারশত, গুন্দ্বীপ, বোয়ালিয়া, পারকী এলাকার লোকজনের চট্টগ্রাম জেলা শহর, উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়ত এবং এই রুস্তম হাটের মধে দিয়ে অসংখ্য বাস, ট্রাক, পিকআপ, টেম্পু, জীপ, সিএনজি টেক্সী, রিকসা প্রতিদিন চলাচল করে। সিএনজি টেক্সী, রিকসা ভ্যানগাড়ি ইত্যাদি যত্রতত্র ষ্ট্যান্ড ও রাস্তার দু’ পাশে ভাসমান দোকান বসায় এখানে নিত্যদিন তীব্র যানজট লেগে থাকে। দীর্ঘ ও তীব্র যানজটের কারণে অতি কষ্টে রুস্তম হাট অতিক্রম করতে হয়। হাটের আবর্জনা পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধে বাজারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সরকার রুস্তম হাটের নির্ধারিত শেডে হাট বাজার বসার স্থান করে দিলেও একটি মহল উক্ত শেড বেআইনী স্থায়ীভাবে ভাড়া প্রদান করায় ঐখানে আর অস্থায়ী হাট বাজার বসতে পারে না। ফলে অস্থায়ী ও ভাসমান দোকান বাজারে রাস্তার পাশে বসায় মাজারে আসা ভক্তগণ, ব্যবসায়ী, ক্রেতা সাধারণ ও সাধারণ জণগণ ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বর্ষাকালে হাটে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে অত্র এলাকার মানুষ সীমাহীন কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। অত্র হাটে অতীতে প্রতি হাটবারে গরুর বাজার বসলেও নানাবিধ কারণে বর্তমানে আর গরুর বাজার মিলে না।

তৎপ্রেক্ষিতে গরুর বাজারটি উন্মুক্ত ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় দিন দিন বেদখল হচ্ছে। হাটের বিশাল গরুর বাজারটিতে অনেক অব্যবহার্য্য জায়গা পড়ে আছে। উক্ত গরুর বাজার হাটের বহিরে অবস্থান হওয়ায় তথায় বাস, ট্রাক, টেম্পু ও টেক্সী ষ্ট্যান্ড স্থাপন করলে বাজারের যানজট অনেকাংশে নিরসন সম্ভব হবে। রুস্তম হাটের অধিকাংশ দোকানপাট ব্যক্তি মালিকানাধীন। তাই রুস্তম হাটের সড়ক সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে না।
শাহ মোহছেন আউলিয়া ডাইভাশন সড়ক যা স্থানীয়ভাবে ‘মাঝরজাহাল রাস্তা’ বলে সমাধিক পরিচিত। অতি প্রাচীনকাল হতে এটি গ্রাম্য সড়ক হিসেবে স্থানীয় জনগণ দীর্ঘদিন ব্যাপী ব্যবহার করে আসছে। শাহ মোহছেন আউলিয়া মাজারের পশ্চিম পার্শ্বে ও শাহ মোহছেন আউলিয়া (রাঃ) ডিগ্রি কলেজের পশ্চিম দক্ষিণ পার্শ্বে এবং জয়নগর পাড়ার পশ্চিম পাশ দিয়ে শাহ মোহছেন আউলিয়া ডাইভারসন বা ‘মাঝরজাহাল রাস্তা’ সড়কের অবস্থান। এই ডাইভারসন সড়কের দক্ষিণ প্রান্ত বটতলী-কালিবাড়ি তথা শাহ মোহছেন আউলিয়া সড়কে তালুকদার কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন স্থানে, উত্তর প্রান্ত শাহ্ মোহছেন আউলিয়া কলেজ সড়কে মিলিত হয়েছে। একদম সরল রেখার মতো সোজা এ সড়কটি সম্পূর্ণ কাঁচা। আয়তনে দৈর্ঘ্যে ৩/৪ কিলোমিটার ও প্রস্তে ১২ থেকে ১৫ ফুট চওড়া হবে। এ সামান্য সড়কটি পাকাকরণ করে দু সড়কের সাথে মিলিয়ে দিতে পারলে বটতলী একটি যানজট মুক্ত হতে পারবে। অত্র সড়কের দুই পার্শ্বে রয়েছে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য আর সবুজের সমারোহ। যা পর্যটকদের ভীষণ ভাবে আকর্ষিত করবে। এমনিতে এ সড়ক নির্জন ও লোকজনের যাতায়ত কম বিধায় অপরাধীদের লোকদের অবাধ বিচরণ বেশী।

অত্র কাঁচা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বটতলী স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়ত করে। এ সড়ক চালু হলে অপরাধীদের বিচরণ হৃাস পাবে। এই ডাইভাশন সড়কটি পাকা হলে রুস্তম হাটের অভ্যন্তরের সড়ক ব্যবহার না করে এ ডাইভারশন সড়ক দিয়ে শাহ মোহছেন আউলিয়া (রাঃ) দরবার শরীফের অগণিত ভক্ত ও দক্ষিণাঞ্চলের লোকজন অতি সহজে বিভিন্ন স্থানে যাতায়ত করতে পারবে। তা ব্যতীত বটতলীর দক্ষিণাংশের মানুষ এবং চাঁপাতলী, জুঁইদন্ডি, সরেঙ্গা, রায়পুর, গহিরা, বারশত, গুন্দ্বীপ, বোয়ালিয়া এলাকার লোকজন এ সড়কের মাধ্যমে খুবই উপকৃত হবে এবং দুরত্ব কমে গিয়ে সময়েরও সাশ্রয় হবে। যার প্রেক্ষিতে রুস্তম হাটের উপর বিদ্যমান চাপ বহুলাংশে হ্রৃাস পাবে। এলাকাবাসীর দুর্দশা লাঘব হবে, মানুষ দুর্দশা থেকে পরিত্রান চায়। শাহ মোহছেন আউলিয়া ডাইভাশন সড়ক এতদাঞ্চলের জনসাধারণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উক্ত সড়ক পাকা করে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা একান্ত আবশ্যক। অত্র সড়ক পাকা করলে এতদাঞ্চলের দুঃখ লাঘব হবে। প্রস্তাবিত সড়ক পাকাকরণ করতে মনে হয় সরকারের অধিক পরিমাণের অর্থের প্রয়োজন হবে না। স্বল্প অর্থে এ সড়ক পাকাকরণ করা সম্ভব। সরকারের আরো অধিক সুবিধা এ সড়ককে বা পার্শ্বে কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নাই, যার কারণে সরকারের কোন ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না, বা ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে না।

অত্র এলাকা আলোকিত হবে, উন্নয়নের চাকা সচল হবে। অত্র সড়ক দ্রূত পাকা করে যান চলাচলের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা এখন এতদাঞ্চলের জনসাধারণের প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে। এ সড়কের উন্নয়ন হলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে, অনুন্নত এলাকা উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হবে। তাছাড়া রায়পুর, গহিরা, সরেঙ্গা, জুঁইদন্ডী সহ নদী ভাঙ্গন এলাকা হতে অধিকাংশ লোক শাহ মোহছেন আউলিয়া জামে মসজিদের পশ্চিমে তথা শাহ মোহছেন আউলিয়া সড়কে জমি ক্রয় করে বসতগৃহ স্থাপন করছে।
দেশ উন্নয়নের প্রধান সোপান হলো উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিশ্ব সন্মুখ পানে এগিয়ে চললেও আমরা অনেক পশ্চাতে পড়ে আছি। চট্টগ্রাম শহরের অতি নিকটবর্তী আনোয়ারা উপজেলা হলেও আমরা যেন শহর থেকে অনেক দুরে অবস্থান করছি। সব কিছুতে অত্র উপজেলা পশ্চাদপদ,অনগ্রসর ও অবহেলিত। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, রাউজান, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, পটিয়া বোয়ালখালী আনোয়ারা উপজেলা হতে দুরে অবস্থান হলেও উন্নয়নের দিকে উক্ত উপজেলা গুলো অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধশালী। ভবিষ্যতের এ আনোয়ারা উপজেলা উন্নত ও সমৃদ্ধশালী মডেল উপজেলা হিসাবে গড়ে উঠবে জনগনের এমনটাই প্রত্যাশা।
ইতিপূর্বে সরকার আনোয়ারাকে শিল্পাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছে। অত্রাঞ্চলে কেইপিজেড সহ অনেক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, যা ইতিমধ্যে এলাকার মানুষ সুফল ভোগ করছে। ইতিমধ্যে বটতলী সহ বিস্তার্ণ ভূমিতে চায়না ইপিজেড করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গহিরা বার আউলিয়াতে শিপ ইয়ার্ড নির্মাণ করার কাজ প্রস্তুুতি চলছে। তাছাড়া আনোয়ারা দিয়ে বহুদিনের আকাঙ্খিত স্বপ্নের ট্যানেল নির্মিত হচ্ছে। তাই রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
শাহ মোহছেন আউলিয়া ডাইভাশন সড়ক পাকাকরন দ্রুত বাস্তবায়নে আনোয়ারার উন্নয়নের কান্ডারী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদশে সরকারের মাননীয় ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ এম,পি এর সদয় দৃষ্টি আর্কষণ ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
লেখকঃ-সভাপতি, বটতলী শাহ্ মোহছেন আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ ও কলামিষ্ট।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.