সিটিনিউজবিডি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ও বরণ্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন বলেছেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাস বিকৃতির মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে বিপথগামী করা হয়েছিল। আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধকালীন জিয়াউর রহমান মন প্রাণ থেকে মুকিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। যারা জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে নতুন প্রজন্ম এবং জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা পাঠ করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এম এ হান্নান। এই সত্যটিকে ঢেকে দেওয়ার জন্য ইতিহাসের বিকৃতি যারা ঘটিয়েছেন তাদেরকে ইতিহাসের আস্থাকুুঁড়ে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে নগরীর নজরুল স্কোয়ার ডিসি হিল প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধু বইমেলা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ গরিব দেশ নয়। শেখ হাসিনার রূপকল্প ২১ ও ৪১ ধারণা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এই শুভ বার্তার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বইমেলা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব ৪র্থ বর্ষে পদার্পণে সকলের সহযোগে পরিপূণ হোক। মুখ্য আলোচকের ভাষণে পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব কবি আসাদ মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পৃথিবীর ইতিহাসে সেরা মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে আমি মনে করি। কারণ বাঙালিরা শুধু নিজের দেশকে রক্ষার জন্য স্বাধীনতা ও স্বাধীকারের জন্য বুকের রক্ত ঢেলে সাগর রচনা করে এক মহাসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিজয় এনেছিল। আমাদের সেই সংগ্রামের মহানায়ক হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ হৃৎপিন্ড।
আজ বাঙালি জাতি সেই হৃৎপিন্ড নিয়ে বেঁচে আছে। দুঃখের বিষয় এখনো স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি আমাদের এই হৃৎপিন্ডকে ক্ষত-বিক্ষত করার নানান ষড়যন্ত্র করে আসছে। মা-মাটি-মানুষ এই সত্যর আলোকে বাংলাদেশের মানুষকে জেগে উঠতে হবে। আমাদের বিজয় গাঁথা শুধু ১৬ ডিসেম্বর নয়। সবসময় নবীন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে আমাদের শিশুদের মনে মুক্তিযুদ্ধকে। এমনভাবে গেঁথে দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে তারা কোন অপশক্তির কবলে না পড়ে।
বঙ্গবন্ধু বইমেলা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব উদযাপন পরিষদের মহাসচিব প্রাবন্ধিক ও লেখক শেখ মুজিব আহমদের সভাপতিত্বে ও প্রধান সমন্বয়কারী সংংস্কৃতিকর্মী খোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম মন্টু, চবি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন, লেখক ও প্রকাশক জামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী বিজয় কুমার চৌধুরী কিষাণ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক চৌধুরী শহীদ কাদের, প্রকৌশলী সুদীপ বসাক প্রমুখ।
সভার শুরুতে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন কুসুম ললিতাকলা একাডেমী, বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশন করেন বেতার ও টেলিভিশন নব প্রজন্মের শিল্পীবৃন্দ। আলোচনা সভা শেষে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নিত্যম একাডেমী। একক সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশন করেন বেতার, টেলিভিশন ও নব প্রজন্মের শিল্পীবৃন্দ।
আগামীকাল ১৮ ডিসেম্বর বিজয়মঞ্চে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি কমরেড শাহ আলম, আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা: এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, ড. মাহমুদ হাসান। আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকার জন্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানিয়েছেন মেলা পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী সংস্কৃতিকর্মী খোরশেদ আলম।