চন্দনাইশ শুক্লাম্বর দীঘির মেলায় পূর্ণার্থীদের ঢল

0

নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দনাইশ : চন্দনাইশ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বরমা বাইনজুরী গ্রামে হিন্দু স¤প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী শুক্লাম্বর দীঘির মেলা শনিবার ১৪ জানুয়ারি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পূর্ণার্থীদের ঢল নামে এ মেলায়। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নদীয়া থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য আসা শুক্লাম্বর ভট্টাচার্যের ধর্মীয় দেশনা স্থানে প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে শুক্লাম্বর ভট্টাচার্যের নামে এ মেলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রয়াত নিত্যানন্দ বৈলয়। পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা দীঘির পাড়ে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় পার্শ্ববতী ভারত, ভুটান, নেপাল সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন মানত নিয়ে এ পীঠ মন্দিরে আসে।

স্থানীয়ভাবে আরো জানা যায়, শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য এ দীঘির পাড়ে বসে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। দীর্ঘদিন ধ্যানে মগ্নে থাকার পর প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে তিনি ইহজগত ত্যাগ করলে তাকে এ দীঘির পাড়ে দাহ করা হয়। তার দাহস্থানে একটি বটবৃক্ষ বিশাল জায়গা জুড়ে স্মৃতি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। পূজারীরা এ বটবৃক্ষের ডালে সুঁতা বাঁধে, কবুতর ছেড়ে দেয়। মন্দিরের জন্য মানত করা শত শত ছাগল বলী দেয় এবং বিভিন্ন পূজনীয় দান মন্দিরে উৎসর্গ করে। এ মেলাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামকে প্রধান করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেলা পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়।

চন্দনাইশের শুক্লাম্বর দীঘির মেলায় পূর্ণার্থীদের ঢল
শুক্লাম্বর দীঘিতে পূর্ণার্থীদের ঢল

সারা বছর প্রতিদিন বিভিন্ন মানত নিয়ে পূণ্যের লক্ষ্যে দীঘিতে দুধ, ছাগল, কবুতর, ফল-ফলাদি উৎসর্গ করে থাকেন। তাদের মতে দীঘির পানিতে উৎসর্গকৃত দুধ পানির সঙ্গে না মিশে তলদেশে চলে যায়। এ রকম নানা উপাথ্যান আছে দীঘিকে ঘিরে। তাদের বিশ্বাস এখানে দুধ, ছাগল, কবুতর এমনকি সোনার অলংকার উৎসর্গ করলে মনের সব বাসনা পূর্ণ হবে। আর তাই সারা বাংলাদেশের হাজার হাজার হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের নানা মনের বাসনা পূরণের লক্ষ্যে মানুষগুলো একই মোহনায় মিলিত হয় শুক্লাম্বর দীঘিতে পৌষ সংক্রান্তির এ মিলন মেলায়।

এখানে দিনব্যাপী চলে পূজা-উৎসব। সে সাথে প্রত্যেকে স্ব-স্ব ধ্যানে-জ্ঞানে মগ্ন থাকে পূজা অর্চনায়। পূর্ণার্থীদের ভিড়ে এ দিন উৎসবমূখর থাকে দীঘির চারিপাশ। মেলায় আসা পূণার্থীদের পুরুষ-মহিলা এক সাথে দীঘির চারিপাশে প্রায় ১০টি ঘাটে স্নান সাড়ার দৃশ্য লক্ষ্যনীয়। সে সাথে বটবৃক্ষে শত শত কবুতর অবস্থান করে, যা সবার নজর কাড়ে। একইভাবে পূণার্থীদের দানের পাহাড় পড়ে যায় এ পীঠমন্দিরে। যা ব্যবহার করে মন্দিরের পরিচালনা পরিষদ মন্দির সংস্কার ও নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়।

মেলায় মহেশখালীর আরতী রানী দে (৯৫) বলেছেন, দীর্ঘদিনের মানত পূরণ করতে তিনি দীঘিতে এসেছেন এবং মানত করা দান তিনি পীঠমন্দিরে উৎসর্গ করেছেন। রাঙ্গুনিয়া থেকে আসা শ্যামল মিত্র (৭৫) বলেছেন, প্রতি বছর আসতে না পারলে প্রায় সময় আসা হয় এ মেলায়। প্রতি বছর দীঘিতে দুধ, কুবতর সহ বিভিন্ন মানত দিয়ে থাকেন। মেলা চলাকালীন পুলিশ ৩ মহিলা পকেটমারকে আটক করে। আটককৃতরা হলো কুমিল্লার জুনু মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার (২০), দুলাল মিয়ার স্ত্রী রশিদা খানম (৩৫), উজ্জ্বলের স্ত্রী নিলুফা (২২) কে আটক করে। তাদের কাছ থেকে পকেটমারের কিছু টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে পুলিশ।

এ মেলাকে ঘিরে চন্দনাইশের বরমা গ্রামের প্রতিটি হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারে মেহমানদের উপস্থিতি সরগরম হয়ে উঠে। বরমা এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রস্তুতি নেয় কয়েক সপ্তাহ পূর্ব থেকে। সব মিলিয়ে শুক্লাম্বর দীঘির মেলাকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ পরিলক্ষিত হয় এ এলাকায়। মেলা চলাকালীন চন্দনাইশ থানার ২০ জনের অধিক একটি পুলিশ দল, স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা পরিষদ সার্বক্ষণিক অবস্থান করেছিল।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.