মনীষীদের সাধনার কথার সুরে সুরে মাইজভাণ্ডারী ঐশী প্রেমগীত

0

লায়ন অধ্যক্ষ ডা. বরুণ কুমার আচার্য বলাই- 

সাধকদের সাধনার কথায় সুরে সুরে ভক্তরা বলেছেন:
“বিচ্ছেদের অনলে সদা অঙ্গ জ্বলে
বিনয় করি গো প্রিয়া আয় আয়রে।
তাপের তাপিনী হইয়ে বৈরাগিনী
বিলাপী কুহুরী প্রিয়া আয় আয়রে।
কামের কামিনী হইয়ে বৈরাগীনি, ত্যাগিলাম পুষ্পের খাট।
তুই বন্ধু বিহনে হৃদেরি আসনে বসাব কাহারে প্রিয় আয় আয় রে।
দাস হাদী বলে প্রেমেতে মজিলে, নাহি গো মুক্তির আশ।
যাবৎ জীবন করহ জপন, প্রেমের জপনা প্রিয়া আয় আয়রে।”
গাউসুল আজম হযরত শাহসুফী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) আল মাইজভাণ্ডারীর বার্ষিক ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয় বাংলা সনের ১০ই মাঘ। ঐদিন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার শরীফ লক্ষ লক্ষ জনগণের উপস্থিতিতে এক জনসমুদ্র পরিণত হয়। ধর্ম বর্ণ কোন ভেদাভেদ নেই। ত্বরিকত-ই মাইজভাণ্ডারীর শানের পতাকা তলে সমবেত এক প্রার্থনা। মানবতার জয়গানে মানুষের কল্যাণ ও শান্তি। প্রেমময় ইবাদত বন্দিগীর মধ্যে দিয়ে স্রষ্টাকে খুঁজে পেতে এ মিলন মেলা। নিজেকে স্রষ্টারপতি সমার্পণ করতে দলে দলে যোগদান। এক অপূর্ব সুন্দর্য্যরে সমাহার। দিবসে হযরত গাউসুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) মাইজভাণ্ডারীর মহান আদর্শকে জাগিয়ে তোলার মানসে মাইজভাণ্ডার পবিত্র দরবার শরীফে সমবেত ভক্ত ও জায়েরীন এক কন্ঠে ধ্বনি তোলে “মারহাবা এয়া, মারহাবা এয়া, মারহাবা, গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী মারহাবা”। ১১১তম পবিত্র ওরশ মোবারকে গাউসুল আজম হযরত শাহসুফী মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) আল মাইজভাণ্ডারীর প্রতি আমি অধম এর বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সমর্পণ ও মহাল অলিকে প্রজন্মের সম্মুখে তুলে ধরার মানসে আজকের এই প্রবন্ধের মাধ্যমে মনীষীদের সাধনার কথার সুরে সুরে মাইজভাণ্ডারী প্রেমময় ঐশী প্রেমগীতের মাধ্যমে ভক্তদের কাছে দরবারের সারসংক্ষেপ ইতিহাস তুলে ধরছি।
সাধক পণ্ডিতরা পবিত্র ভাণ্ডার শরীফকে নিয়ে মরমী গানে লিখেছেন:
“দেখে যারে মাইজভাণ্ডারে হইতেছে নুরের খেলা
নুুরী মাওলা বসাইল প্রেমের মেলা।
আল্লাহু আল্লাহু রবে নানান বাদ্য শোনা যায়
গাউছুল আজম শব্দ শুনে আশেকগণে হুঁশ হারায়
জিকিরেতে আকাশ বাতাস করে আল্লাহু আল্লাহ।”
***
“ভাণ্ডারীর মহিমা অপার ভাণ্ডারীর মহিমা অপার
দোজাহানের মালিক বাবা মাওলা মাইজভাণ্ডার
প্রেম শিক্ষা দিতে এলে, গাওচুল আজম নাম ধরিলে,
শেষ জামানায় উদয় হল প্রেমের অবতার।
সর্ববাঞ্ছা পূর্ণ করে, দৃষ্টিমাত্র বুঝতে পারে,
রূহানীতে কার্য্য সারে মহিমা বাবার
তার ভাবেতে বেখোদ হলে, তার ভাবেতে প্রাণ সঁপিলে
আওলিয়ার দপ্তরে নাম উঠিবে তাহার।
বিবেক বলে হাসি হাসি রমেশ কেন তুই রইলি বসি
চলনা একবার দেখে আসি আওলিয়ার দরবার।”
প্রাচীন চট্টগ্রাম নগরীর ইতিহাস ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি শহর। ভারতীয় উপমহাদেশ সহ পৃথিবীর ইতিহাসে এই চট্টগ্রামকে মর্যাদার সহিত দেখা হয়। বলা হয় বার আউলিয়ার চট্টগ্রাম। অন্যদিকে স্বাধীনতার ইতিহাসে জাগরণী ভূমিকার জন্য বলা হয় বিপ্লবী চট্টগ্রাম। পবিত্র মাইজভাণ্ডারীর দর্শন ও ঐতিহ্যময় ঐশী প্রেমের মরমী সাধনার সাধকদের চোখে ভাণ্ডারীদের চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম শহর থেকে উত্তরে ২৪ কি.মি. দূরত্বে মাইজভাণ্ডার শরীফের অবস্থান। ফটিকছড়ি থানাধীন ঈছাপুর পরগনার অন্তর্গত এককালের অজপাড়া গাঁ মুসলিম সৈন্য বাহিনীর খাদ্য রসদপত্রের ভাণ্ডার থেকে মাইজভাণ্ডার নাম ধারণ করে এখন বেলায়তের ঐশ্বর্য ভাণ্ডার। বিশ্ব আধ্যাত্ম পরিমণ্ডলের কেন্দ্রভূমি মাইজভাণ্ডার শরিফ গাউছুল আজমের পদস্পর্শে আল্লাহ্ তা’লার অনন্ত রহমতের অফুরান প্রস্রবণ। বায়তুল মোকাদ্দস, মক্কা মুর্কারমা, মদিনা মুনাওয়ারা, বাগদাদ, আজমির শরীফ প্রভৃতি পবিত্র নগরী পৃথক পৃথক ফজিলতে রব্বানির মহিমায় উজ্জ্বল। কালের পরিক্রমায় গাউছুল আজমের রওজা মোবারক ধন্য মাইজভাণ্ডার শরীফ আধ্যাত্ম বলয়ে ঐশী মহিমায় দেদীপ্যমান।
হজরত রছুল করিম (দ.) এর পবিত্র বংশধর গৌড় নগরের বিচারপতি হজরত শাহ্সূফী সৈয়দ হামিদ উদ্দিন গৌড়ী (র.) (১৫৫০-১৬৪৮) ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ঐশী নির্দেশে চট্টগ্রামে এসে পটিয়ায় বসতিস্থাপন পূর্বক আল্লাহ্, রছুলের (দ.) মহিমা মহাত্ম্য প্রচার করেন। তাঁর অধঃস্তন পুরুষ দরবেশ হজরত শাহ্সূফী সৈয়দ মতিউল্লাহ (র.) মাইজভাণ্ডারে আবাস গড়েন। ইবাদত বন্দেগি ধর্মসংস্থাপনে আল্লাহর কৃপাধন্য সৈয়দ মতিউল্লাহ (র.)’র তিন সন্তান। জ্যেষ্ঠ সন্তান প্রতিশ্র“ত গাউছুল আজম হজরত শাহ্সূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.), দ্বিতীয় পুত্র হজরত শাহ্সূফী সৈয়দ আবদুল হামিদ (র.), তৃতীয় পুত্র হজরত শাহসূফী সৈয়দ আবদুল করিম (র.)। হজরত শাহ্ সূফী সৈয়দ আবদুল করিম (র.) এর ঔরশষূত্রে মাইজভাণ্ডার শরিফে তসরিফ আনেন পাপীতাপীর কান্ডারী দয়াল বাবাভাণ্ডারি হজরত শাহ্সূফী মওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান (ক.) (১৮৬৫-১৯৩৭)। হজরত শাহ্সূফী সৈয়দ আবদুল হামিদ (র.)’র দ্বিতীয় সন্তান কুতুবুল ইরশাদ হজরত মওলানা সৈয়দ আমিনুল হক ওয়াছেল (ক.) (?-১৯০৬) ছিলেন গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারির বাণী কালামের ব্যাখ্যাদাতা। খোদায়ী রহস্যপূর্ণ মুবারক কালাম সমূহের তাৎপর্য অনুধাবনপূর্বক জনসমক্ষে প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ দায়ভার তিনি গ্রহণ করেছেন। খাদেমুল ফোকরা হজরত শাহ্সূফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারি (ক.) (১৮৯৩-১৯৮২) গাউছুল আজমের পৌত্র। তিনি মাইজভাণ্ডারি তরিকার মুখপাত্র ছিলেন। তাঁর সময়কালে মাইজভাণ্ডার শীরফের মহাত্ম্য মহিমা নিয়মতান্ত্রিক ব্যাকরণে বিকশিত হয়। এই মহান দরবেশের পবিত্র সন্তান গাউছুল আ’লামিন শাহানশাহ হজরত সৈয়দেনা জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারি (ক.) (১৯২৮-১৯৮৮) ছিলেন আধ্যাত্ম ঐশ্বর্যের ধারক। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল আল্লাহ তা’লার কুদরতের প্রকাশ।
গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী মাওলানা শাহসুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) কেবলা কাবা জন্মের পর পরই ধর্মীয় রীতিতে পবিত্র শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা হতে কোরআন, হাদিস, তফসির, ফেকাহ সহ বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ শিক্ষা ও ডিগ্রী গ্রহন শেষে ১২৬৯ হিজরী সনে তিনি বর্তমান বাংলাদেশে যশোহরে বিচার বিভাগে কাজীর পদে নিয়োজিত হন। পরবর্তী বছরে স্বেচ্ছায় কাজীর পদ থেকে পদত্যাগ করে কলিকাতার বিক্ষ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুন্সী বু’আলী ও আলীয়া মাদ্রাসায় প্রধান মোদারেস হিসাবে শিক্ষকতার পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। এই সময়ে পীরানে পীর দস্তগীর মাহবুবে সোবহানী গাউসুলআজম মহিউদ্দিন শেখ সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী (ক.)-এর বংশধর ও খলিফা সৈয়দ আবু শাহামা মোহাম্মদ সালেহ আল-কাদেরী লাহোরী (ক.)-এর দস্তে বায়াত গ্রহণ পূর্বক অধ্যাত্ম সাধনায় নিয়োজিত হন এবং পীরের নির্দেশে হযরত আবু শাহামা (ক.)-এর অগ্রজ চিরকুমার শাহসূফী সৈয়দ দেলওয়ার আলী পাকবাজÑ মোজাহেরে মদনী- এর সোহবতে কুতবিয়তের ফয়জ হাসিল করেন। পাঁচ বছর পীরের সান্নিধ্যে থেকে ১২৭৫ হিজরী সনে স্বগ্রাম মাইজভাণ্ডারে ফিরে এসে পবিত্র আস্তানা স্থাপন করেন। অর্জিত বেলায়তী ক্ষমতার অনন্য দীপ্তি তখন বিকশিত হতে থাকে এবং তরঙ্গের অভিঘাতের মত স্পর্শ করে যেতে থাকে মানুষের হৃদয়কে। সেই অভিঘাতের পৌনপৌনিকতায় গড়ে উঠেছে আজকের পরিচয়ে ‘মাইজভাণ্ডার শরীফ’। সেই পবিত্র মাইজভাণ্ডার শরীফকে নিয়ে সাধক, ফকির ও খলিফাগণ লিখেছেন তাঁদের প্রেমগীত। যা মানুষের মুখে মুখে। স্রষ্টার ইবাদত ও সৃষ্টির কল্যাণে মানবতার কথা ঐ গীতে উঠে এসেছে বারবার। মরমী সেই গীতকে মাইজভাণ্ডারী ভক্তরা কালাম বলে। সেই পবিত্র কালামের সুরের মূর্ছনায় তাঁরা স্রষ্টার ইবাদতে মগ্ন হন। ১০ মাঘ সেই পবিত্র দিনে লক্ষ লক্ষ ভক্ত মুরিদ আশেকান পবিত্র মানসে মিলিত হয় মাইজভাণ্ডারে। মরমী গীত:
“আহ রে মন-ধন (আমার) লুটিয়ে নিল মনমোহিনী।
কুঞ্জবনে পুস্প কানে নাচিল কামিনী।
আঁখিতে কাজল পরা, গলায় মুক্তার ছড়া।
মধুর হেসে নয়ন ঠারে মন হরিল রূপসিনী।
মুখ হেরি পূর্ণশশী উড়ে গেল মন উদাসী।
গায়ে শাড়ি বানারসী আঁচল হেলায় চাঁদ বদনী।
কোমরেতে স্বর্ণ শিকল দেখি হাদী হয় ব্যাকুল।
পায়েতে শেমপুরের বোল্ নাচে-ঝুন-ঝুন ঝুন খঞ্জনী।”
***
“চলরে মন ত্বরাই যাই, বিলম্বের আর সময় নাই,
গাওচুল আজম মাইজভাণ্ডারী স্কুল খুলেছে।
আবাল বৃদ্ধ নরনারী, করে সবে হুরাহুরি,
নাম করে রেজিস্ট্রারী ভত্তি হতেছে।”
***
“নিদানের বন্ধু আমার গাওচুল আজম মাজইভাণ্ডারী,
গাওচুল আজম মাইজভাণ্ডারী গাওচুল আজম মাইজভাণ্ডারী
তুমি হর্তা, তুমি কর্তা, তুমি পাতকী ত্রাতা,
তুমি আমার মুক্তিদাতা ওরে দয়াল মাইজভাণ্ডারী
শয়নে স্বপনে আমি, সদা ভাবি তুমি তুমি
যা কর তা কর তুমি, থাক্ব নূরী কদম ধরি।
অন্ধকারে মায়ার কোলে, আমায় দিওনা ফেলে,
আমি তোমার অবোধ ছেলে, ত্বরায়ে লও ত্বরা করি।
থাক তুমি পর্দ্দার আরে, ফিরাও মোরে দ্বারে দ্বারে
এরূপ করে রমেশেরে কাঁদাবে কি জন্ম ভরি।”
***
“আমার গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী আয়নার কারিগর
আয়না বানাইয়া দেয় মোর কলবের ভিতর।
আমার বাবা আল হাসানী, তার কাছে মারফতের খনি
কলব হইয়া যায় নুরানী করিলে নজর।”
***
“আমার বন্ধুর বাঁকা নয়নে
কি মোহিনী আছে সাই গো কে জানে।
আমার মনপ্রাণ হরিয়া নিল গো
(হায়রে) না জানি কোন কারণে।”
***
“ধুমধুমি করতাল শব্দ, পাতালে বাসুকী স্তব্ধ।
স্বর্গে যত অল্পরা গাউসুল আজম জপে তারা।
বেলা সারিন্দা বাজে, মৃদঙ্গ মন্দিরা সাজে।
হারমোনি সেতারের তানে আশেকী হয় মাতোয়ারা।”
***
“দমে দমে জপরে মন লা ইলাহা এল্লাল্লা
ঘটে ঘটে আছে জারি লা ইলাহা এল্লাল্লা।
মঞ্জেলে মঞ্জেলে মন গাউছ ধনের সিংহাসন
হাদীরে তলকিন করে লা ইলাহা এল্লাল্লা।”
***
“আশি শরাবি চলেছি পন্থে
সরে দাঁড়াওরে যত সুফীগণ
লাগিবে গন্ধ হইবে মন্দ
মলিন হবে তোমার ছুফীতন।
আমি চলেছি শরাব খানা
যারি নেশাতে জগৎ দিওয়ানা
রুমি গিলানি মঈনে চিশতী
জোনায়েদ শিবলী হইল মগন।”
***
“ইস্কুল খুইলাছে মওলা, ইস্কুল খুইলাছে, হে হে
গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী ইস্কুল খুইলাছে।
সেই ইস্কুলের এমনি ধারা মায়না পড়ায় তারা। হেই
ওরে সিনায় সিনায় লেখাপড়া রে
ওরে সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতেছে
গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী ইস্কুল খুইলাছে।
সেই ইস্কুলের এমনি ধারা কেইকো বিচার জোয়ান বুড়া। হেই
ওরে খাতা কলম ছাড়াই তারা রে
ওরে খাতা কলম ছাড়াই তারা শিক্ষা দিতেছে
গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী ইস্কুল খুইলাছে।।”
***
“দেখে যারে মাইজভাণ্ডারে হইতাছে নুরের খেলা,
নুরী মওলা বসাইল প্রেমের মেলা।
আল্লাহু আল্লাহু রবে নানান বাদ্য শুনা যায়,
গাউছুল আজম নাম শুনিলে আশেকগণে হুশ হারায়।
জিকিরেতে আকাশ বাতাস করে আল্লাহু আল্লাহ।
খাঁটি মনে নুরী মওলার যে করেছে জিয়ারত,
দিলের পর্দ্দা খুলি যাবে সেই হবে তার এবাদত।
অন্ধকারে ডাকবি কারে, না হইলে তোর দিল খোলা।
দিন থাকিতে গফুর পাগলা গেলিনা তুই মাইজভাণ্ডার,
মনের আশা মিটিল না, পাইলিনা মওলার দিদার।
যাইতি যদি মুরাকাবায়, দেখতি রে নুরী মওলা।”
মাইজভাণ্ডার শরীফ জগৎবাসীর জন্য সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতায়, সংসার জীবনে ঝামেলা মুক্ত ও স্রষ্টার নৈকট সাধনায় ‘উসুলে সাবআ’ বা সপ্ত পদ্ধতির অনুশীলন প্রক্রিয়ার সহযোগে বাংলার মাটিতে প্রবর্তিত একমাত্র তরিকা হিসাবে তিনি মাইজভাণ্ডারী তরিকার সূচনা করেন। অধ্যাত্ম ক্ষেত্রে অনাবিল করুনাবারী বর্ষণের পর ৭৯ বৎসর বয়সে ইংরেজী ১৯০৬ সনে ২৩ জানুয়ারী ২৭ জ্বিলক্বদ্ব ১০ মাঘ ভক্ত অনুরক্তদের জন্য উসুলে সাবআ বা সপ্ত পদ্ধতিতে মুক্তির দিগনির্দেশনা প্রদান করে ধরাধাম ত্যাগ করেন। তাঁর ধরাধাম ত্যাগের ঐদিনকে মাইজভাণ্ডারী ত্বরিকার লোকদের কাছে যেমনি শোকাহত, তেমনি শত বছর পরও ইবাদত ময় দিনও বটে। ১০ মাঘ বার্ষিক ওরশ দিবস উপলক্ষে ১৯২৮ সালে চট্টল কৃতিপুরুষ প্রখ্যাত মোফাচ্ছেরে কোরআন, ভুতপূর্ব সাব রেজিষ্টার, সু-সাহিত্যিক কবি আয়ূব আলী (রহঃ) লিখেছেন “ হজ্বব্রত নিরাপদ নগরে যেমন, মাঘদশে তবদ্বারে মহাসম্মিলন”। ২০১৭ সালের গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী (ক.) ১১১ তম বার্ষিক ওরশ মোবারক। মোবারকময় এদিনে জ্ঞান ভাণ্ডারের পূর্ণময় মহামনিষী, মাইজভাণ্ডারী প্রেমময় খোদা প্রাপ্তির এ মহা ত্বরিকার আর্দশের মূর্ত প্রতীক গাউসুল আজম মাওলানা শাহসুফী হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ (ক.) এর প্রতি শত কোটি সালাম ও শ্রদ্ধা নিবেদন। একই সাথে বিনম্র চিত্তে এই প্রবন্ধের সংগীত সমূহের রচয়িতা ও মাইজভাণ্ডারী আশেকিন পণ্ডিত আসকর আলী, আবদুল লতিফ চন্দনাইশ, সৈয়দ আমিরুজ্জামান শাহ, পণ্ডিত মনমোহন সাধু, বজলুল করিম মন্দাকিনি, পণ্ডিত কবিয়াল রমেশ শীল, ফকির গুরুদাস, আবদুল গণি কাঞ্চনপুরী, আবদুল হাদি কাঞ্চনপুরী, আবদুস সালাম ভূজপুরী, রিজুয়ানুল হক শাহনগরী, ভজেন্দ্র সাধু, কালাবাবা, পণ্ডিত নিরোদ বরণ আচার্য, সৈয়দ আকবর শাহ, অলি উল্লাহ রাজাপুরী, সৈয়দ আবু ইউসুফ টুনু কাওয়াল, সৈয়দ আবু কাওয়াল, সৈয়দ নাসির উদ্দিন, সৈয়দ মুলকেতুর রহমান, সৈয়দ বেলায়েত আলী শাহ, কালাচান ঠাকুর, আবুল মালেক শাহ, সদ্যপ্রয়াত সুর ও সংগীত সাধক আবদুল গফুর হালির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় উৎসর্গ করছি। মুনিব যেন তাঁদের আত্মার শান্তি, মাগফেরাত, সদগতি ও নাজাতের উছিলা হয়।

লেখক-
মরমী গবেষক, মরমী গানের সংগ্রাহক ও প্রাবন্ধিক
সভাপতি, মাইজভাণ্ডারী গাউছিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ, সূর্যগিরি আশ্রম শাখা, ফটিকছড়ি।
ই-মেইল: bkcharjee1@gmail.com

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.