অযত্ন-অবহেলায় রাঙামাটি শিশু পার্ক

মো: সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি::প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি রূপের রানী খ্যাত রাঙামাটিতে পাহাড়, ঝরনা ও এশিয়াখ্যাত কাপ্তাই লেক সহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান থাকলেও শিশুদের নির্মল বিনোদনের জন্য নেই কোনো শিশু পার্ক। জেলা শহরের একমাত্র শিশু পার্কটিতে ২০০৫ সালে তৎকালিন পৌর চেয়ারম্যান একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মানের উদ্যোগ নিলেও স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়। পরবর্তীতে আদালত এটির মালিকানা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে এটিকে পূর্ণাঙ্গ পার্ক হিসেবে গড়ে তোলে এটিকে শিশুদের বিনোদনের উপযোগি হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ প্রদান করে।

শহরের একমাত্র শিশু পার্কটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় একদিকে যেমন শহরের শিশু-কিশোরদের মেধা ও মননের বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি এই পার্কের ভিতরেই প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অপরাধ কর্মকান্ড। দিনের বেলায় মাদকসেবিদের নিরাপদ আড্ডাস্থল আর রাতের আধারে চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ।
এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পার্কটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় দিনদিন এটি অপরাধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হচ্ছে। তারা জানায়, দিনের বেলায় মাদকসেবিরা এখানে আড্ডা দেয়। এছাড়াও পার্কের পাশ দিয়েই যেতে হয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। স্কুল কলেজগামী ছাত্রীদের নানাভাবে টিজ করে বখাটেরা। আর সন্ধ্যার পর পর্যটকদেরও নানাভাবে এখান থেকে হয়রানি করা হয়। রাতের বেলায় চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। দ্রুত পার্কটির সংস্কারের দাবি জানান তারা। ইতোমধ্যে পার্কটি দ্রুত চালু করার জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের পক্ষ থেকেও মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
পার্কটির অভ্যন্তরে ২০০৫সালে কমিউনিটি সেন্টার নির্মান বন্ধ করার দাবিতে হাইকোর্টে রিটকারী পরিবেশবাদি সংগঠন গ্লোবালের ভিলেজের নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী জানান, কমিউনিটি সেন্টার করার বরাদ্দ ছিল শিশু পার্কের নিচের অংশ থেকে। অর্থাৎ মূল পার্কটিকে ঠিক রেখেই এর পরিকল্পনা আর অর্থায়ন হয়েছিল। কিন্তু পৌর চেয়ারম্যানের এক নিকটাত্মীয় কাজটির ঠিকাদার হওয়ায় পার্কটির মূল জায়গার উপরেই কমিউনিটি সেন্টার নির্মানের কাজ শুরু করে। আমরা এর প্রতিবাদ করি। কিন্তু চেয়ারম্যান তাতে সাড়া না দিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমরা হাইকোর্টে রিট করি। লোকজন পার্কটিকে পৌর কর্তৃপক্ষের বলে জানত। কিন্তু রিট করার পর বিভিন্ন কাগজ-পত্র দেখে বুঝতে পারি আসলে পার্কটি পৌরসভার নয়। এটির প্রকৃত মালিক জেলা প্রশাসন। ফলে দীর্ঘদিন পর কোর্ট পার্কটির মালিকানা জেলা প্রশাসনের হাতে ন্যাস্ত করে এটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করে। পৌরসভা স্থাপনা উচ্ছেদ করে ঠিকই কিন্তু এরপর পার্কটিকে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। শীঘ্রই এর সংস্কার করে এটিকে শিশুদের উপযোগি করে গড়ে তোলার দাবিও জানান তিনি।

শহরের শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈয়বিয়া আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ মো আখতার হোসেন চৌধুরী জানান, শিশুদের বিনোদনের একমাত্র পার্কটি সংস্কারহীন পড়ে থাকায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রসস্থ হচ্ছে। এটিকে সংস্কার করে শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে তারা বিনোদনের সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে দীর্ঘদিন পর আশার বানী শুনালেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে শীঘ্রই এটির সংস্কার কাজ শুরু হবে। এটির সংস্কারের জন্য পূর্ববর্তী জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন উন্নয়ন বোর্ডের কাছে প্রায় দুই কোটি টাকার একটি প্রকল্পও জমা দেন। সেই প্রেক্ষিতে উন্নয়ন বোর্ড প্রাথমিক পর্যায়ে ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। আর এটি যেহেতু লেক তীরবর্তী সে হিসেবে এটি পর্যটকদের জন্য বিনোদনের অন্যতম স্থান হবে বলেও মনে করেন তিনি।