১৬ কি: মি: সড়কই পাল্টে দেবে বোয়ালখালীর চিত্র

0

ছাদেকুর রহমান সবুজ, বোয়ালখালী::চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের অপার সম্ভাবনা কৃষি ও পর্যটনের দুয়ার খুলে দিতে পারে বু-আলী কলন্দর শাহ(রা:) মাজার থেকে উদরবন্যা সড়ক। মাত্র ১৬ কিলোমিটার এ সড়ক নিমার্ণের মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি অঞ্চলের যাতায়াত হবে সহজ।

উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের বু-আলী কলন্দর শাহ(রা:) মাজার হতে বোয়ালখালী অংশের শেষ সীমান্ত উদরবন্যা পর্যন্ত মাত্র ১৬ কিলোমিটার সড়ক। এ সড়কের পাশে বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গার পাদদেশে বু-আলী কলন্দর শাহ (র.) মাজার, সন্ন্যাসী পাহাড় চূড়ায় মেধস আশ্রম ও বোধিদ্রুম এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলার নারায়ণ গিরি পাহাড়।

বু-আলী কলন্দর শাহ(রা:) মাজার হতে ভান্ডালজুড়ি খালের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার মাটির সড়ক রয়েছে। খালের উপর একটি সেতু নির্মাণসহ পূর্ব পাড়ে মাত্র ১০কিলোমিটার সংযোগ সড়ক হয়ে গেলেই পাল্টে দেবে বোয়ালখালী এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ তিন পার্বত্য জেলা চট্টগ্রাম নগরীর সাথে যাতায়াত হয়ে উঠবে সহজতর।

এ সড়ক হলেই উত্তর চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবনের পাহাড়ি অঞ্চল চলে আসবে চট্টগ্রাম নগর যাতায়াতের আওতায়। এছাড়া ভারতের মিজোরাম রাজ্য পর্যন্ত যোগাযোগ সৃষ্টি হবে বলে মত বিশিষ্টজনদের।

এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ তিন পার্বত্য জেলার সমন্বয়ে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন ও কৃষি ইকোনোমিকজোন। এতে কৃষি ক্ষেত্রে ঘটবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এমনটাই মনে করছেন কৃষিবিদরা। সড়কটি নির্মাণ হলে বোয়ালখালীর প্রায় অনাবাদি পড়ে থাকা ২৬ হাজার একর পাহাড়ি এলাকা আবাদ হবে।

দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অভ্যন্তরিন সড়ক রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম নগরে যাতায়াতের সরাসরি কোনো সড়ক না থাকায় দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য চট্টগ্রাম নগরীতে পৌঁছানো সহজ হয়ে উঠে না। ফলে হাজার হাজার একর পাহাড়ি ভূমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। একমাত্র বোয়ালখালী উপজেলা দিয়েই সড়ক যোগাযোগ সহজতর করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী সুজিত কান্তি মজুমদার।

জানা গেছে,১৯৬২ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক বুক স্বপ্ন নিয়ে বোয়ালখালী উপজেলার আরাকান সড়কের গোমদন্ডী ফুলতল থেকে কানুনগোপাড়া হয়ে বৈদ্যানি খালের পাশ ঘেঁষে কড়লডেঙ্গা পাহাড় ও কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ সীমান্তের এক ¯্রােতেস্বীনী ভান্ডালজুড়ি খালের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত সড়ক তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ।

উপজেলার গোমদন্ডী ফুলতল বৈদ্যানি খালের পাশ ঘেঁষে কড়লডেঙ্গা পাহাড়ের পাদদেশ বু আলী কলন্দর শাহ (র.) মাজার পর্যন্ত পাকাকরণ করা হয়। এরপর ভান্ডালজুড়ি খালের পশ্চিম পাড় (লট ৬৭ ও জেএল নং ৩৩) পর্যন্ত পাহাড় কেটে মাটির সড়ক তৈরি করা হয়। সেই মাটির সড়ক পাকা করণ ও কড়লডেঙ্গা ভান্ডালজুড়ি খালের উপর একটি সেতু করা হলে বোয়ালখালীর প্রায় ২৬ হাজার পাহাড়ি ভূমিতে আবাদের মধ্যে দিয়ে কৃষি বিপ্লব হবে জানিয়েছেন ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন কমান্ডার মো. আবুল হোসেন।

তিনি বলেন, ৭১এর পর থেকে জীবনের ৪৫ বছর এ পাহাড়েই জীবন কাটাচ্ছি। এ পাহাড় অর্থকড়িসহ অনেক কিছুই দিয়েছে আমাকে। বিদেশ যেতে হবে না মন্তব্য করে তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা পূনর্বাসনের জন্য আমাকে বিচিত্রা বিপনি নামের মোটর পার্টসের লাইসেন্স দিয়েছিলেন। সে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ডা. অশোক দত্তের পিতা শরদিন্দু দত্তের কাছ থেকে নেয়া প্রায় ১শত একর পাহাড়ি ভূমি নিয়ে পড়ে আছি। বর্তমানে জীবনের ৭১টি বছর চলে গেছে বাকি দিনগুলো পাহাড়েই কাটাতে চাই।

এ পাহাড়ে আদা, হলুদ, রসুন, পিয়াজ, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, মালটা, আম, কাঁটা জামির, পেয়ারা, পেঁপে, টমেটো, বেগুন, আলু, মিস্টি আলু, ধানসহ নানান সবজি চাষ হয়। এছাড়া মহিষ, গরু, ছাগলের খামার রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ হলে পরে দুধের দাম পড়বে মাত্র ২০টাকা। পাহাড়ে থাকা নানা জীবজন্তুর জীব বৈচিত্রের সমাহার নিয়ে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট। এমনটাই আশাবাদ কৃষিবিদ আবু জাফর মো. মঈন উদ্দিনের।

কানুনগোপাড়া হরি মন্দিরের মোড়ে লাগানো একটি ফলকে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ২০মার্চ মইজ্যারটেক-খাজারোড-বোয়ালখালী-কানুনগোপাড়া-পদুয়া-উদরবন্যা সড়ক এর সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদল। তবে এ বিষয়ে জানতে সাংসদকে বারবার মুঠোফোনে ফোন করে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.