এবার ঈদে ঢাকা ছাড়ছে অর্ধকোটি মানুষ

0
সিটিনিউজবিডিঃ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় অর্ধকোটি বা ৫০ লাখ মানুষ গ্রামমুখী হবেন। সড়ক, রেল, লঞ্চ এবং আকাশ পথে ঢাকা ত্যাগ করবেন তারা। আগামী ১৩ জুলাই থেকে যাত্রা শুরু করে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত যাত্রা অব্যাহত থাকবে তাদের।
সড়ক পথে প্রতিদিন ৬ লাখ ২৫ হাজার মানুষ আগামী চার দিনের হিসেবে ২৫ লাখ, রেলপথে প্রতিদিন ২ লাখ ৫০ হাজার করে চার দিনে ১০ লাখ, প্রতিদিন লঞ্চপথে ৩ লাখ করে চার দিনে ১২ লাখ মানুষ, এবং উড়াল পথে প্রতিদিন ১৬ শ করে চার দিনে ৬৪ হাজার মোট ৪৭ লাখ ৬৪ হাজার ঘরমুখী মানুষ ঢাকা ছাড়বেন।
তবে ঘরে ফেরা বিপুলসংখ্যক মানুষ শঙ্কায় রয়েছে বাড়ি ফেরার ভোগান্তি নিয়ে। কেননা, সড়ক, নৌ, আকাশ- কোনো পথেই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরার কার্যকর ব্যবস্থা নেই। বিগত বছরগুলোর মতো এবারো সেই গতানুগতিক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার এবং পরিবহনসংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো।
সব পক্ষই বলেছেন, কোনোভাবেই বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে যাত্রী বহন করতে দেওয়া হবে না। কেউ নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এ পর্যন্তই। কিন্তু ওই পর্যন্তই। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হয় সব বছরই। কিন্তু এ নিয়ে কোনো পরিবহন মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন তথ্য নেই সরকারের কাছে।
গত ৩ জুলাই বাসের আগাম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ট্রেনের টিকিট আছে, কিন্তু ছিট নেই। লঞ্চের টিকিট পাওয়া এখন সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মত অবস্থা। আকাশ পথের অবস্থাও ভালো নয়। প্রতিদিন যে হারে টানা বর্ষণ শুরু হয়েছে তাতে বিমানের শিডিউল বিপর্যয় ঘটবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।
শুক্রবার সকাল থেকে গাবতলী, কমলাপুর রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনাল সরেজমিনে ও বেসরকারি সংগঠন সিটিজেন রাইটস্ মুভমেন্টের দেওয়া তথ্যে এসব খবর পাওয়া গেছে।
সরকারের ঢিলেঢালা প্রস্তুতির কারণে ঈদের ১০ দিন বাকি থাকতেই বাস-লঞ্চের অগ্রিম টিকিট উধাও হয়ে গেছে। বাস মালিক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে সব কম্পানিই নির্ধারিত ট্রিপের চেয়ে কম ট্রিপের টিকিট ছেড়েছে। ঈদের আগে রাস্তাঘাটের অবস্থা কিছু ভালো হলে ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানোও হতে পারে। তবে এর সম্ভাবনা খুবই কম।
অপরদিকে ঈদের আগে ১৪, ১৫ ও ১৬ জুলাইয়ের টিকিট পাচ্ছেন না যাত্রীরা। নগরীর বিভিন্ন কাউন্টার থেকে যাত্রীদের বলা হচ্ছে, এসব তারিখের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। লঞ্চের কেবিনের টিকিট নিয়েও চলছে লুকোচুরি।
গাবতলী, কল্যাণপুরের একাধিক পরিবহনকর্মী বলেছেন, রাস্তার অবস্থা খারাপ। তাই শেষ সময়ের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে না। যাত্রার দিনই টিকিট বিক্রি করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়তি দামে টিকিট বিক্রি করার উদ্দেশ্যেই পরিবহনকর্মীরা আটকে রেখেছেন শেষ কয়েক দিনের টিকিট।
সদরঘাটের লঞ্চকর্মীরা দাবি করেছেন, অধিকাংশ লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অথচ কেবিনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করার কথা ছিল ১৫ রমজান থেকে। কিন্তু বাস্তবে টিকিট বিক্রি আগেই শেষ হয়ে গেছে।
ঢাকা থেকে ঝালকাঠিগামী এমভি টিপু লঞ্চের ভাড়া সিঙ্গেল কেবিন ৬ শ আর ডাবলের জন্য ১১ শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লঞ্চের এক মালিক জানান, সরকারি হিসাব অনুযায়ী চার্টে ডেকের ভাড়া দেওয়া আছে ২০৪ টাকা। এর চারগুণ বেশি ভাড়া নিতে বলা হয়েছে কেবিন থেকে।
ঢাকা-বরিশালগামী পারাবত-৭ লঞ্চের বুকিং ক্লার্ক নজরুল ইসলাম জানান, আসলে গত ৫ জুলাই থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। যাত্রীর চাপ থাকায় ঈদের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এ সময় রহিম নামে এক যাত্রী অভিযোগ করে জানান, গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ঘুরছি, কোনো টিকিট পাইনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থা বা লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি শাহাব উদ্দিন মিলন জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় লঞ্চের সংখ্যা অনেক কম। নির্ধারিত সময়ের আগেই লঞ্চের কেবিন শেষ হয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, যারা লঞ্চের কেবিনের জন্য আবেদন করেছিলেন তাদের দেওয়া হয়েছে।
নৌমন্ত্রী শাহাজান খান জানিয়েছেন, যেকোনো দুর্ঘটনারোধে এ বছর সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি করা হবে। তিনি জানান, কোনোভাবেই লঞ্চে ছাদে যাত্রী বহন করতে দেওয়া হবে না। কেউ নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মন্ত্রী সাধারণ যাত্রীদের অতিরিক্ত যাত্রী না হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, আমাদের বিধিমালায় বলা আছে ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ব্যাপারে রেলওয়ের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাতে কোনো যাত্রী ছাদে না ওঠে।
ট্রেনের ছাদে যাত্রী না ওঠে সে জন্য আমরা শতকরা ২০ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিটের ব্যবস্থা করেছি। মন্ত্রী বলেন, মুসলমানদের বড় দুটি উৎসব হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহা। এ উৎসব দুটোর সময় রেলের অনেক যাত্রী হয়। রেলের যাত্রায়াত অতি আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হওয়ায় রেলের ওপর নির্ভর। আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী শতকরা ১ শ ভাগ সেবার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জেলা সদরের রাস্তা সংস্কারে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আশা করি এবারের ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি হবে না। তিনি আরো জানান, ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঢাকা-যশোর এবং ঢাকা-কুয়াকাটা পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ করা হবে।
খন্দকাল আল ফেরদৌস নামের বাংলাদেশ বিমান কর্মকর্তা জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বিমানের শিডিউল ঠিক থাকে না। এ ছাড়া যে হারে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বিমান চলাচল স্বাভাবিক ভাবে বিঘ্ন হতেই পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.