সিটিনিউজবিডিঃ টিকেটযুদ্ধ শেষে যথারীতি শুরু হয়েছে বাড়ি ফেরার যুদ্ধ। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শেষ হলেও এখনও বাড়ি ফেরার টিকেট সংগ্রহ করতে পারেননি অনেকেই। টিকেটের জন্য এখনও কাউন্টারে কাউন্টারে হানা দিচ্ছেন তারা।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রে তনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির শেষ দিন গতকালও রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট পাননি অনেকে।স্টেশনজুড়ে ছিল অপেক্ষারত মানুষের ভিড়। কারও অপেক্ষা টিকেটের জন্য; কারও অপেক্ষা বাড়ি ফেরার ট্রেনের জন্য। শুধু রেলস্টেশন নয়, বাড়িফেরা মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতেও, বাদ যায়নি লঞ্চ টার্মিনালও। এদিকে ঈদ উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক মানুষের চলে যাওয়ায় আগের চেয়ে অনেকটা ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা।
রেলপথ : ঈদ উপলক্ষে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল থেকে রেলওয়ের বিশেষ ট্রেনযাত্রা শুরু হয়েছে। ট্রেনে বাড়ি ফিরতে যাওয়া মানুষদের ভিড়ে সকাল থেকেই মুখরিত ছিল কমলাপুর রেলস্টেশন। ট্রেন স্টেশনে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই উঠার তোড়জোড় শুরু হয় যাত্রীদের। পরিজন নিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকে। বাড়িফেরা বলে কথা-তাই তো কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারির পরও ট্রেনের ছাদেও উঠেছে মানুষ। গতকাল ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই শিডিউল জট দেখা দিয়েছে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ভোর ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা কমলাপুর টার্মিনাল ছেড়েছে সকাল সাড়ে ৯টায়।
ট্রেনে ঘরমুখো মানুষদের বাড়িফেরার চিত্র দেখতে সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। শুধু একটি ট্রেন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যথাসময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। এবার ঈদে কোনো শিডিউল বিপর্যয় হবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন রেলমন্ত্রী। প্রথম দিনেই কমলাপুর থেকে ২৯টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে গেছে।
সড়কপথ : ঈদকে সামনে রেখে কয়েক দিন আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালগুলোতে ভিড় বেড়েছে। গতকাল থেকে টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষদের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের জন্য কাউন্টারের সামনে অপেক্ষার প্রহর গুণতে দেখা গেছে হাজারও মানুষকে। বিকেল থেকে নগরীর সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে ঈদযাত্রীদের ভিড় বেড়ে গেছে অনেকগুণে। পরের দিনগুলোতে যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নৌপথ : পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো লঞ্চের যাত্রীদের ঈদযাত্রায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল। গতকাল সকালে টার্মিনালের পন্টুনে যাত্রীদের উল্লেখযোগ্য ভিড় লক্ষ করা গেছে। আজ থেকে যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে লঞ্চে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সূত্র জানায়, ঈদের আগে ও পরে বন্দরগুলো পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখারও ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে সমন্বিতভাবে কাজ করবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। নৌবন্দরগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। পকেটমার, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ছাদে যাতে লোকজন না নেওয়া হয়, সে ব্যাপারে লঞ্চ মালিকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে যেন প্রত্যেক যাত্রীর জন্য লাইফ জ্যাকেট রাখা হয়, সেজন্য মালিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা : ঈদের এখনও কয়েকদিন বাকি থাকলেও ঝুট ঝামেলা এড়াতে এরই মধ্যে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। গতকালও বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। ফলে এর মধ্যেই অনেকটা ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর সড়কগুলোতেও। যানজটের শহর ঢাকার চিত্রে ইতোমধ্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।