আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে না বাংলাদেশ

0

সিটিনিউজবিডি :   দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ আর আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর কঠিন কোনো শর্ত মানবে না। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন প্রত্যাখ্যান করার পর এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির (ইসিএফ) শেষ দুই কিস্তির ২৮ কোটি ডলার বাংলাদেশ নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম রাইজিংবিডি, দ্য রিপোর্ট, দৈনিক নয়াদিগন্ত ও ঢাকা ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে ইসিএফ ঋণের শেষ দুই কিস্তির টাকা আমরা নিচ্ছি না। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আমাদের অবস্থান তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে এ ধরনের ঋণ চুক্তি উভয়পক্ষ নবায়ন করতাম, এবার সেটাও করব না। তাদের দেওয়া কঠিন শর্ত আমরা আর মেনে নেব না।’

আইএমএফের কাছ থেকে ইসিএফের আওতায় মোট ৯৮ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির পর পাঁচ কিস্তিতে এ ঋণের ৭০ কোটি মার্কিন ডলার ইতিমধ্যে ছাড় হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অবশিষ্ট দুই কিস্তির অর্থ গত বছরের নভেম্বরে এবং চলতি বছরের মার্চ মাসে পাওয়ার কথা ছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফের একটি শর্ত ছিল- বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) যাবতীয় হিসাব-নিকাশের একটি অডিট বিদেশি কোনো সংস্থার মাধ্যমে করাতে হবে। কিন্তু আমরা তাতে রাজি হইনি। কারণ দেশে অনেক ভালো ভালো নিরীক্ষা ফার্ম রয়েছে, তাদের দ্বারা এটি করানো সম্ভব।’

আইএমএফের শর্ত মেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য বিদেশি অডিট ফার্ম নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাহলে বিপিসির ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায়, এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। ফলে দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে তার অডিট করানো সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু বিপিসির অডিট করাতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানই যথেষ্ট। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপিসির অডিট করানোর বিষয়ে আইএমএফ শর্ত মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই।’

 

এর আগে বিপিসি সম্পর্কে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিপিসিতে বার্ষিক ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়। এ বিশাল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হলেও এখানে কোনো নিরীক্ষা করা হয় না। ফলে অর্থের অপচয় বা দুর্নীতি হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিপিসির আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি কোনো ফার্ম দিয়ে অডিট করানোর প্রয়োজন আছে।

 

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আইএমএফ শর্ত পূরণের দোহাই দিয়ে প্রতিবারই কিস্তির অর্থ ছাড় করতে বিলম্ব করে। তিন বছর মেয়াদি এ চুক্তিটি ২০১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়। পরে দুই মাস সময় বাড়ানোর কারণে ইসিএফ চুক্তির মেয়াদ চলতি মাসের  ৩০ তারিখে শেষ হওয়ার কথা। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ২২ জুলাই আইএমএফ বোর্ড সভায় নেওয়া হবে।’

 

সূত্র জানায়, আইএমএফের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক রাকেশ মোহন চলতি মাসে অর্থ সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, শর্ত সাপেক্ষে সরকার এ চুক্তিটির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অথবা চুক্তিটি নির্ধারিত সময়ে (৩০ জুলাই) শেষ হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে কথা বলে ঋণ চুক্তির সময় না বাড়ানোর কথা আইএমএফকে জানিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী। কারণ, বাংলাদেশ আইএমএফের অযৌক্তিক কোনো শর্ত মানবে না।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.