‘আট ঘণ্টা কর্মদিবস না হলে মে দিবস করে লাভ কী?’

0

সিটিনিউজ ডেস্ক::দিনে আট ঘণ্টা শ্রমের অধিকার আদায়ে ১৩১ বছর আগে সংগ্রাম হলেও বাংলাদেশে এখনও এই অধিকার নিশ্চিত না হওয়ার নাখোশ আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরের। তিনি বলেন, এই বাস্তবতায় মে দিবস পালনের মানে হয় না।

সোমবার মহান মে দিবসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলেন।

১৯ শতকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিকরা দিনে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলনের নামে। ১৮৮৬ সালের ১ মে শিকাগো শহরে শ্রমিক বিক্ষোভে গুলি চালায় পুলিশ। এতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। আর আন্দোলন জোরাল হয় শ্রমিকদের। এক পর্যায়ে রাষ্ট্র শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়। আর শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিবস হিসেবে ১ মে মহান মে দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়।

শ্রমিকদের এই আন্দোলনে সংহতি জানায় গোটা বিশ্ব। আর কাগজে কলমে সারা দুনিয়াতেই আনুষ্ঠানিক শ্রমের কর্মঘণ্টা নির্ধারিত হয় আট ঘণ্টা। তবে বাংলাদেশে এখনও অনানুষ্ঠানিক খাতের বহু শ্রমিক এক চেয়ে বেশি সময় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই বাস্তবতাতেই পালিত হচ্ছে মে দিবস।

ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠনের সমাবেশেও উঠে আসে শ্রমিকদের এই বঞ্চনার কথা। বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপের কথা বলেন ওবায়দুল কাদেরও। তিনি বলেন, ‘আট ঘন্টা শ্রমের দাবিতে এই মে দিবস। এ জন্য শ্রমিকরা রক্ত দিয়েছিল আমেরিকার শিকাগো শহরে। …আজকে যারা মালিক, তাদের অধীনে যারা শ্রমিক আছে তাদের কর্মঘন্টা যেন আট ঘণ্টা বেঁধে দেয়া হয়। যদি তা না হয়, এ মে দিবস করে লাভ কী?’।

পরিবহন শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করে সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘চালক তখনই বেপরোয়া হয়, যখন সে অতিরিক্ত সময় ড্রাইভিং করে। দূরপাল্লার একটি পরিবহনে একজন চালক বিরতি ছাড়া তিন-চারটা ট্রিপ দিয়ে থাকে। ফলে মানসিক-শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এটা কমাতে চালকদের শ্রম ঘন্টা কমিয়ে দিতে হবে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, কল-কারখানায় দেখা যায়, ছোট ছোট শিশুরা কাজ করছে, যেটা অমানবিক। অতিরিক্ত কাজ করাতে গিয়ে এ শিশুদের উপর নির্যাতন করা হয়। এই শিশুশ্রম আমাদের দেশে বন্ধ করতে হবে।’

বর্তমান সরকারকে শ্রমিকবান্ধব দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বিএনপি এর বিপরীত। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি পায়, সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা বাড়ে। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় এলে শ্রমিকদের পেটে লাথি মারে, শ্রমজীবী মানুষের রক্ত ঝরে এদেশের মাটিতে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের আমলে দেশের কল-কারখানা, গামেন্টর্স শিল্প বৃদ্ধি পায়। শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বাড়ে। বিএনপি ক্ষমতায় এসে কল-কারখানা বন্ধ করে মেহনতি মানুষকে বেকার করে।’

শ্রমিকদের প্রশংসা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের মডেল হিসাবে পরিচিত পাচ্ছে। এ জন্য শ্রমিকদের অবদান বেশি, তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। তাই আমাদের সরকার শ্রমিকদের উন্নয়নে সবসময় কাজ করবে।’

সংগঠনের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কার‌্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সমাবেশস্থলে গিয়ে শেষ হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.