চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো খালাসে ধীরগতি-হুমকির মুখে পোশাক শিল্প

0

জুবায়ের সিদ্দিকী-  চট্টগ্রাম বন্দরে এলসিএল কার্গো খালাসে ধীরগতির কারনে নির্ধারিত সময়ে তৈরী পোষাক রপ্তানী করতে ব্যর্থ হচ্ছে রপ্তানীমুখী পোষাক শিল্প। এতে করে দেশের প্রায় তিন হাজার পোষাক কারখানা হুমকীতে পড়েছে। বিশেষ করে নির্ধারিত সময়ে শিপমেন্ট করতে ব্যর্থ হয়ে এয়ার ফ্রেইড দেয়ার কারনে মধ্য ও ছোট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। অভিযোগ উঠেছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের অনিয়ম অবহেলার কারনে ও একটি প্রভাবশালী বার্থ অপারেটরের দৌরাত্ব্যে বন্দরে নিয়মমাফিক কন্টেইনার খালাস হচ্ছে না।

বন্দর সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থিং নেওয়ার পর আমদানী পন্য খালাস করতে ১-২ দিন। অথচ গত একমাস ধরে জাহাজ বার্থিং হয়ে কন্টেইনার নামতে ৩-৫ দিন সময় লাগছে। আবার জাহাজ থেকে নামার পর এলসিএল কন্টেইনারগুলো শেডে আনষ্টাফিং হতে ১০-১২ দিন সময় লাগছে। অনেক ক্ষেত্রে শেডে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও রহস্যজনক কারনে কন্টেইনার আনষ্টাফ হচ্ছে না। এ ছাড়া বর্হিনোঙ্গরে আসার পর বার্থিং পেতে জাহাজগুলোকে ৫-৭ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিপিং এজেন্টস কর্মকর্তা বলেন,’ চট্টগ্রাম বন্দরের একটি প্রভাবশালী বার্থ অপারেটর কোন আইনের তোয়াক্কা করছে না। তাদের দৌরাত্ব্যে বন্দরের অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা অসহায়।

তারা জাহাজগুলোকে নিজেদের বার্থে বার্থিং করানোর জন্য বাধ্য করেন। এভাবে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে জাহাজজট লেগে যাচ্ছে। জানা যায়, চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্টিত গার্মেন্টস প্রতিষ্টানের কিছু কাঁচামাল আসে কালামাটা ট্রেডার নামের জাহাজে। কন্টেইনারবাহী জাহাজটি গত ১৬ মে বর্হিনোঙ্গরে ৬ দিন অপেক্ষা করার পর গত ২২ মে জাহাজটি নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-১ এ বার্থিং করে। ২৩ মে ওই গার্মেন্টসের চালানবাহী কন্টেইনারটি বন্দরে নামে। কিন্তু ১১ দিন পর ৩ জুন কন্টেইনারটি শেডে আনষ্টাফিং হয়।

পরে ৪ জুন চালানটি খালাস নেয় সিএন্ডএফ প্রতিষ্টান। ওই সিএন্ডএফ প্রতিষ্টানের এক কর্মচারী জানান, গত কয়েকদিনে এটিই সবচেয়ে কম ১৩ দিনে খালাস নিতে পেরেছি। জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে অরাজকতা চলছে। আগে এফসিএল কার্গোগুলো ৩-৪ দিন লাগছে। আবার শেড খালি থাকলেও অদৃশ্য কারনে আনস্টাফিং হচ্ছে না। একজন সিন্ডএফ ব্যবসায়ী জানান, জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামার পর পার্ট কার্গো (এলসিএল) আগে ৩-৪ দিনের মধ্যে নেমে যেতো। এখন ১৫-২০ দিনেও আনষ্টাফ হচ্ছে না। এসব কন্টেইনারে গার্মেন্টসের যেসব পন্য থাকে তা নিয়ে পোষাক কারখানা মালিকদের বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে। কারন গার্মেন্টন্স বায়াররা ঘন্টা সেকেন্ড হিসেব করে অর্ডার করে। এসব কাঁচামাল নিয়ে পোষাক তৈরি করে নির্ধারিত সময়ে শিপমেন্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য শিল্পগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে’। তিনি বলেন,’দুনিয়াতে সব এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের বন্দর পিছিয়ে যাচ্ছে। বন্দরে অনিয়মতান্ত্রিক কাজ শুরু হয়েছে।

পুরো বন্দর ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ডুকেছে। কাদের গাফিলতির জন্য শিল্প মালিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছে, কোথায় গলদ তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। পোষাক রপ্তানীকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সুত্রে জানা গেছে, সারাদেশে চার হাজার তিনশ’ গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। তম্মধ্যে তিন হাজার কারখানা চালু রয়েছে। চট্টগ্রাম চালু রয়েছে ৩৭০টি রপ্তানীকারী পোষাক কারখানা। অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ জুন ২৪টি জাহাজ খালাস পর্যায়ে এবং ৮৭টি জাহাজ বার্থিং এর অপেক্ষায় বহির্নোঙ্গরে অবস্থান করছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের পোর্ট অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারী লিয়াকত আলী হাওলাদার বলেন, সিসিটি এনসিটিতে কন্টেইনারের জন্য মানুষও চলাচল করতে পারছে না। আমরা দাবী জানিয়েছি, কন্টেইনারগুলো জিসিবিতে (জেনারেল কন্টেইনার বার্থ) এনে খালাস দেওয়ার জন্য। কিন্তু কন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা শুনছেন না। তিনি বলেন, বন্দরে এখনো ১৮-২০টি জাহাজ বার্থিংয়ের অপেক্ষায় বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমান আছে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সুত্র মতে, এখন জাহাজ পর বার্থিং পেতে ৬-৭ দিন বর্হিনোঙ্গরে অপেক্ষা করতে হয়। তার উপর এলসিএল কার্গোগুলো শেডে খালী করে দেয়া।

বার্থ অপারেটরের প্রভাবের বিষয়ে জাতনে চাইলে তিনি বলেন, এলসিএল কার্গোতে বার্থ অপারেটররা এফবিএল কার্গোগুলো হ্যান্ডলিং করতে বেশি আগ্রাহী। তারা বন্দর কর্তৃপক্ষের ইক্যুইপমেন্ট চালনাকারী কর্মচারীদের ম্যানেজ করে কন্টেইনার খালাসে প্রভাব রাখেন। এতে করে ফ্রেইড ফরোয়ার্ডাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। বিজিএমইএ চট্টগ্রামের একজন পরিচালক বলেন, বন্দর থেকে খালাস জটিলতায় ঠিকমত কাঁচামাল না পাওয়ায় অনেক গার্মেন্টস লিড টাইম (শিপমেন্টের নির্ধারিত সময়) হারাচ্ছে। এতে গার্মেন্টস পন্যগুলো এয়ার শিপমেন্ট করতে বাধ্য হচ্ছে।

ফলে এয়ার ফ্রেইড দিতে গিয়ে অনেক গার্মেন্টস মুলধন হারিয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে বন্দর থেকে পন্য খালাস জটিলতার কারনে দেশের ৯০ শতাংশ গার্মেন্টস ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজ আসতে ৫ দিন লাগে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পন্য খালাস নিতে ১৫ থেকে ১৮ দিন লাগে। বন্দর আমাদের কোন অভিযোগ গায়ে মাখে না।

তিনি বলেন, বার্থ অপারেটরগুলো নিয়ন্ত্রন করে বন্দর। এগুলোকে বন্দর সুষ্টভাবে নিয়ন্ত্রন করলে সমস্যার সমাধান হবে। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, এলসিএল কার্গো খালস নিতে ১৫-২০ দিন ব্যয় হওয়ার বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। এতে গার্মেন্টস মালিকরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে কার্গো খালাসের পদক্ষেপ নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.