কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

0

জামাল জাহেদ  :  সাগরে সৃষ্ট নিম্ন চাপের কারণে ঝড়ো হাওয়ার সাথে পুর্নিমার জোয়ার ও টানা বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজারের ৫টি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বন্যা কবলিত মানুষ পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী না পেয়ে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। বন্যা দূর্গতদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী, খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় অনাহারে-অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। এই সব এলাকার হাজার হাজার মানুষ বেড়িবাঁধ, সড়ক ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। প্রত্যেকের ঘরে সংগ্রহে রাখা ধান ও চাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে কারো ঘরের চুলোয় আগুন জলেনি। গৃহপালিত গরু ছাগল হাঁস মুরগি নিয়েও বিপাকে পড়েছে মানুষ। এলাকাবাসি ভেলা ও নৌকায় করে যাতায়ত করছে। পেকুয়া-বাঁশখালী সড়কটিও ডুরে যাওয়ায় মানুষের দাঁড়াবারও জায়গা নেই। এক অবর্ননীয় অবস্থা বিরাজ করছে সর্বত্র।দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারের সাথে মহেশখালী,কুতুবদিয়ার সাথে নৌপথ চলাচল বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় পানি সড়কের সমান্তরালে অবস্থান করছে। খুটাখালী, কালিরছড়া, মালুমঘাট, রামু বাইপাসসহ আরও একাধিক স্থানে ঝড়ো হাওয়ায় মহাসড়কে উপড়ে পড়েছে বিশালাকারের গাছ। এছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যোগাযোগ তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, রামু-মরিচ্যা আরাকান সড়কেও যানবাহন চলাচল মঙ্গলবারও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলো। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীন সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

এই ৫ উপজেলার হাজার হাজার মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়ে। পানি বন্দি মানুষরা আশ্রয়ের সন্ধানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যায়। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দূর্গতদের মাঝে চলছে হাহাকার। ওই আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রিত কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্রী শাকিলা আকতার মুন্নী অভিযোগ করেন, বিপদে পড়ে আমাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে । ৩ দিন ধরে বিভিন্ন ব্যাক্তি পর্যায়ে সকালে চিড়া-গুড় খেতে পারলেও দুপুর-রাতের জন্য তাদের কাছে কোন খাবার নেই। বিপদের এ সময়ে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছানোর দাবী জানায় এ কলেজ ছাত্রী।
টানা বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে সোমবার ভোররাতে ৫ জন নিহত হওয়ার পর পাহাড়ারে পাদদেশে বসবাসরত লোকজনের মধ্যে আতংক দেখা দেয়ায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাসরত পরিবারগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে সোমবার থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।
বঙ্গোপসাগরে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধির কারণে এবং পাহাড়ী অব্যাহত থাকায় বন্যা কবলিত উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। প্লাবিত এলাকায় ভেসে গেছে মৎস্য খামার। দূর্গত এলাকার মানুষ খাদ্য ও দিন যাপনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। দূর্গত এলাকার লোকজন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৫ উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানি বন্দি রয়েছে। এ সব উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ঢলের পানিতে ডুবে থাকায় মানুষের স্বাভবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। উপকুলীয় বেড়িবাঁধ গুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় সামুদ্রিক জোয়ারের সময় সাগরের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম রহিমউল্লাহ জানিয়েছেন, বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লোকজন চরম দূর্ভোগে পড়েছেন।
চকরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান জাফর আলম জানিয়েছেন,চকরিয়া উপজেলার দরবেশ কাটা এলাকায় সোমবার বিকেলে বেড়ীবাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে উপজেলার কোণাখালী, বিএমচর, ঢেমুশিয়া, বদরখালী ও পশ্চিম বড়ভেওলাসহ অন্তত পাঁচ ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের বেশিরভাগ বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে বুক সমান পানিতে। ভেঙ্গে পড়েছে আভ্যন্তরিণ এলাকার সড়ক যোগাযোগ। হাজার হাজার মানুষ পড়েছে মহা দুর্ভোগে।
পেকুয়া উপজেলার চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি বেড়ীবাধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে প্রবেশ করে ডুবে যাওয়া গ্রামগুলোর মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। প্রবল বর্ষণে শনিবার (২৫ জুলাই) দুপুর থেকে মাতামুহুরী নদীর শওকত পাড়ায় ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ দিয়ে বলির পাড়া, মোরার পাড়া, সরকারী ঘোনা, হরিণাফাড়ী, বাঘগুজারা ও নন্দীর পাড়াসহ আশঙ্কাজনকভাবে পানি বাড়ায় ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়। উখিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী জানিয়েছেন, পাহাড়ী ঢল ও নাফ নদীর জোয়ারের পানিতে একাকার হয়ে গেছে প্রায় ১২শ একর চিংড়ি ঘের। উখিয়ায় সড়কে গাছ পড়ে ও কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বেশ কয়েকটি এলাকার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে শনিবার মধ্যরাত থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। উপজেলার রেজু খাল দিয়ে বিপদসীমার উপর পানি প্রবাহিত হওয়া দু’পাড়ে বসবাসরত প্রায় ২ শতাধিক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ১৮টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
সেন্টমার্টিনের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান, সেন্টমার্টিনের প্রায় ১০ হাজার মানুষ চরম দুভোর্গে পড়েছে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে। এ পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন প্রকার সাহায্য বা ত্রাণ পৌঁছেনি। দ্বীপবাসী আতংকে দিনাতিপাত করছে।
এসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বন্যা কবলিত এলাকা দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবীর জানান।
উল্লেখ্য, গত মাসে রমজানে ভয়াবহ বন্যায় প্রায় সপ্তাহ ব্যাপী পানিবন্দী থাকার পর হঠাৎ করে আবার বন্যা দেখা দেওয়ায় মহা দুর্ভোগে পড়ে দুর্গত এলাকার মানুষ।
এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.