নিজস্ব প্রতিবেদক:: চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজজট, কন্টেইনারজট, ইকুইপমেন্টের অভাবসহ বিদ্যমান অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র পরিচালকমন্ডলী ২০ জুলাই বিকেলে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ চেম্বার কার্যালয়ের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এক জরুরী সভায় মিলিত হন।
প্রেসিডেন্ট মাহবুুবুল আলম’র সভাপতিত্বে এ সময় চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমদে, পরিচালকবৃন্দ এ. কে. এম. আক্তার হোসেন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), এম. এ. মোতালেব, মোঃ জহুরুল আলম, মাহবুবুল হক চৌধুরী (বাবর), ছৈয়দ ছগীর আহমদ, মোঃ রকিবুর রহমান (টুটুল), অঞ্জন শেখর দাশ, মোঃ জাহেদুল হক ও মোঃ আবদুল মান্নান সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সভা শেষে চেম্বারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম কাস্টমস, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের প্রতি সমস্যা নিরসনে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে এক বিবৃতি প্রদান করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়-
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৩টি জেটি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম শুরু করলেও গত ৪৫ বছরে তার সাথে যুক্ত হয়েছে মাত্র ৭টি জেটি।
অথচ এ সময়ে বিশেষ করে বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তার সাথে সমন্বয় রেখে দেশের আমদানি রপ্তানির প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটির সংখ্যা ৬০টি থাকা অপরিহার্য ছিল।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় গেল কয়েক বছর যাবৎ একটিও নতুন টার্মিনাল নির্মিত হয়নি।
কেবল সমীক্ষা নিরীক্ষা এবং প্রস্তাবনার মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল।
গত কয়েক বছর বন্দরের গড় প্রবৃদ্ধি ১৮-২০%।
পতেঙ্গা টার্মিনাল, কর্ণফুলি টার্মিনাল, লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল দীর্ঘদিন যাবৎ নির্মাণ করার কথা বলা হলেও অদ্যাবধি প্রকৃতপক্ষে এক্ষেত্রে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি।
বন্দরের কোষাগারে হাজার হাজার কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কি কারণে বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার দারস্থ হতে হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
বন্দর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অনতি বিলম্বে এসব টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করা একান্ত জরুরী।
বন্দরে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টের মাত্র ৩০% বর্তমানে রয়েছে। গত ১০ বছরে নতুন কোন গ্যান্ট্রি ক্রেইন সংগ্রহ করা হয়নি।
১২টি গ্যান্ট্রি ক্রেইন প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে ৪টি ক্রেইন। তার মধ্যে সম্প্রতি দু’টি ক্রেইন জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
দু’টি মাত্র গ্যান্ট্রি ক্রেইন দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব। ফলে বন্দরে জাহাজজট তীব্র আকার ধারণ করেছে এবং বন্দর প্রায় অচল হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
দেশের প্রধানতম সমুদ্র বন্দর ইকুইপমেন্টের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে, এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আমরা ইকুইপমেন্টের এই স্বল্পতার কারণ অনুসন্ধানের দাবী করছি।
গত বছর বন্দরে প্রায় ২ হাজার জাহাজের আগমন ঘটে এবং গড়ে প্রতি বছর ১৩-১৪% প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী টার্ণ এরাউন্ড টাইম দুই থেকে আড়াই দিন হলেও চট্টগ্রাম বন্দরে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে।
বন্দর সময় মতো আইসিডিগুলোকে কন্টেইনার ডেলিভারী দিতে না পারায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
ফলে শিল্পের কাঁচামাল ও বিভিন্ন পণ্য ডেলিভারীতে ৪-৫ দিনের পরিবর্তে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত বিলম্ব হচ্ছে।
এমতাবস্থায়, উদ্ভূত সংকট দ্রুত মোকাবেলার লক্ষ্যে একাধিক মোবাইল হার্বার ক্রেইন জরুরী ভিত্তিতে সংগ্রহ করা প্রয়োজন বলে চিটাগাং চেম্বার মনে করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে যে তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সেগুলোতে যখন বিদেশী বিনিয়োগ, উৎপাদন এবং রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হবে, তখন বিদ্যমান অবকাঠামো দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
তাই কাল বিলম্ব না করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্য আয়ের দেশ নির্মাণের যে পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়নের পথে ইতিমধ্যে গৃহীত বন্দর সম্প্রসারণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও প্রকল্পগুলোর দৃশ্যমান কাজ শুরু করতে হবে।
পর্যাপ্ত স্কেনার মেশিনের স্বল্পতার কারণে কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ইকুইপমেন্ট ক্রয়ের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে মাত্রাতিরিক্ত ধীর গতি এক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান অন্তরায়।
২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ২০ লাখ টিইউএস কন্টেইনার এবং ৪ কোটির বেশী বাল্ক কার্গো হ্যান্ডেল করে। এ বছরের শেষ প্রান্তে গিয়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৫ লক্ষ টিইউএস।
অথচ এ বিশাল আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম দক্ষতার সাথে হ্যান্ডলিং করার কোন দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি কর্তৃপক্ষের আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করে বন্দরের অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে অপারেশনাল কর্মকান্ডে বন্দরের অর্থ ব্যয় করা অধিক যুক্তিযুক্ত বলে আমরা মনে করি।
আমদানি এবং রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বন্দর এবং কাস্টমস ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার যে অনুশাসন প্রদান করেছেন তাঁর জন্য ব্যবসাবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা অভিনন্দন জানাই।
কিন্তু এ নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার যেমনঃ কাস্টমস, আনবিক শক্তি কমিশন, কোয়ারেন্টাইন, বিএসটিআই, সিএন্ডএফ, এমএলও, শিপিং এজেন্টস, ট্রান্সপোর্ট, ব্যাংক ইত্যাদির মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব অত্যন্ত প্রকট।
এ সমন্বয়হীনতা দূর করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চিটাগাং চেম্বার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যুগপৎ কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে।