কানের পর্দা ফেটে গেলে

0

অধ্যাপক ডা. এ এফ মহিউদ্দিন খান:
কানের ভেতরের দিকে একটি পর্দার মতো থাকে, যা টিমপ্যানিক মেমব্রেন নামে পরিচিত। মধ্যকর্ণ থেকে অন্তঃকর্ণের মাঝখানে এটি পর্দা হিসেবে থাকে। কম্পন মধ্যকর্ণের ছোট ছোট হাড়ের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে পৌঁছায়। অতঃপর অন্তঃকর্ণ থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এভাবে আমরা শুনতে পাই।
কিন্তু বহু কারণে এই পর্দা ফেটে যেতে পারে, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ছিঁড়ে যেতে পারে। এতে শুনতে অসুবিধা হয়, কখনও কখনও শ্রবণশক্তি পুরোপুরি লোপ পায়। কানের পর্দা ফেটে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়
পর্দা ফাটার কারণ
কানের পর্দা বিভিন্ন কারণে ফাটতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন-
# কানের কোনো অসুখ যেমন-মধ্যকর্ণে ক্রনিক সাপোরেটিভ অটাইটিস মিডিয়া হলে
# কোনো কিছু দিয়ে কান খোঁচালে। যেমন-কটন বাড
# কানে কোনো কিছু প্রবেশ করলে এবং অদক্ষ হাতে তা বের করার চেষ্টা করলে
# দুর্ঘটনা বা আঘাতে কান ক্ষতিগ্রস্ত হলে
# হঠাত্ কানে বাতাসের চাপ বেড়ে গেলে। যেমন-থাপ্পড় মারা, বোমা বিস্ফোরণ, অতি উচ্চ শব্দ ইত্যাদি কারণে
# পানিতে ডাইভিং বা সাঁতার কাটার সময় হঠাত্ পানির বাড়তি চাপের কারণে পর্দায় চাপ পড়লে
# কানের অন্য অপারেশনের সময়ও কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে
# যাদের কানের পর্দা আগে থেকেই দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের ক্ষেত্রে নাক চেপে কানে বাতাস দিয়ে চাপ দিলে।
উপসর্গ
# প্রথমে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা পরবর্তী সময়ে কমে আসে
# কান দিয়ে রক্ত পড়া। বিশেষ করে আঘাতজনিত কারণে কানের পর্দা ফেটে গেলে কান দিয়ে রক্ত পড়তে পারে
# কানে কম শোনা
# মাথা ঘোরানো বা ভার্টিগো
# কানে শোঁ শোঁ বা ভোঁ ভোঁ শব্দ (টিনিটাস) হওয়া।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
অটোস্কোপের মাধ্যমে খালি চোখেই ডাক্তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কানের পর্দা ফেটে গেছে কি না তা নির্ণয় করতে পারেন। এ ছাড়া কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে আছে কানের ভেতর থেকে বের হওয়া তরলের কালচার পরীক্ষা, টিউনিং ফর্ক ইভালুয়েশন, টিমপ্যানোমেট্রি। এগুলো থেকেও যথাযথ রোগ নির্ণয় না করা গেলে অডিওলজি টেস্ট করা হয়।
চিকিত্সা
অনেকেই কানে কোনো সমস্যা হলে নিজেরাই কানের ড্রপ ব্যবহার করে, যা উচিত নয়। কানের পর্দা ফেটে গেলে অবশ্যই একজন নাক-কান-গলা রোগ চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনীয় চিকিত্সা ও পরামর্শ নেওয়া উচিত। যাদের কানে আগে থেকেই কোনো সমস্যা আছে বা কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলা উচিত।
# কানে কোনোভাবেই যেন পানি প্রবেশ না করে এজন্য গোছলের সময় কানে তুলা বা ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা
# সাঁতার না কাটা
# উড়োজাহাজে ভ্রমণ এড়িয়ে চলা
# উচ্চশব্দে গান না শোনা, হেড ফোন ব্যবহার না করা
# কানে যাতে কোনো ইনফেকশন না হয়, এজন্য কানো কোনো অসুবিধা হওয়া মাত্র ডাক্তার দেখিয়ে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা
# কান না খোঁচানো
# নিজে নিজে কোনো ওষুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকা
# কানে কোনো কিছু গেলে বা আটকে থাকলে নিজে তা বের করার চেষ্টা না করা।
কানের পর্দার ছিদ্র যদি ছোট হয় বা অল্প একটু ফেটে যায়, তাহলে কয়েক সপ্তাহ পর আপনা আপনি তা ঠিক হয়ে যায়। অনেক সময় কানে ইনফেকশন সন্দেহ করা হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়, কানে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দিতে হয়।
যদি তিন মাসের মধ্যেও ক্ষতিগ্রস্ত পর্দা ঠিক না হয়, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা ঠিক করা যায়।
সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই অপারেশন অনেক হচ্ছে।
জটিলতা
যথাসময়ে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার চিকিত্সা না হলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া মধ্যকর্ণে ঘন ঘন ইনফেকশন হয়ে স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি বিলোপ হতে পারে। এ ছাড়া মধ্যকর্ণে সিস্ট (কোলেস্টিটোমা) হতে পারে।
বিভাগীয় প্রধান, নাক কান ও গলা বিভাগ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.