মুফতি ইজাহারকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ সদস্যের টিম গঠন

0

সিটিনিউজবিডি : নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের কথিত প্রতিষ্ঠাতা ও হেফাজত নেতা মুফতি ইজাহারুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে ১০ সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে। এতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ানকে প্রধান করা হয়েছে।

শুক্রবার (৭ আগস্ট) রাতে সিএমপি কমিশনার মোহা.আব্দুল জলিল মন্ডল এ টিম গঠন করেন।

টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, উপ কমিশনার (বিশেষ শাখা) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া, উপ কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ, অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ডিবি) এস এম তানভির আরাফাত, সহকারি কমিশনার (ডিবি-বন্দর) এবিএম ফয়জুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ডিবি-উত্তর) মো.কামরুজ্জামান এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম, আব্দুর রউফ ও আতিক আহমেদ চৌধুরী এবং উপ-পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (বন্দর) এবিএম ফয়জুল ইসলাম বলেন, মুফতি ইজাহারকে জিজ্ঞাসাবাদসহ সার্বিক বিষয়ে ১০ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইজাহারকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। তবে টিম গঠনের পর শুক্রবার রাতেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে নগরীর লালখানবাজার জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি খুনসহ পৃথক তিনটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। প্রায় দু’বছর ধরে তিনি পলাতক ছিলেন।

মুক্তমনা ব্লগারদের খুনে সম্পৃক্ততা এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তৈয়বার বাংলাদেশের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য জানতে হেফাজতের ইসলামের নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বই মেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জঙ্গি কায়দায় হামলায় খুন হন মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়।

এরপর ৩০ মার্চ সকালে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় খুন হন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু। এর ‍এক মাসের মাথায় সিলেটের সুবিদ বাজারে অনন্ত বিজয় দাশ নামে আরেক ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনমাস না পেরোতেই শুক্রবার(৭ আগস্ট) দুপুরে বাসায় ঢুকে নিলয় চক্রবর্তী নীল নামে আরেক ব্লগারকে জবাই করে হত্যা করা হয়।

এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খুন হন ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার।

এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মুফতি ইজাহারের সম্পৃক্ততা আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ। যিনি এক সময় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়ের খুনের ঘটনার পর আল কায়েদার নাম আলোচনায় আসে। এক ভিডিও বার্তায় জঙ্গী সংগঠনটির ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা হত্যার দায়ও স্বীকার করেছিলেন।

এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশে লস্কর ই তৈয়বার কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হচ্ছে বলে তথ্য পায় পুলিশ। সংগঠনটি সম্পর্কেও তথ্য জানতে মুফতি ইজাহারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার সঙ্গে মুফতি ইজহারের ছেলে মুফতি হারুনের ঘনিষ্ঠতারও অভিযোগ আছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (বন্দর) এবিএম ফয়জুল ইসলাম বলেন,‘মুফতি ইজাহারের সঙ্গে লস্কর ই তৈয়বার যোগাযোগ থাকতে পারে। বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনটির অবস্থা জানতে উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

এছাড়া ব্লগার হত্যায় সম্পৃক্ততা নিয়ে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত ইজাহারের মাদ্রাসায় সংগঠনটির কর্মীরা প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।

এক দশক আগে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের প্রাণনাশের অভিযোগে আটক হওয়া কয়েক জঙ্গি জানিয়েছিল, তারা মুফতি ইজাহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসায় ট্রেনিং নিয়েছিল।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতে ডাউকি এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া লস্কর ই তৈয়বার দু’জঙ্গি টি নাজের ওরফে নাজের পারবন এবং শফিক ওরফে সাহাফাজ শামসুদ্দিন সেদেশের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দু’জঙ্গির সঙ্গে ২০০৯ সালের নভেম্বরে মুফতি হারুনের বাংলাদেশে কয়েক দফা বৈঠক হয়। এমনকি তারা মার্কিন ও ভারত দূতাবাসে হামলারও পরিকল্পনা নিয়েছিল।

হেফাজতে ইসলামের ভেতরে কট্টর সরকারবিরোধী অংশের নেতৃত্বদাতা সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর নগরীর লালখানবাজারে তার পরিচালিত মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর থেকে ‘আত্মগোপনে’ চলে যান।

মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের প্রায় ছয় ঘণ্টা পর পুলিশের চোখের সামনেই পালিয়ে যান ইজাহার। সেখান থেকে রাউজান, হাটহাজারী হয়ে পটিয়ায় অবস্থান করেন কিছুদিন। সেখান থেকে গিয়ে কক্সবাজারে অবস্থান করেন কিছুদিন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি লালখানবাজার মাদ্রাসায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে মাদ্রাসায় অনিয়মিতভাবে আসা-যাওয়া করেন তিনি।

গত বছরের ৭ অক্টোবর নগরীর লালখানবাজারে মুফতি ইজাহারুল ইসলাম পরিচালিত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় হ্যান্ড গ্রেনেড বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে তিনজন মারা যায়। পরে পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালিয়ে চারটি তাজা গ্রেনেড, ১৮ বোতল এসিড এবং বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেন।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর খুলশী থানায় বিস্ফোরক আইনে, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং খুনের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। মামলাগুলো এখন বিচারের পর্যায়ে রয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.