চা শিল্পের সম্ভাবনাময় স্থান পার্বত্যাঞ্চল

0

মো: সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি : পার্বত্য চট্টগ্রামে চা শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও যথাযথ উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার অভাবে তা ব্যাহত হচ্ছে। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এই খাতে বাংলাদেশ ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে। চা রপ্তানিকারক দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ ক্রমে চা আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা এবং উদ্যোগ নেয়া হলে বছরে অন্তত ছয় কোটি কেজি চা পাতার উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত ক্লোন চা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের এক দশমাংশ এলাকায় ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার হেক্টর পাহাড়কে চা চাষের আওতায় নিয়ে আসা গেলে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পঞ্চগড় মিলে ১৬২টি চা বাগানের ১ লাখ ১৭ হাজার ২২৪.৩৯ হেক্টর ভূমি রয়েছে। এর ৫৮ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে চা চাষে। বাকি জমির বেশ কিছু অংশ চা বাগান সম্পৃক্ত বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। বাকিটা খালি পড়ে রয়েছে। চা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বৃহত্তর সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে সর্বমোট ৫৩ হাজার হেক্টর ভূমিতে চা বাগান রয়েছে। অথচ কেবলমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় চা শিল্পের উপযোগী ৪৬ হাজার হেক্টরের বেশি জমি রয়েছে। নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও এই বিশাল ভূমিতে চা বাগান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে ২৫ হাজার ২২০ হেক্টর, খাগড়াছড়িতে ১৪ হাজার ৯৩০ হেক্টর এবং রাঙামাটিতে ৬ হাজার ৭২০ হেক্টর ভূমিতে চা বাগান গড়ে তোলা যায় বলে বিভিন্ন পরীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব ভূমির মাটি পরীক্ষা করে চা বাগানের উপযোগী হিসেবে পাওয়া গেলেও তাতে বাগান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। পার্বত্যাঞ্চলের অস্থিরতা, মূলধনের অভাব, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না থাকা এবং সর্বোপরি উদ্যোগের অভাবে বিশাল এই ক্ষেত্রে চা বাগানের স¤প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না। অথচ পার্বত্যাঞ্চলের বান্দরবান,খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে চা চাষের উপযোগী ভূমি থেকে বছরে অন্তত ছয় কোটি কেজি চা উৎপাদন এবং এই চা বিদেশে রপ্তানি করে এক হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। এই চা চাষ কেবল পার্বত্যাঞ্চলের অর্থনীতির চেহারাই পাল্টে দেবে না দেশের অর্থনীতিকে অনেক বেশি মজবুত করবে বলে মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো বলছে,পার্বত্যাঞ্চলে চা শিল্পের বিকাশে অন্তত এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। একটি বাগান থেকে গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত চা উৎপাদন করা যায় বলে তারা জানিয়েছেন।

দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই চা বাগান স¤প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করে চা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, বছর কয়েক আগেও বাংলাদেশ বিশ্বের নানা দেশে চা পাতা রপ্তানি করে কোটি কোটি ডলার আয় করতো। কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চা রপ্তানিকারক দেশের তালিকা থেকে ছিটকে পড়ে চা আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা এবং চীন থেকে চা পাতা আমদানি করা হচ্ছে।

সরেজমিনে বান্দরবান ও রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ে নানা ধরনের জুমচাষ হচ্ছে। মাটি ক্ষয় হচ্ছে। অথচ এসব পাহাড়ে অনায়াসে চা বাগান গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল একাধিক চা বাগান মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বাগান স¤প্রসারণের সবচেয়ে বড় যে বাধা তা হচ্ছে বিনিয়োগ নিরাপত্তা। পাহাড়ে বসবাসকারীদের আস্থার জায়গায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এতে করে নানাভাবে উদ্যোগ নেয়া হলেও তা সফল হয়নি। পাহাড়ে বাগান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। আগের বাগানে ক্লোন চা করে তা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, পার্বত্যাঞ্চলের ক্লোন চা ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই শিল্পের সম্ভাবনা আকাশ ছোঁয়া বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসলে এই পার্বত্যাঞ্চলে এই খাতে বিপ্লব ঘটানোর সুযোগ রয়েছে।

চা বোর্ডের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, পার্বত্যাঞ্চলে বহু চাষি তামাক চাষে জড়িত। যা জমি এবং পরিবেশের ক্ষতি করছে। তাদেরকে চা চাষে উদ্বুদ্ধ করা গেলে সুফল মিলবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.