নাট্যচর্চায় ইরা ও ক্যাথরিনের স্বপ্নপূরণ

0

বিনোদন ডেস্ক :: গাজীপুরের মেয়ে ক্যাথরিন পিউরিফিকেশন আর ফরিদপুরের মেয়ে ইরা আহমেদ- দুজনেই নাটক বিষয়ে পড়তে এসে হয়েছেন বন্ধু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগে স্নাতকোত্তর করার ফাঁকে জেনে গেলেন খুশির খবর। স্নাতক পর্বের ফলাফলের ভিত্তিতে বিভাগের সেরা শিক্ষার্থী হিসেবে পাচ্ছেন ‘অধ্যাপক জিয়া হায়দার স্মারক বৃত্তি-২০১২’। এই আনন্দ নাট্যচর্চার প্রতি আরও বেশি দায়বদ্ধ করে তুলবে বলে জানান ক্যাথরিন ও ইরা।

‘অধ্যাপক জিয়া হায়দার স্মারক বৃত্তি’ প্রদান করা হবে মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর)। এতে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারসহ অনেকে। নাটক নিয়ে তাদের স্বপ্ন আর সমকালীন নাট্যচর্চার নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে আড্ডায়। আলাপচারিতার চুম্বক অংশ নিয়ে সাজানো হল এই প্রতিবেদন।

পড়াশোনা নিয়ে ইরা বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেকেই জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে নাটক নিয়ে উচ্চতর পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে পড়তে গিয়ে নাটকের প্রতি আরও ভাললাগা তৈরি হয়েছে। নিজের মধ্যে স্বপ্নও তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করার পর কোনো নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অথবা নিজেরাই নাট্যদল গড়ে নাট্যচর্চা অব্যহত রাখব।’
নাটকে অভিনয়ের চাইতে নির্দেশনায় বেশি আগ্রহ ইরার। এ প্রসঙ্গে ইরা বলেন, ‘নির্দেশনার প্রতি আমার এক ধরনের ভাললাগা রয়েছে। আমাদের পাঠের অংশ হিসেবে নাটক নির্দেশনা দিতে হয়। তাছাড়া টিভি নাটকও নির্মাণ করতে হয়। এর থেকে নির্দেশনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তবে অভিনয়েও যুক্ত থাকব।’

ক্যাথরিনের স্বপ্নটা একটু ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে নাটকের সঙ্গেই যুক্ত থাকবেন। তবে অভিনয় কিংবা নির্দেশনার চাইতে ক্যাথরিনের আগ্রহ গবেষণায়। লোকনাট্য ও থিয়েটার নিয়ে গবেষণার কাজ করতে চান ক্যাথরিন। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশের নাট্যচর্চার সুবর্ণ ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের হাজার বছরের নাট্য ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করতে চাই।’

পারিবারিকভাবে আগে থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল ইরার। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। অন্যদিকে ক্যাথরিন শুরুতে অন্য একটি বিষয়ে ভর্তি হন, পরে নাটক ও নাট্যকলায় চলে আসেন। নাটকের বিশাল ভাণ্ডারের খোঁজ মেলে এই বিভাগে পড়তে এসে।

ইরা বলেন, ‘নাটক করলে যে পড়তে হয় বিষয়টি সেভাবে জানতামই না। নাটক মানে অভিনয় করাটাকেই বুঝে সবাই। নাটক কর, টিভিতে দেখমু কবে? জানতে চান অনেকে। কিন্তু নাটক বিষয়ে পড়ালেখা করতে এসে ভাবনাটা অনেক বদলে গেছে। নাটক লেখা, নির্দেশনা, লাইট, সেট, ডিজাইন সমস্ত বিষয়ই এখন ভাবতে হয়।’
জীবনের সঙ্গে নাটকের জড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ক্যাথরিন বলেন, ‘এই বিষয়টির সঙ্গে এখন ক্যারিয়ারও জড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশে নাটক এখনো পেশার পর্যায়ে যায়নি। অথচ আমাদের পাশের দেশ ভারতেই নাটককে অনেকেই জীবিকার পর্যায়ে নিতে পেরেছে। আমাদের দেশে এখন পেশাগত নাট্যচর্চা জরুরি।’

পাঠের অংশ হিসেবে বিভাগের বিশ কিছু নাটকে অভিনয় ও ডিজাইনের সঙ্গে কাজ করেছেন ক্যাথরিন ও ইরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রযোজনাগুলো হল ‘সং ভং চং’, ‘মধ্যম বিয়োগ’, ‘কমলরানীর সাগরদীঘি’, ‘দি বাল্ড প্রিমা দোনা’, ‘মানুষ’ ও ‘স্বদেশী নকশা’।
মঞ্চে ইরা নির্দেশনা দিয়েছেন ডিজায়ার ‘আন্ডার দি এলমস’, ‘পরপারের পরের কথা’, ‘বিচার গান’, ‘ডার্ক লেডি অব দ্য সনেটস’। অন্যদিকে ক্যাথরিন নির্দেশনা দিয়েছেন ‘লেডি আড়াই’, ‘হ্যারি ডার্মিয়ার’, ‘ভানুমতির পালা’ ও ‘মিলিটারি’।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাঠ শেষ করে মঞ্চনাটক ও টিভি নাটকের সঙ্গে যুক্ত হবেন কিনা জানতে চাইলে ইরা বলেন, ‘আমাদের পাঠের অংশ হিসেবেই জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট(নিমকো) থেকে একটি কোর্স করতে হয়। সেখানে একটি টিভি ফিকশন তৈরি করতে হয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে টিভির চাইতে মঞ্চের কাজটাই বেশি ভাল লেগেছে। টিভিতে কাজ করলে খ্যাতি আসে কিন্তু কাজের তৃপ্তি আসে না।’

ইরার বক্তব্যই যেন ঝরল ক্যাথরিনের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘খ্যাতি অনেক সময় মূল কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আমাদের অনেক মেধাবী নাট্য বন্ধুকে দেখেছি টিভির খ্যাতির মোহে নিজের মেধাটাকে নষ্ট করেছেন। আবার অনেকে টিভি পর্দায় মেধার প্রয়োগও ঘটিয়েছেন। স্বপ্নটা যদি নাটক, সিনেমা নিয়ে হয় তবে সেখানে যুক্ত হওয়া উচিত। আমার স্বপ্নটা মঞ্চকে ঘিরেই। তবে টেলিভিশন কাজের সঙ্গে হয়ত যুক্ত থাকব। যেহেতু আমাদের দেশে এখনো থিয়েটার চর্চা জীবিকা নির্বাহের পর্যায়ে যায়নি।’
দেশের ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পড়ানো হচ্ছে। পাঠ শেষ করে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই টিভি চ্যানেল, এনজিও কিংবা বেসরকারি সংস্থায় যুক্ত হন। এদের অনেককেই পরবর্তীদের মূলধারার থিয়েটার চর্চার সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যায় না। আবার কেউ কেউ যুক্ত হয়ে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন।

থিয়েটার দলগুলোর সঙ্গে নাট্যকলার শিক্ষার্থীদের সংযোগ না ঘটার জন্য দুই দিকেরই সীমাবদ্ধতার কথা বলেন ক্যাথরিন ও ইরা। ক্যাথরিন বলেন, ‘নাট্যদলগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকেই যদি সংযোগটা না হয় তবে পরবর্তীতে যুক্ত হয়ে কাজ করাটা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে সবাই ছুটে চাকরির সন্ধানে। ঐ সময় থিয়েটার দলে যুক্ত হয়ে কাজ করাটা কঠিন হয়ে যায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই নাট্যদলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত। কিন্তু বিভাগের পড়া, ক্লাস, পরীক্ষা, মহড়া নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে নাট্যদলগুলোর সঙ্গে তখন যুক্ত হওয়া কঠিন।’

ইরা মনে করেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যারা নাটক নিয়ে পড়ছেন, তারা যদি মূলধারার নাট্যদলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করেন তবে বাংলাদেশের নাট্যচর্চা অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে। এটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নাট্য ব্যক্তিত্বদের ভাবা উচিত।’
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা। আমাদের আলাপচারিতাও শেষের দিকে। ক্যাথরিন ও ইরা দুজনেই নিজেদের মেধায় বাংলাদেশের নাট্যচর্চাকে সমৃদ্ধ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। প্রত্যাশা বিশ্ব নাট্যমঞ্চে বাংলাদেশের নাটচর্চা ঝংকৃত হবে।

সূত্র: দ্য রিপোর্ট

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.