সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমডিদের

0

অর্থবাণিজ্য ডেস্ক :: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ হচ্ছে। এখন থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মরত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের মধ্য থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।

চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের কাছে চিঠি দিয়ে বর্তমানে কর্মরত ২০ জন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চাকরি জীবনের যাতীয় কাগজপত্র (এসিআর প্রতিবেদন) ও জীবন বৃত্তান্ত চাওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ক্রমানুসারে- জনতা ব্যাংকে ওমর ফারুক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন বাংলাদেশে ইখতেখারুজ্জামান, অগ্রণী ব্যাংকে আউয়াল খান, সোনালী ব্যাংকে আতাউর রহমান, রূপালী ব্যাংকে খলিলুর রহমান চৌধুরী, অগ্রণী ব্যাংকে মিজানুর রহমান, সোনালী ব্যাংকে নুরুল হক, দিদার আব্দুর রব, জনতা ব্যাংকে হাসান ইকবাল, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে গান্ধী কুমার রায়ের নাম প্রথম দিকে রয়েছে।

যাচাই বাছাই শেষে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের বাদ দিয়ে নিয়মিত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক করার কঠোর নির্দেশনা এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এ কারণেই চুক্তিভিত্তিক এমডিদের বাদ দিয়ে নিয়মিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে মন্ত্রণালয়।

তবে চুক্তিভিত্তিক এমডিদের সরিয়ে দেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পর্যবেক্ষকদের দিয়ে প্রথমে তাদের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করা হবে। পর্যায়ক্রমে নিরীক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের ত্রুটি তুলে ধরে ডিসেম্বরের মধ্যেই অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে।

ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আব্দুল হামিদ ও জনতা ব্যাংকের আব্দুস সালামকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চ‍ূড়ান্ত। অগ্রণী ব্যাংকে নিয়োগ পাবেন আউয়াল খান অথবা নুরুল হক। আর ওমর ফারুক অথবা হাসান ইকবাল নিয়োগ পাচ্ছেন জনতা ব্যাংকে। গান্ধী কুমার রায় অথবা আব্দুর রবকে দেওয়া হবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের দায়িত্ব। আতাউর রহমান অথবা ইফতেখারুজ্জামানকে দেওয়া হবে সোনালী ব্যাংকের দায়িত্ব।

এছাড়া রূপালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খলিলুর রহমান চৌধুরী এফসিএকে চূড়ান্ত করা হয়েছে তার পূর্বের কর্মস্থল বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) জন্য। সরানো হচ্ছে না রূপালী ব্যাংকের এমডি এম ফরিদ উদ্দিনকে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া এমডিদের পরবর্তী কর্মজীবনে কিছু পাওয়া-হারানোর ভয় থাকে না। চুক্তি শেষে থাকে না প্রতিষ্ঠানের প্রতি কোনো দায়ভার। এ কারণে তারা বড় বড় আর্থিক অঘটন ঘটিয়েই যাচ্ছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের মতো অনিয়মের ঘটনায় প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে পুরো আর্থিক খাত।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। এ সময় তারা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার খুব বেশি বলে মত দেয়। খেলাপি ঋণের কারণে গোটা ব্যাংক খাতই চাপে রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক খাত, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সুশাসনব্যবস্থাও দুর্বল বলে মত দেয় প্রতিনিধি দল।

এসব কারণে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এই অবস্থা থেকে উদ্ধার ও স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের চুক্তিভিত্তিক প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.