সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল, সিটিনিউজবিডি : প্রতীক পেয়ে নতুন উদ্দীপনায় মাঠে নামলেন চন্দনাইশ পৌর সভার মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পৌর এলাকা। ভোটারা প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ২৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর মেয়র পদে-৪, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে-৫ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে-৪১ জনের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জানা যায়, বাছাইয়ে ৯নং ওয়ার্ডে সেকান্দর হোসেন সোহেলের প্রার্থীতা বয়স সংক্রান্ত জটিলতায় বাতিল ও ১৩ ডিসেম্বর ৪নং ওয়ার্ডের মাসুদুর রহমান প্রার্থীতা প্রত্যাহারে পর সর্বশেষ ৩ শ্রেণির ১৩ পদে ৫০ প্রার্থী ১৪ ডিসেম্বরর প্রতীক বরাদ্দ পান।
জানা যায়, চন্দনাইশে মেয়র পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন-৬ তন্মধ্যে জমা দেন-৪ জন। এতে ৪ জনেরই প্রার্থীতা বৈধ হয়। মেয়র প্রার্থীরা হলেন বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ আইয়ুব কুতুবী (এলডিপি/ছাতা), আলহাজ্ব মাহবুবুল আলম খোকা (আওয়ামীলীগ/নৌকা), আলহাজ্ব মাওলানা আবদুল হাকিম (ইসলামী ফ্রন্ট/মোমবাতি) ও আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন আহমদ (স্বতন্ত্র/ জগ)। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩ ব্লকে ২ জন করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে নার্গিস আকতার জমা না দেয়ায় মহিলা প্রার্থী রয়েছে ৫ জন। তাঁরা হলেন- ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে খোরশেদা বেগম (গ্যাসের চুলা) ও বেবি আকতার (কাঁচি)। ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে জাহানারা বেগম (কাঁচি) ও হাসনা আরা বেগম (ভ্যানিটি ব্যাগ)।
৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জান্নাতুল ফেরদৌস নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ৫৭ জন, তন্মধ্যে জমা দেন ৪৩ জন। তবে ৯নং ওয়ার্ডে সেকান্দর হোসেন সোহেলের প্রার্থীতা বয়স সংক্রান্ত জটিলতায় বাতিল হয়, ১৩ ডিসেম্বর ৪নং ওয়ার্ডের মাসুদুর রহমান প্রার্থীতা প্রত্যাহারে প্রার্থী থাকে ৪১ জন। তাঁরা হলেন-১নং ওয়ার্ডে সুলতান মাঈনুদ্দিন মোরশেদ (উট পাখি), আবুল কালাম আজাদ (পাঞ্জাবী), মোরশেদুল আলম (পানির বোতল), আবদুল করিম (টেবিল ল্যাম্প), ফৌজুল আজিম (ব্ল্যাক বোর্ড) ও অজয় দত্ত (ডালিম)। ২নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইউচুফ ভান্ডারী (পাঞ্জাবী), নুরুল ইসলাম চৌধুরী (পানির বোতল), কে এম হামিদ উদ্দিন হিরু (ডালিম), মো: নুরুল ইসলাম (টেবিল ল্যাম্প), ফজলুল কবির চৌধুরী (ব্ল্যাক বোর্ড), মোহাম্মদ মাসুদ (গাজর)ও আবদুস ছবুর (উট পাখি)। ৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন চৌধুরী (উট পাখি) ও বেলাল উদ্দীন (পাঞ্জাবী)। ৪নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল হালিম (উট পাখি), ছৈয়দুর রহমান (পাঞ্জাবী) ও নাছির উদ্দীন (ডালিম)। ৫নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মো: নুরুল কবির (উট পাখি), শাহ আলম (টেবিল ল্যাম্প), আবদুল আজিজ (ডালিম), আবুল কালাম (পাঞ্জাবী) ও মোহাম্মদ সেলিম (পানির বোতল)। ৬নং ওয়ার্ডে আবদুল হক (টেবিল ল্যাম্প), আবু জাফর (ডালিম), শাহাদাত হোসেন (পাঞ্জাবী) ও সরওয়ার ইসলাম (উট পাখি)। ৭নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর রবিউল হোসেন জসিম (পানির বোতল), মোজাম্মেল হক চৌধুরী (উট পাখি), নয়ন চৌধুরী (ডালিম), বাচা মিয়া (পাঞ্জাবী), ও দানু মিয়া (টেবিল ল্যাম্প)। ৮নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব (ডালিম), সিরাজুল ইসলাম (উট পাখি) ও আকতার উদ্দিন (পাঞ্জাবী)। ৯নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর খোরশেদ আলম সবুজ (টেবিল ল্যাম্প), লোকমান হাকিম (গাজর), শেখ মুজিবুর রহমান (ডালিম), জাফর আহমদ (উট পাখি), শাখাওয়াত হোসেন (ঢেঁড়শ) ও জসিম উদ্দিন (পাঞ্জাবী)।
২০০২ সালের ২৫ আগস্ট চন্দনাইশ মৌজাসহ উপজেলার ৩নং হারালা ইউনিয়ন সম্পূর্ণ, ২নং জোয়ারা ইউনিয়নের আংশিক ও গাছবাড়ীয়া মৌজাসহ ৮নং হাশিমপুর ইউনিয়নের অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত হয় ২৫ আগষ্ট চন্দনাইশ পৌরসভা। “খ” শ্রেণিতে উন্নত হয় ০১/০৮/২০০৫ইং তারিখে। পৌরসভার আয়তন ১৭.০৮ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। ভোটার সংখ্যা ২৫,৫৬০ জন। ভোট কেন্দ্র ১৬টি, বুথ-৮৩টি। প্রথম প্রশাসক ছিলেন তৎকালীন ইউএনও মোঃ এ কে এস মাহবুবুর রহমান। প্রথম নির্বাচন হয় ২০০৫ সালে, দ্বিতীয় নির্বাচন হয় ২০১১ সালে এবং এবারের বা তৃতীয় নির্বাচন হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ বুধবার। প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন আলহাজ্ব মোহাম্মদ আইয়ুব কুতুবী, দ্বিতীয়বারও (বর্তমান) তিনি নির্বাচিত হন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও এলডিপি দুই দলেরই প্রেস্টিজ ইস্যু। এলডিপির প্রেসিডেন্ট ও এ আসনের অপরাজিত জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ড. কর্ণেল (অব:) অলি আহমদ বীর বিক্রম’র দূর্গ বলে খ্যাত চন্দনাইশ পৌরসভায় এশিয়ার বৃহত্তম তথা সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সুসংগঠিত হচ্ছে। প্রার্থীরা ভোটারদের মনজয়ে বহুবিধ চেষ্টা ও কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ্ব মাহবুবুল আলম খোকা রাজনৈতিক দুঃসময়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাছাড়া অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক এর জ্যেষ্ঠ পুত্র হিসেবেও তিনি পারিবারিকভাবে সুপরিচিত। দক্ষ এবং মেধাবী বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর খ্যাতিও কম নেই। যে কারণে আওয়ামীলীগ এখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। জয়ের ব্যাপারে তাঁরা অনেকটা আশাবাদী। এলডিপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ আইয়ুব কুতুবী সৎ ও শান্ত বলে মনে করেন এলাকাবাসী। সহিংসতা রোধ করে সম্প্রীতি রক্ষা করতে চান। তিনি চন্দনাইশ থানা ও পৌরসভার স্থপতি ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম’র ভাইপো। এবার নির্বাচিত হলে তিনি মেয়রের মসনদে হ্যাট্রিক করবেন। এছাড়াও লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন আহমেদ ও ইসলামী ফ্রন্টের আলহাজ্ব মাওলানা আবদুল হাকিমের সাথে। সুন্নি জনতার ঘাটি বলে পরিচিত এ অঞ্চলে আলহাজ্ব মাওলানা আবদুল হাকিমেরও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে যথেষ্ট। জসিম উদ্দিনও দানবীর বলে পরিচিত। ধারণা করা হচ্ছে মেয়রসহ সকল পদে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে।
১নং ওয়ার্ডের নাছির উদ্দিন ও ৬নং ওয়ার্ডের রশিদ আহমদ ছাড়া পৌরসভার বর্তমানে দায়িত্বেরত সকল জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সংরক্ষিতসহ সকল কাউন্সিলর পদে বর্তমানদের সাথে মূল ভোটযুদ্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছেন অনেকে। রিটার্নিং অফিসার ও ইউএনও সনজীদা শরমিন জানান, নির্বাচন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ হবে। কোন অনিয়ম চলবে না। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন অফিসার আবদুল লতিফ শেখ বলেন, যথানিয়মে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোবারক হোসেন বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবেই। নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ম মোতাবেক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রার্থীরাই ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করে কেন্দ্রে আনবেন। তবে জোর জবরদস্তি চলবে না। চন্দনাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, পুলিশ প্রশাসন অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সবোর্চ্চ সতর্ক থাকবে। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, “আঁরা গম মাইনস্যরে ভোট দিয়ুম” (আমরা ভালো মানুষকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো। প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয়ে দিন রাত প্রচারনা চালাচ্ছেন।