তেলের দরপতনে ধস ৫ দেশের অর্থনীতি

0

অর্থবাণিজ্য ডেস্ক :: অব্যাহত দরপতনে বিধ্বস্ত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার। এর নেতিবাচক প্রভাবে ধসে যেতে শুরু করেছে উৎপাদক দেশগুলোর অর্থনীতি। সিএনএনএর এক খবরে বলা হচ্ছে, ব্যাপক বাজেট উদ্বৃত্ত থাকা এসব দেশের অর্থনীতি এখন ঘাটতিতে পরিণত হচ্ছে। দেশগুলোর অর্থের ‘গাম্ভীর্যতা’ পরিবর্তন হচ্ছে উদার সামাজিক কর্মসূচিতে।

গত বছরের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয় ১০০ ডলারের উপরে। বর্তমানে তা ৩৭ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বাজারে নতুন তেল সরবরাহের ঘোষণা ও ওপেকের ‘অবহেলায়’ আগামীতে এ বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। এদিকে চীনসহ অন্যান্য দেশের আমদানিতে ধীরগতিও এতে ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তেলের দরপতনে অর্থনীতি ধসে যাচ্ছে- এমন দেশগুলোর মধ্য খারাপ অবস্থানে রয়েছে ভেনেজুয়েলা, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া, রাশিয়া ও ইরাক। সম্প্রতি এ ৫ দেশে তেলের নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেছে সিএনএন।

ভেনেজুয়েলা

তেল রিজার্ভে শীর্ষ দেশ হচ্ছে ভেনেজুয়েলা। পেনশন দেওয়া থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাত, সামাজিক সংস্কার, আবাসন ভর্তুকি সবকিছুই তেলের অর্থ দিয়েই পূরণ করে সরকার। কিন্তু বর্তমানে দেশটির অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে। এ বছরে ভেনেজুয়েলায় পণ্যের দাম বেড়েছে ১৫০ শতাংশের উপরে। আগামী বছরে এ হার ২০০ শতাংশ পার হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-বিল পরিশোধ, সঠিক সময়ে খাদ্য ও নিত্য পণ্য সরবরাহ করতেও হিমশিম খাচ্ছে সরকার। অর্থনৈতিক এ অবনতি ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক অবস্থাতেও অস্থিরতা তৈরি করছে। এ মাসের শুরুতে গত ১৭ বছরে প্রথমবারের মতো বিরোধী দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করেছে।

সৌদি আরব

সৌদি আরবের মোট রাজস্ব আয়ের ৭৫ শতাংশ আসে তেল থেকে। কিন্তু পণ্যটির অব্যাহত দরপতনের ফলে এখন ধসে যেতে বসেছে এখানকার অর্থনীতি। এ বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলারের ঘাটতি বাজেটের মুখে পড়েছে দেশটি। এ অবস্থার কারণে আগামী বছরের জন্য কঠোর পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিট জাকস নামের এক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বিশ্ববাজারে তেলের এই সর্বনিম্ন দাম কখনই সৌদি আরবের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না। এজন্য দাম বাড়াতে হবে।

নাইজেরিয়া

আফ্রিকার বৃহৎ তেল উৎপাদক দেশ নাইজেরিয়া। বর্তমানে দেশটি অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। দেশটির মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশ এবং রাজস্ব আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে এই তেল থেকে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে জানানো হয়েছে, কিছু কিছু অঞ্চলে মাসের টাকা মাসে পাচ্ছেন না সরকারি চাকরিজীবীরা। জ্বালানি সংকটে ভুগছে দেশটি।

রাশিয়া

তেল ও গ্যাস রপ্তানি থেকে অর্ধেক রাজস্ব আসে রাশিয়ার। গত দেড় বছরে তেলের বাজারে ধস ও ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ দেশটিকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৫০ ডলার হলে সাধারণত রাশিয়ার বাজেট ঠিক থাকে। কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৭ ডলার। আইএমএফের এক পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর রাশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৮ শতাংশ এবং আগামী বছর আরও ০.৬ শতাংশ কমতে পারে।

ইরাক

ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএসের বিরুদ্ধে যখন যুদ্ধ করার জন্য অর্থ দরকার, তখন তেলের দরপতন ইরাকের অর্থনীতিকে একেবারেই বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। এ বছর রেকর্ড পরিমাণ তেল উত্তোলন করেছে দেশটি। কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধি বর্তমান বাজারে নিম্নতর দরকে পুষিয়ে দিতে পারেনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.