রুনা লায়লার অর্ধশত বছর সঙ্গীত জীবনে

0

সঙ্গীত দুনিয়ায় এক নামেই যার পরিচয় সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা ।ক্যারিয়ারের ৫০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেইমে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ কনসার্ট। ‘গোল্ডেন জুবিলি সেলিব্রেশন অব রুনা লায়লা’ শীর্ষক কনসার্টে জীবনের সোনালি দিনের গানগুলো গাইবেন এই মহাতারকা। এ কনসার্টে রুনা লায়লার সঙ্গে গাইবেন ভারতীয় জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কেকে। পাশাপাশি থাকছেন পাকিস্তানী অভিনেতা ফাওয়াদ। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন নাভিদ মাহবুব ও সোনিয়া রেজা।
সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর পার করে আসা এ মহাতারকা কিছুদিন আগেই ভারতের রেডিও মিরচি থেকে পেয়েছেন ‘চির নবীন সুরশ্রী-২০১৪’ পুরস্কার। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ৫০ বছর পথ পাড়ি দেয়ার পরও রুনা লায়লার গায়কী আছে ঠিক আগের মতোই। একটুও যেন নড়চড় নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রে তো বটেই, মঞ্চে এখনও একইভাবে রুনা লায়লার গানে আনন্দিত ও আবেগাপ্লুত হন শ্রোতা-দর্শক।
সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লা বিভিন্ন ভাষায় গান গাওয়ার পাশাপাশি তার গাওয়া গজল গানও উপমহাদেশের শ্রোতাদের কাছে সেই সময়েই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। কিংবদন্তি এ শিল্পী গানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তানে দু’বার নিগার পুরস্কার, ক্রিটিক্স পুরস্কার, গ্র্যাজুয়ের পুরস্কার ও জাতীয় সঙ্গীত পরিষদ স্বর্ণপদক পেয়েছেন। ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গাল পুরস্কার। বাংলাদেশে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন রুনা লায়লা। এছাড়াও দেশ-বিদেশের বেশকিছু সঙ্গীত প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করেছেন রুনা। এদিকে, এ পর্যায়ে এসেও রুনা লায়লা স্টেজে এবং প্লে-ব্যাকে সরব। তবে খুব বেছে বেছে কাজ করছেন তিনি বরাবরের মতো।
চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সঙ্গীতসহ গজল প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তার পদচারণা। তাছাড়া গায়িকা হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুনাম কুঁড়িয়েছেন তিনি। প্রশংসা, জনপ্রিয়তা, অর্জন ও সম্মাননায় কেটেছে অনেকগুলো বছর। ষাটের দশকেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উপমহাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে আবির্ভাব করেন তিনি। এই কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সম্প্রতি সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর পূর্ণ করেছেন । এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসেও যেন রুনা লায়লার তুলনা হয় না কারো সাথে। নিজের বর্ণাঢ্যেএই ক্যারিয়ারে প্রায় ১০ হাজার গান গেয়েছেন এ বিশ্বনন্দিত তারকা। গানের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের কাছে ফ্যাশন আইকনেও পরিণত হয়েছেন তিনি। তাইতো জনপ্রিয়তা, সফলতা, প্রাপ্তির সঙ্গে এতটা বছর পাড়ি দিয়ে তিনি নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য কমসংখ্যক মানুষেরই জোটে।

পূর্ব-পাকিস্তানের সিলেট জেলায় ১৯৫২ সালের ১৭ নবভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এ গায়িকা। একেবারে শিশু বয়সে নাচ শিখতেন তিনি। বাবা এমদাদ আলী ছিলেন উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তা। থাকতেন পাকিস্তানের করাচিতে। সেখানে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে মেয়েকে নাচ শেখার জন্য ভর্তি করেন মা আমিনা লায়লা। এ প্রতিষ্ঠানে চার বছর নাচ শিখেছেন তিনি। শিক্ষক ছিলেন আফরোজা বুলবুল। রুনা তাঁর কাছ থেকে শিখেছেন কত্থক আর ভরতনাট্যম।

এক সাক্ষাতকারে রুনা লায়লা বলেন, এখন আর সে সব মনে নেই। তবে মঞ্চে যখন গান করি, নিজের অজান্তেই তখন নাচের কিছু মুদ্রা চলে আসে। বড় বোন দিনা লায়লা গান শিখতেন। বাসায় তাঁকে গান শেখাতে আসতেন একজন ওস্তাদ। বোন যখন গান করতেন, তাঁর আশপাশেই থাকতেন। ওস্তাদজী বোনকে যা শেখাচ্ছেন, তা তিনি শুনে শুনেই শিখে নিতেন। পরে গুনগুন করে গাইতেন। মেয়ের প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বাবা-মা। গানে সম্ভাবনা বুঝতে পেরে তাঁরা পরে মেয়েকে গান শেখানো শুরু করেন। আবদুল কাদের পিয়ারাঙ ও ওস্তাদ হাবিবুদ্দিন খানের কাছে গানের তালিম নেন। তখন তিনি করাচিতে থাকতেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে গান শুরু করেন তিনি।

করাচিতে এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে রুনা লায়লার শুরু হয় গান গাওয়া। এটি আয়োজন করেছিল ঢাকা ওল্ড বয়েজ এ্যাসোসিয়েশন। সেদিন গান শুনে সবাই মুগ্ধ হন। এরপর মাত্র সাড়ে ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ ছবির মাধ্যমে প্লে-ব্যাকের খাতায় নাম লেখান। দ্বিতীয় গানটিও একই ছবির। এ গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলান শর্মিলী আহমেদ। রুনা লায়লা প্রথম বাংলা গান রেকর্ডিং করেন পাকিস্তান রেডিওর ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে। দেবু ভট্টাচার্যের সুর করা গান দুটি ছিল ‘নোটন নোটন পায়রাগুলো’ আর ‘আমি নদীর মতো পথ ঘুরে’।

গত শতকের ষাটের দশকে বাংলা ছবিতে গান করার জন্য আমন্ত্রণ পান রুনা। চিত্রপরিচালক নজরুল ইসলাম আর সঙ্গীত পরিচালক সুবল দাস ‘স্বরলিপি’ ছবির গান রেকর্ডিং করতে যান লাহোরে। তাঁরা ছবির একটি গান রুনাকে দিয়ে গাওয়ানোর পরিকল্পনা করেন। লাহোরের বারী স্টুডিওতে রেকর্ডিং করা হয় গানটি। গানটির শিরোনাম ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’। একই গানে আরও কণ্ঠ দিয়েছিলেন মাহমুদুননবী।

বাংলা, হিন্দি ও উর্দু ছাড়াও তিনি ১৭টি ভাষায় গান করেছেন। নিজের জীবনের কিছু গল্প নিয়ে তৈরি ‘শিল্পী’ নামে একটি ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি।

১৯৭৪ সালে ‘এক ছে বারকার এক’ ছবির মধ্য দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক শুরু হয় তার। একই বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে প্রথম প্লে-ব্যাক করেন। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন ছবিতে একের পর এক সুপারহিট গান উপহার দিতে থাকেন রুনা। বাংলা, হিন্দি, উর্দু গানে নিজেকে অন্য রকম উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। ‘দামা দাম মাস্ত কালান্দার’ গানটি রুনা লায়লাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এ গানটি পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেরই গানপাগল শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.