লুইস বুনুয়েল, যে মানুষ সিনেমার…

0

বিনোদন ডেস্কঃ আমি মৃত্যুকে ভয় পাইনা, তবে হোটেল রুমের একাকি মৃত্যুকে আমি ভয় পাই। দেখা গেলো আমি মারা গেছি, আমার ব্যাগটা তখনো খোলা, টেবিলের উপর শুটিংয়ের স্ক্রিপ্ট ছড়িয়ে আছে! কে আমার চোখের পাতা শেষবারের মত বন্ধ করে দিবে, সেটা জানার খুব ইচ্ছা আমার’। নিজের মৃত্যু নিয়ে এভাবেই জীবনের শেষ সময়ে কোনো এক জন্মদিনে বলছিলেন পৃথিবীতে সিনেমা নির্মাতাদের শ্রেষ্ঠস্থানীয় এক নির্মাতা, সুররিয়ালিজমের শ্রষ্ঠা লুইস বুনুয়েল! জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা।   

বুনুয়েল জন্মেছিলেন স্পেনের টিরওয়েল প্রদেশের ছোট শহর ক্যালান্ডা’র এক ধনী পরিবারে, ১৯০০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু পারিবারিক কারণে মাত্র সাড়ে চার মাস বয়সে বুনুয়েল পরিবারকে যেতে হয় স্পেনের অন্যতম বড়ো শহর জারাগোজাতে। একটু বড়ো হলে এখানেই একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হন বুনুয়েল। স্কুলে তাকে খ্রিস্টান ধর্মের কঠিন অনুশাসনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিলো। আবাসিক স্কুলে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, যা তার শিশু মনে খুব বড়ো ধরনের প্রভাব ফেলে। আর সেই স্কুলে যাননি তিনি। তার জেদের কারণে পরবর্তীতে স্থানীয় একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বাকি দুই বছরে তিনি মাধ্যমিক পড়া শেষ করেন। ১৯১৭ সালে মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাগ্রোনমিতে ভর্তি হন বুনুয়েল। যদিও এই বিষয়ে পড়া হয়ে উঠে না তার। অনেক টানা হেঁচড়ার পর ভর্তি হন দর্শনে।আর তখনই পরিচয় হয় ফেদরোক গার্সিয়া লোকা, চিত্রশিল্পী সালভাদর দালির সঙ্গে।

এরপর নিয়মিত সিনেমা হলে যাওয়ার ছিল তার অভ্যেস। যে সিনেমায় আসতো তিনি আগ্রহ নিয়ে দেখতেন। এমন ঘটনাও নাকি হয়েছে যে তিনি দিনে কখনো কখনো তিনটি সিনেমাও হলে একসঙ্গে দেখেছেন। এই আগ্রহের ফলে অবশ্য বুনুয়েল-এর লাভ হয়েছিলো; তিনি ফ্রান্সের সিনেমার নানা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকেন। আর বাড়তে থাকে সিনেমা নির্মাণের আগ্রহ!

প্রচুর সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা থাকলেও চলচ্চিত্র নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক তেমন কোনো শিক্ষা ছিল না তার। ফলে তিনি ইচ্ছে পোষণ করেন-চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্তর পড়াশোনার, ভর্তিও হন জ্যঁ অ্যাপস্টেইন পরিচালিত বেসরকারি একটি চলচ্চিত্র স্কুলে। তারপরেই সিনেমার দোয়ার খুলে যায় তার। শিক্ষকের অ্যাসিস্টও করেন তিনি।

‘ল্যান্ড উইদাউট ব্রেড’ ইস বুনুয়েলের প্রথম বাস্তববাদি সিনেমা। যদিও এটা ছিল একটি তথ্যচিত্র। সাতাশ মিনিটের একটি রাজনৈতিক সন্দর্ভও বলা যায় এটিকে। এ ছবি নির্মাণের পূর্বেই বুনুয়েল অবশ্য ইউরোপীয় চলচ্চিত্রের ‘তরুণ তুর্কি’ বলে পরিচিতি লাভ করেছিলেন ‘আন্দালুসিয়ার কুকুর’ সিনেমাটি নির্মাণ করে। তবে সেই বুনুয়েল ছিলেন পরাবাস্তববাদী চলচ্চিত্রকার। আর এরপর থেকেই তার চলচ্চিত্রের ভাষা আরো তীক্ষ্ণ থেকে আরো তীক্ষ্ণ হতে থাকে।

কখনো ফ্রান্সে, কখনোবা স্পেনে, আবার কখনো আমেরিকায়, কিংবা কখনো মেক্সিকোতে। পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনোবা রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে তাড়ানো হয়েছে সিনেমায় শুধুমাত্র তার সিনেমায় বিশ্ব রাজনীতির নোংরামিকে তোলে ধরার জন্য।

তার সমকালীন সময়ে কারসাথে তার পরিচয় ছিলো না? লোরকা, পাবলো পিকাসো, চার্লি চ্যাপলিন, কার্লোস ফুয়েন্তেস থেকে শুরু করে নোবেলজয়ী লেখক অক্তাবিও পাজ, হোসে লুইস, মিগুয়েল লিটিন। প্রায় সবাই ছিলেন তার বন্ধুস্থানীয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.