সিটি নির্বাচন ও চলমান রাজনীতি

আবছার উদ্দিন অলি

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ.জ.ম নাছির উদ্দিন হাতি প্রতীক নিয়ে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ৭১৯টি ভোট কেন্দ্রে ভোটার ছিল ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম কমলা লেবু প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ১৩৭ ভোট। সবকটি কেন্দ্রে প্রাপ্ত ফলাফলে ১ লাখ ৭১ হাজার ২২৪ ভোটের ব্যবধানে এম মনজুর আলমকে হারিয়ে নগর পিতা হলেন আজম নাছির উদ্দিন। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৩৬টি, বিএনপি ৪টি, জামাত ১টি এবং ১৪টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১১টি আওয়ামী লীগ, ২টি বিএনপি, ১টি জামাত পেয়েছে। নবনির্বাচিত মেয়র, কাউন্সিলর মহিলা কাউন্সিলরদের অভিনন্দন। তাদের যোগ্য নেতৃত্বে পরিচালিত হবে সিটি কর্পোরেশন। নগরবাসী পাবে নাগরিক সুবিধা। চট্টগ্রামবাসীর সকল চাওয়া পাওয়া সুযোগ সুবিধা দেখভাল করবেন এইসব জনপ্রতিনিধিরা। অতি উৎসাহি ও সুযোগ সন্ধানীদের কাছ থেকে নির্বাচিতদের সাবধান থাকতে হবে।
নতুন মেয়রের ৩৬ দফা ইশতেহার বাস্তবায়নে যাত্রা শুর“ হলো। ‘স্বপ্নের মেগাসিটি গড়তে চাই। জলবদ্ধতামুক্ত জনবান্ধব চট্টগ্রাম’ শিরোনামে ইশতেহারে ছিল ডিজিটাল মেগাসিটি ও গ্রীণ সিটি গড়ে তোলা, কর্নফুলী নদী রক্ষা, জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন খাল খনন, সম্প্রসারণ, সুইচ গেইট নির্মাণ, ডেজিং করা পরি”ছন্নতার জন্য সেন্টাল সুয়ারেজ প্ল্যান ও আধুনিক ডাষ্টবিন ¯’াপন, গরীবদের জন্য চসিকের উদ্যোগে ফ্ল্যাট নির্মান, শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ভাড়া হ্রাসসহ নানা প্রতিশ্র“তির বাস্তবায়ন করার নতুন মেয়রের চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত আবদুচ ছালাম আবারো দু বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন, মেয়র হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন নির্বাচিত হয়েছেন। সবমিলিয়ে যোগফল পজিটিভ। তাই এবার নগর বাসী আশা করছেন কাংক্ষিত উন্নয়ন হবে চট্টগ্রামের। আটকে পড়া কাজের গতিশীলতা বাড়বে বরাদ্দ পাবে সিটি কর্পোরেশন। দেশের উন্নয়নের সার্থে দেশের স্বার্থে বিএনপির উচিত আগামী ৪টি বছর চুপ করে বসে থেকে দলকে সংগঠিত করা। সরকারের উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা করা। এটি না করে যদি সহিংসতার পথ বেছে নেয় তাহলে বিএনপির জন্য এটি হবে আত্মহত্যা। অন্যদিকে সরকারের উচিত হবে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা, ধর-পাকর বন্ধ করা, বিএনপিকে গণতান্ত্রিকভাবে তাদের দলীয় কর্মসূচী পালন করতে দেয়া। এতে করে দুই দলের মধ্যে যে দূরত্ব তা দুর হবে। দেশের উন্নয়ন হবে। মানুষ শান্তিতে থাকবে। সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিযোগ ছিল কেন্দ্র দখল, জাল ভোট এজেন্ট বের করে দেওয়া, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, নির্বাচন কার্যক্রমে বাঁধা দেওয়া তবুও দুপুর ১২টায় বিএনপির নির্বাচন বর্জন সঠিক ছিল না বলে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। কেননা ১২টার মধ্যে প্রাপ্ত ভোটে বিএনপি ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩ মেয়র প্রার্থীরা সবাই ৩ লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন। তাহলে ৫% ভোট পেয়েছে এটির যুক্তি কিভাবে দেখবেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ।
সরকার নির্বাচনে চাপ সৃষ্টি করলেও মিডিয়া সজাগ ছিল। দেশী বিদেশী পর্যবেক্ষক ছিল। তবে কেন বিএনপি বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন করলো না। অভিযোগ রয়েছে নির্বাচন বর্জন ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। কেউ কেউ বলেন এছাড়া কেন্দ্রে কেন্দ্রে দলের নেতা কর্মীদের উপ¯ি’ত থাকার কথা থাকলে তারা উপ¯ি’ত ছিলেন না। এতে বুঝা যায় সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং দলীয় নির্দেশ না মানার কারণে ব্যর্থ চেষ্টা হিসেবে বিএনপির ভোট বর্জন। কিš‘ এখন বিএনপি কি করবেন? আন্দোলন, সহিংসতা না কি দল গোছানোর কাজটি করবেন। বিএনপি ভেবে ছিল জিতলে বলবে সরকারের জনপ্রিয়তা শুন্যের কোটায়, হারলে বলতো কারচুপি এবং জিতলেও লাভ হারালেও লাভ কিš‘ এর কোনটিই তো এখন বলতে পারছেন না? তাহলে চলমান রাজনীতির গন্তব্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? বিএনপি নেতাকর্মীরা কি দিক নির্দেশনা পেলো? এতে আশায় চেয়ে হতাশা বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যোগ-বিয়োগ করে সিদ্ধান্ত মিলাতে পারছেনা। এতে অনেকে দল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ভোট নিয়ে আলোচনা সমালোচনা যাই থাকুক, ৫ বছরের জন্য ৩ সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩জন মেয়র নগর পরিচালনা করবেন। এছাড়াও চট্টগ্রামের মেয়রকে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা দিতে চট্টগ্রাম বাসী প্রধান মন্ত্রীর বরাবরে আহবান জানিয়েছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.