রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসনের আইন শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত

জিয়াউল হক, রাঙমাাটি  :  রাঙামাটি মার্চ মাসে ৩টি চুরি, ৩টি খুন, মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ১৪টি, নারী ও শিশু বিষয়ক ৬টি এবং অন্যন্য ১৪টি মামলা সংগঠিত হয়েছে। এছাড়া এপ্রিল মাসে চুরি ৬টি, খুন ২টি, মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ১৫টি, নারীও শিশু বিষয়ক ৩টি, সিথিল চুরি ৯টি এবং অন্যান্য ১টি মামলা সংগঠিত হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আবু শাহেদ চৌধুরী গত দুই মাসের রাঙামাটির অপরাধচিত্র তুলে ধরেন। মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন’র সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সাঈদ তারেক হাসান, পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, রাঙামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট আবু শাহেদ চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য অমিত চাকমা রাজুসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা, সুুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও সংবাদকর্মীবৃন্দ।

জেলা বিএনপির সভাপতি শাহ আলম বলেন, ইউপি নির্বাচন যে কারণে পেছানো হয়েছে তা এখনো সমাধান হয়নি। এখনো বিভিন্ন স্থানে হামলা ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। তাই আমরা চাই অতিদ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাদল কান্তি দে বলেন, রাঙামাটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড নেই, বিশেষ করে নারী ওয়ার্ডে বেড বাড়ানো জরুরি। এছাড়া রাঙামাটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় রোগী পরিবহনের সমস্যা হচ্ছে।

রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জমির উদ্দিন বলেন, রাঙামাটি জেলার আইন শৃঙ্খলা আমরা যতই বলি ঠিক আছে কিন্তু বাস্তবে এটি ঠিক নেই। তিনি পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে কিছু লোক অপরাধ জগৎ এর সাথে যুক্ত আছেন দাবি করে বলেন, রাঙামাটির বিভিন্ন পরিস্থিতি উপলব্ধি করে দেখা যচ্ছে প্রশাসনের অন্তর্ভূক্ত থানার কিছু কতিপয় কিছু লোক অপারাধ জগৎ এর সাথে যুক্ত আছে। তাই অচিরে এই সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি আহ্বান জানান।

মাদক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, রাঙামাটিতে বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসা বেড়ে গেছে। এটি প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন অপারেশন করতে পারি কিন্তু সত্য এই যে আমরা প্রতিরোধ এর জন্য লোকবল আছেন মাত্র ২ জন। যা দিয়ে আমরা কোন কিছু করতে পারি না। এছাড়া সভায় বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ বিশেষ করে বিড়াইছড়ি, জুরাছড়ি, লংগদুর এলাকায় সঠিক ভাবে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে জনগণের দুর্ভোগ হচ্ছে বলে তারা জানান। সামনে ইউপি নিবার্চন কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় নির্বাচনে সমস্যা দেখা যাবে বলে তারা সভায় জানান।

কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন বলেন, কাপ্তাউ উপজেলায় কিছু দিন ধরে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ দেখা যাচ্ছে, তা ছাড়া কাপ্তাই দিয়ে হ্রদের মাছ নেওয়া হয় বলে সেদিকে নৌ পুলিশের ফাঁিড় বসানোর জন্য আহ্বান করা হয়। জেলা পরিষদের সদস্য অমিত চাকমা রাজু বলেন, আমরা রাঙামাটি হাসপাতালের সাবির্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, রাঙামাটি শহরের যে মাদক বিষয়ক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করছি। এছাড়া শহরের তবলছড়ি এলাকার ব্রিজটিতে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করে দিন রাত কাজ করার মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শেষ করার আহ্বান জানাই। তিনি আরো বলেন, শহরের মূল কেন্দ্র বনরূপার সিএফ এর দেওয়াল সরিয়ে আমাদেরকে একটি জায়গা করে দিলে আমরা সেখানে সিএনজি রাখার জন্য একটি ব্যবস্থা করতে পারবো। কারণ বর্তমানে এই স্থানটিতে বেশির ভাগ সময়ে যানজট লেগে থাকে। তিনি বলেন, রাঙামাটিতে আসা বিভিন্ন ট্যুরিস্টদের শহরের প্রবেশ পথ থেকে মাইক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো হয়। কারণ এতে করে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ রোগীদের প্রতিনিয়ত সমস্যা হয়।

পুলিশ সুপার সাঈদ তারেক হাসান বলেন, ইউপি নির্বাচন সামনে কিন্তু দেখা যাচ্ছে রাঙামাটি বিভিন্ন উপজেলাসহ ইউনিয়নে যোগাযোগ করা সম্ভব করা যাচ্ছে না। যার একটি মাত্র কারণ কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে গেছে। তাই নির্বাচন এর বিভিন্ন জিনিসপত্র পাঠাতে আমাদের সমস্যা হবে। এটির জন্য অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাঙামাটি শহরের মাদক বেড়ে গেছে তাই এই মাদক প্রতিরোধে অভিযান চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন বলেন, রাঙামাটিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা উন্নত হয়েছে। বর্তমানে তেমন একটা সমস্যা নেই। কিন্তু এই বলে আমরা বসে থাকলে হবে না। প্রশাসন সব সময় নজর রাখছে কোন প্রকার অপরাধ যাতে রাঙামাটিতে সংগঠিত না হয়। তিনি আরো বলেন, ইউপি নিবার্চন সঠিকভাবে করার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়া আগামী ১২ মে মধ্যরাত থেকে কপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ থাকবে তাই সকলে প্রচেষ্টায় আমরা চেষ্টা করবো যাতে কাপ্তাই হ্রদের মাছ পাচার হতে না পারে। তিনি জেলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য সকলের সাহায্য কামনা করেন।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.