মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : ‘ঝুপড়ি ঘরের ফাঁক গলে বাইরের প্রায় সবই দেখা যায়। এই ঘরের মধ্যেই এখন দিনরাতের পুরোটা সময় কাটে বৃদ্ধা আখিরন নেসার (৭০)। সমাজপতিদের কুলরক্ষার বিচারে তিনি এখন সমাজচ্যুত, একঘরে! তার অপরাধ, তিনি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে কাজলী বেগমের (২২) ধর্ষণের বিচার চেয়েছেন!
স্থানীয়ভাবে বিচার না পেয়ে মামলা করায় সমাজপতিরা তাকে ‘গৃহবন্দি’ করেছেন। গ্রামের লোকজন, এমনকি পাড়া-প্রতিবেশীদেরও তার সঙ্গে মিশতে বা কথা বলতে বারণ করা হয়েছে। গ্রামের দোকানদারদের তার কাছে পণ্য বিক্রিতেও আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রভাবশালীরা তাকে ভিটে থেকে উচ্ছেদ করাসহ নানা রকম হুমকি দিচ্ছে।
খবর পেয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের সঙ্গে সরাসরি কথা হয় ওই অভাগী মায়ের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের দুপুরে মহম্মদপুর উপজেলার সূর্যকুন্ডু গ্রামে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কাজলীকে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এলাকার বখাটে সুজন শেখ (১৮)। সে ওই গ্রামের মোহন শেখের ছেলে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ আদালতে মামলা দায়ের করেন বৃদ্ধা আখিরন নেসা। আর এতেই তিনি কথিত সমাজপতিদের রোষানলে পড়েন।
আখিরন নেসা রাইজংবিডিকে জানান, তার প্রতিবন্ধী মেয়ে ধর্ষিতা হওয়ার পর গ্রামের লোকজন ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে তাকে বিষয়টি চেপে যাওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। পরে তিনি মামলা করলে চাপ আরো বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তাকে উচ্ছেদের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে একঘরে করা হয়।
ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মাগুরা জেলা শাখাসহ বিভিন্ন মানবতাবাদী সংগঠন বখাটে ধর্ষকের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ভুক্তভোগীকে চিকিৎসা ও আইনি সহায়তাও দিয়ে আসছে সংগঠনটি।
মাগুরা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী মমতাজ বেগম রাইজিংবিডিকে জানান, ঘটনার পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধী মেয়েটির পরিবারের ওপর মামলা তুলে নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। তাদের গ্রামে একঘরে করা হয়েছে। এতে পরিবারটি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।
মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, ঘটনার পর থেকে সুজন পলাতক ছিল। তাকে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।