ভুল চোখে ইনজেকশন!

0

 কাগজে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে এবার ইনজেকশনটি পুশ করতে হবে বাঁ চোখে। কিন্তু ডাক্তার পুশ করলেন ডান চোখে। যে চোখে এক সপ্তাহ আগেও ওই একই ইনজেকশন দেয়া হয়। ইনজেকশন পুশ শেষে নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে রোগী বের হয়ে আসলে বিষয়টি প্রথম নজরে আসে রোগীর পরিবারেরই এক সদস্যের। চোখের ব্যান্ডেজ দেখে বিষয়টি টের পান তিনি। সাথে সাথে বিষয়টি জানানো হলেও প্রথমদিকে ঠিক চোখেই ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে বলে দাবি করেন ডাক্তার। কিন্তু কাগজপত্র দেখে অবশেষে স্বীকার করেন ভুল করে ভুল চোখেই ইনজেকশন পুশ করেছেন তিনি!

নগরীর শেভরন আই হসপিটাল ও রিসার্চ সেন্টারের চিকিৎসক ডা. এম দেলোয়ার হোসেন গতকাল এ ঘটনা ঘটান। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী হলেন দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকার (১নং সড়ক) হোসনে আরা বেগম। তিনি মৃত সুজায়েত উল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী। ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা জানান, রক্তক্ষরণজনিত কারণে চোখে দেখতে সমস্যা হওয়ায় প্রথম দফায় গত ১৭ মে হোসনে আরা বেগমকে নগরীর শেভরন আই হসপিটাল ও রিসার্চ সেন্টারের চক্ষু চিকিৎসক ডা. এম দেলোয়ার হোসেনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। দেখার পর রোগীর চোখে লুসেনটিস নামে একটি ইনজেকশন পুশ করার পরামর্শ দেন ডাক্তার দেলোয়ার। মাঝে এক সপ্তাহ বাদ দিয়ে এক চোখে একটি করে ইনজেকশন পুশ করার কথা বলেন তিনি। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডান চোখে পুশ করলে পরের সপ্তাহে বাঁ চোখে পুশ করার কথা বলা হয়। ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশনেও এর সত্যতা পাওয়া যায়।

সে হিসেবে গত ১৯ মে প্রথম দফায় রোগীর ডান চোখে ইনজেকশনটি পুশ করা হয়। ডাক্তারের পরামর্শ পত্র (প্রেসক্রিপশন) অনুযায়ী পরের সপ্তাহে ইনজেকশনটি বাঁ চোখে পুশ করার কথা। কিন্তু গতকাল (২৫ মে) ডাক্তার ইনজেকশন পুশ করেন ঠিকই, তবে বাঁ চোখে নয়; ডান চোখে। যেটিতে আগের সপ্তাহেও ইনজেকশনটি পুশ করা হয়েছিল।

ভুক্তভোগী রোগীর ছেলে ওমর ফারুক চৌধুরী সবুজ আজাদীকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে ডান চোখে ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল। এবার (সোমবার) বাম চোখে ইনজেকশন দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ডান চোখে। এ নিয়ে পরপর ডান চোখে দুইবার ইনজেকশন দেয়ায় ব্যথায় মা কাতরাচ্ছে। মায়ের চোখে অসহ্য যন্ত্রণা করছে।

ডাক্তারের এমন কাণ্ডে তাঁর মা স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন দাবি করে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, শুধু মা নয়, এ ঘটনায় আমাদের পরিবারের সবাই স্তম্ভিত। ভুল চোখে ইনজেকশন পুশের বিষয়টি জানার পর থেকে মা তো কোন কথাই বলছেন না। প্রেসক্রিপশন নিজে লিখলেও ইনজেকশন পুশের আগে ওই ডাক্তার একবারের জন্যও কাগজ দেখার প্রয়োজন মনে করেননি। ডাক্তারদের এমন নির্দয় অবহেলা এখন প্রতিনিয়তই ঘটছে। আর রোগী ও স্বজনদের এর মাশুল গুনতে হয়। যা মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের অপচিকিৎসায় জড়িত ডাক্তারদের শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে ভুলের কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে ভয়ের বা ক্ষতির কোন কারণ নেই বলে দাবি করেছেন ডা. এম দেলোয়ার হোসেন। যোগাযোগ করা হলে দেলোয়ার হোসেন আজাদীকে বলেন, ‘বাম চোখের জায়গায় ভুলে ডান চোখে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। দুটোতেই ইনজেকশন দিতে হবে। তাই এতে ক্ষতির কিছু নেই।’

নিজের সহকারীর কারণে এমন ভুল হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ভুল হলেও ভয়ের কোন কারণ নেই। সোমবার পুশ করা ইনজেকশনের টাকা রোগীর পরিবারকে ফেরত দেয়া হয়েছে বলেও জানান ডা. দেলোয়ার।

ইনজেকশনটি পুশ করতে প্রতিবার ২৬ হাজার টাকা প্রয়োজন হয় বলে ডাক্তার ও রোগীর পরিবার নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ক্ষতির মাত্রা যাই হোক এ ঘটনাকে ডাক্তারের চরম অসতর্কতা ও অবহেলা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ডাক্তাররা এখন খুব বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়েছেন। যার দরুণ ডাক্তারদের মাঝে অল্প সময়ে অতিরিক্ত রোগী দেখার বা অপারেশন করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তারা নিজের লেখা প্রেসক্রিপশনগুলোও ঠিকমতো পড়ার সময় পান না। এক্ষেত্রে কাগজে (প্রেসক্রিপশনে) একবার চোখ বুলালে এমন ঘটনা কিছুতেই ঘটতো না দাবি করে এর সবকিছুর মূলে কম সময়ে বেশি টাকা আয়ের প্রবণতাই দায়ী বলে মন্তব্য করেন তারা।

এ ঘটনাকে ডাক্তারের অবহেলা হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী। এটিকে অনৈতিক ও শাস্তিযোগ্য হিসেবে অভিহিত করে এ ধরনের ঘটনার কারণে ডাক্তারদের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আর রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ করে অপারেশন বা ইনজেকশন পুশের সময় ডাক্তারদের আরো সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহবায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান। ডাক্তারদের এরকম অসতর্ক হওয়া ঠিক না বলেও মন্তব্য করেন এই প্রবীণ চিকিৎসক।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.