চন্দনাইশে ২১ বছরে সেতু নির্মাণ শেষ হলেও উদ্বোধন হয়নি

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ : উপজেলার সীমান্তবর্তী বৈলতলী এলাকায় শঙ্খ নদীর উপর খোদার হাট সেতুর উন্নয়ন কাজ অবশেষে গত ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়ে চলতি বছরের প্রথম দিকে শেষ হয়। কিন্তু ব্রীজ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ১ বছর ২ মাস পরও উদ্বোধন হচ্ছে না এপ্রোস সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায়।
জানা যায়, ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে শঙ্খনদীর উপর খোদারহাট সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে কয়েক দফা বন্ধের পর দীর্ঘ ২১ বছর পর অবশেষে খোদার হাট সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে গত বছর জুন মাসে। সংযোগ সড়কের কাজ অদ্যবধি শেষ না হওয়ায় সেতুর যথাযথ ব্যবহার না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ১৪ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়।

কিন্তু অর্থাভাবে বেশ কয়েক দফা সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২১ বছর সময় লেগেছে সেতু নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে। চন্দনাইশ-সাতকানিয়ার সংযোগ সেতু নামে খ্যাত শঙ্খনদীর উপর ৫ম সেতু তথা খোদার হাট সেতুটি নির্মানের জন্য ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে টেন্ডার আহবান করা হয়েছিল। তখন মাত্র ৮ কোটি ৩২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মান করার কথা ছিল। সে হিসেবে সিডিউল অনুযায়ী ৩৬ মাসে কাজ সম্পন্ন করে জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা ছিল। আল আমিন কন্সট্রাকশন কোম্পানী কাজটি পেয়ে শঙ্খ নদীতে সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ৫টি স্পেন নির্মাণ করে প্রথম পর্যায়ে ৩ কোটি ৪০ লক্ষ ১১৬ টাকার বিল উত্তোলন করে। কিন্তু বিএনপি সরকার ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ায় পরবর্তীকালে আ’লীগ সরকারের শাসনামলে সেতু নির্মাণের কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়।

২৫৯.৮৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি পরবর্তীতে খালের ভাঙ্গনের ফলে বর্তমানে ৩২৮ মিটার দীর্ঘ হয়ে যায়। ফলে বরাদ্দ বাড়াতে হয়েছে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। সে সময় ২০০৮ সালে পুনরায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়ে টেন্ডার আহবান করা হয়েছিল। কিন্তু ফান্ডের অভাবে কোনভাবে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ৩২৮ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটিতে ফুটপাত সহ ৮টি স্পেন, ২টি এ্যাডাপম্যান, ৮২টি ফাইল সম্বলিত পিসি গাডার সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন নির্ধারন করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ কোটি ৭ লক্ষ ৯০ হাজার ২৩৮ টাকা দরপত্রের মূল্য শতকরা ৫ শতাংশ কমে ৮কোটি ৪৩ লক্ষ ৫০ হাজার ৭২৫ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ঠিকাদারকে এ সেতু নির্মানের কাজ দেয়া হয়েছিল।

সেতুটির দৈঘ্য বেড়ে ৩২৮ মিটার হওয়ায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বর্তমানে সেতুটির নির্মান ব্যয় ১৪ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা ধার্য্য করে টেন্ডার আহবান করা হয়েছিল গত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সে অনুযায়ী সিডিউল বিক্রি শেষে লটারীর মাধ্যমে পিপিএল এন্ড কাসেম কন্সট্রাকশন যৌথভাবে কাজটি পায়। সরকারি সিডিউল মোতাবেক গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
সেতুতে পুরোনো ৫টি স্পেনের জায়গায় ৮টি স্পেন নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর দফায় দফায় কাজ বন্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে অবশেষে খোদার হাট সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেতু নির্মাণ পরবর্তী এপ্রোস সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় সেতু ব্যবহার আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে জনগণের কাছে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেতুটিতে রাত্রীবেলা ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সেবকদের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক), বাঁশখালী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন আসবে। তাছাড়া এ সকল উপজেলার জনসাধারনের মাঝে ব্যবসা-বানিজ্য, গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন সর্বোপরি সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব গড়ে উঠবে। এসব এলাকায় নিভৃত পল্লীতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

সূত্র মতে, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের শাসনামলে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ড. কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম এসব অবহেলিত এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে সেতুটি নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। বৈলতলী বাসীর বহুদিনের আকাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা ও এলাকাবাসীর চাহিদার প্রেক্ষিতে একনেকের বৈঠকে সেতুটি নির্মানের জন্য বরাদ্দ দিয়ে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। চলতি বছর জুলাই মাসে সেতু ও সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে জনগণের চলাচলের জন্য উদ্বোধনের মাধ্যমে উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা থাকলেও তা করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

ফলে দীর্ঘ ১ বছর ২ মাস অতিবাহিত হলেও সেতুটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত হয়নি। ফলে আশায় বুক বেঁধেছেন শঙ্খনদীর তীরবর্তী চন্দনাইশ-সাতকানিয়া ও বাঁশখালীর ৫ লক্ষাধিক মানুষ। এ সেতুটি নির্মাণ হলে এ তিন উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ মহল। স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার কারণে এ সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। খুব শীঘ্রই এপ্রোচ সড়কের কাজ সম্পন্ন করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.