চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি আসছে শীঘ্রই

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি চলতি সেপ্টেম্বর অথবা আগামী মাসে প্রকাশিত হতে পারে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কমিটি নেই দুই বছরের অধিককাল।
২ বছর ১ মাস ধরে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি নেই।
জানা যায়, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কোন সাংগঠনিক কাঠামো না থাকায় উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। অথচ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারা বাংলাদেশে তরুণ, কর্মদ্যোমী, রাজনীতিতে মেধাবী মুখ তথা ছাত্রদের স্বাগত জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. ফারুককে আহ্বায়ক করে ২০০৩ সালে দায়িত্ব দেয়া হয় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের। পরবর্তীতে ২০১১ সালে প্রয়াত আবদুল মালেক জনিকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। অন্তকোন্দলের জের ধরে ২০১৩ সালে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী তথা ৪ জানুয়ারি আন্দরিকল্লাস্থ দলীয় কার্যালয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ দিন পর মৃত্যুবরণ করেন জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবদুল মালেক জনি। তার মৃত্যুর ২ মাস পর যুগ্ম আহ্বায়ক সাকিবকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৪ সালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ৩১ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে আয়োজিত গণ ভবনে অনুষ্ঠান শেষ করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ট্রেনযোগে ফেরার পথে চলন্ত ট্রেন থেকে লোহাগাড়া বার আউলিয়া ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগ নেতা প্রয়াত মো. তৌফিককে ফেলে দেয়। তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে একদিন পর মৃত্যুবরণ করে। ঐ দিনই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি স্থগিত ঘোষনা করে। দীর্ঘ ২ বছর ১ মাস অতিবাহিত হলেও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত না হওয়ায় দক্ষিণ জেলার সবকটি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ১৯৯৮ সালে। আবদুল কাদের সুজন সভাপতি, আ ন ম টিপু সুলতান চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এ কমিটি দীর্ঘ ৫ বছর কার্যক্রম পরিচালনা করার পর ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে মো. ফারুককে আহ্বায়ক ও ৬ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ ৭ বছর দায়িত্বে থাকার পর ১৮ জুলাই’১০ কেন্দ্রীয় কমিটি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়। ফলে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। দীর্ঘ ৭ বছর দায়িত্ব থেকেও আহ্বায়ক কমিটি কোন ধরনের সম্মেলন করতে পারেনি। ফলে জেলায় নতুন নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হলেও নেতা হতে পারেনি অনেকে, নেতৃত্বে আসতে পারেনি অনেক যোগ্য নেতা। বর্তমান দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও নির্ভরশীল সূত্রে জানা যায়, কমিটির প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে প্রকৃত ছাত্রদেরকে কাছ থেকে বায়োডাটা নেয়া হয়েছে। এতে কয়েকশ বায়োডাটা জমা হয়েছে বলেও জানা যায়। এসব বায়োডাটা যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের বক্তব্যে তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে কোন সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠনে নতুন নেতৃতৃ¦ সৃষ্টি হয়নি। সে কারণে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডেও অনেকটা স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ আ’লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ২৯ বছরের উর্ধ্বে কমিটিতে নেয়া হচ্ছে না কাউকে জেলা কমিটিতে। তাছাড়া ছাত্র ছাড়া অন্য পেশায় জড়িত, বিবাহিত, যারা কলেজ ক্যাম্পাসে যায় না এসব ছাত্রদেরকে অছাত্র হিসেবে গণ্য করে কমিটিতে স্থান দেয়া হচ্ছে না। মেধাবী, সৎ, চরিত্রবান, আদর্শবান, প্রকৃত ছাত্রদের নিয়ে শক্তিশালী ছাত্রলীগ কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে বলেও জানা যায়। টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসের সাথে জড়িত এমন ছাত্রদের নেতৃত্বে কোনভাবেই আনা হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ফলে ত্যাগী, সৎ, যোগ্য, মেধাবী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ ও আসার সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছেন যথাযথ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হবে। নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়ার জন্য সভাপতি/সম্পাদক পদে দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সভাপতি-সম্পাদক, সংসদ সদস্য, প্রবীণ নেতা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের প্রার্থী ও নেতৃবৃন্দরা। দৌড়ঝাঁপ, জোর লবিং ও তৎপরতা চলছে। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন সম্পর্কে নেতৃবৃন্দরা জানালেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস গৌরবের। তাই তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা উঠে আসলে সংগঠনের মঙ্গল হবে। সারা দেশের ছাত্রলীগের যে চিত্র তা থেকে ভিন্ন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রকৃত, নিয়মিত, মেধাবী ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। তবে কমিটি করবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। অনেকের মতে উপজেলা কমিটির বর্তমান সভাপতি/সম্পাদক সহ অনেকের বয়স ২৯ বছরের বেশি। উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। জেলা কমিটিতে আসতে চাওয়া ছাত্রদের বয়স ২৯ বছরের বেশি হলে হয়তো তারাও স্থান পাবে না কমিটিতে। অনেকেই ভিন্ন পেশায় থেকে অসত্য তথ্য দিয়ে কমিটিতে আসতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই যাচাই বাছাই এর মাধ্যমে প্রকৃত ও নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে জেলা কমিটি গঠনের দাবী জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
এদিকে দীর্ঘ ২ বছরের অধিককাল ধরে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় বাঁশখালী, পটিয়া ও চন্দনাইশ-সাতকানিয়া (আংশিক) এলাকার স্ব-স্ব আসনের সংসদ সদস্যরা নিজ উদ্যোগে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছেন। যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞ রাজনৈতিক মহল।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জসিম উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশে ১শ ৩টির অধিক সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদকের সুপারিশক্রমে ইউনিট কমিটিগুলো (জেলা) উপজেলা কমিটির অনুমোদন দিতে পারেন। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক এমপি নয়, মন্ত্রীই কোন কমিটির অনুমোদন দিতে পারে না বা কমিটিতে স্বাক্ষরের ক্ষমতা রাখে না। শুধুমাত্র সুপারিশ করতে পারে। খুব শীঘ্রই দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি সভাপতি-সম্পাদক অনুমোদন দিবেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.