তারানা হালিম কি পদত্যাগ করবেন?

0

দিলীপ তালুকদার : পদত্যাগ করছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তারানা হালিম। দুই সপ্তাহ ধরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে এই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, বিটিসিএলের এমডি নিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক কলের রেট নির্ধারণ নিয়ে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রভাবশালী একাধিক পক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছার কারণেই তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী মিডিয়াকে বলেন, গত এক বছরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে। বিশেষ করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড নিবন্ধনের ফলে ভিওআইপি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

এ কারণে অবৈধ আন্তর্জাতিক কল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে আন্তর্জাতিক কল রেট নির্ধারণকে গুরুত্ব দেওয়াটাও অনেকের পছন্দ হয়নি। এই মহলটিই এ ধরনের গুঞ্জন ছড়াতে পারে। সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী। তার প্রতি আমার পুরোপুরি আস্থা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন। সততার সঙ্গে আমি তা পালন করছি। সমঝোতা করে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করিনি, করবও না। প্রয়োজনে দায়িত্ব ছাড়তেও দ্বিধা করব না।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার গুঞ্জন প্রবল হয়েছে সর্বশেষ বিটিসিএলের এমডি নিয়োগের পর থেকে। এ নিয়োগের বিরুদ্ধে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। গত ১৬ নভেম্বর বিটিসিএলের এমডি হিসেবে দু’বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান মাহফুজ উদ্দিন আহমেদ। প্রায় এক বছর আগে তিনি বিটিসিএলের ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে অবসরে গিয়েছিলেন। তার সময়ে বিটিসিএলের নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণের আলোচিত টিএনডিপি প্রকল্প থেকে অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা প্রত্যাহার করেছিল জাপানের আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকা।

এ নিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় টেলিযোগাযোগ খাতে। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটিতে জাইকার ঋণ ফেরত যাওয়ার নেপথ্যে এমডি মাহফুজ উদ্দিন আহমেদ এবং প্রকল্প পরিচালক অশোক কুমার মণ্ডলের অনিয়ম এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। গত এক বছরেও এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিবের নেতৃত্বাধীন বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদ। সূত্র জানায়, হঠাৎ করেই গত দু’মাস আগে অবসরে যাওয়া মাহফুজ উদ্দিন আহমেদকে চুক্তিভিত্তিক এমডি নিয়োগে তৎপর হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক কল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একটি প্রভাবশালী মহল। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরুতেই বিতর্কিত একজন ব্যক্তিকে এমডি নিয়োগে আপত্তি জানান। এতদসত্ত্বে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান মাহফুজ উদ্দিন আহমেদ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহফুজ উদ্দিন আহমেদ অবসরে যাওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে কর্মরত বিটিসিএলের সাবেক কর্মকর্তা গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের পছন্দে বিটিসিএলের এমডি নিয়োগ করা হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিটিসিএলের আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিটিসিএলের ভেঙে পড়া আর্থিক কাঠামোও চাঙ্গা হয়। এহেন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বেসরকারি আইজিডবি্লউ অপারেটরদের সুইচে কলের পরিমাণ কমে গেলে তারা ক্ষুব্ধ হয়। গত মে মাসে গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদকে আকস্মিকভাবে এমডি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.