চন্দনাইশে নাজনীন হত্যার ৩ আসামী আটক

0

নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দনাইশ : চন্দনাইশ থানা পুলিশ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বড়পাড়া সংলগ্ন পাঠানীপুল এলাকা থেকে গত ১০ নভেম্বর সকালে যে অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ উদ্ধার করেছে, পরবর্তীতে তার পরিচয় মিলে। সে নরসিংদীর হযরত আলীর মেয়ে গার্মেন্টস কর্মী নাজনীন (১৬) বলে জানা যায়। পরবর্তীতে তার বড় ভাই মো. জামাল মিয়া বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। সে মামলার সূত্র ধরে পুলিশ ৩ আসামীকে আটক করেছে। আটককৃত আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এ ব্যাপারে থানা অফিসার ইনচার্জ শেখ নেয়ামত উল্লাহ গতকাল ২৬ নভেম্বর তাঁর দপ্তরে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ দেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নরসিংদী জেলার আছমান্দির চর আবুল হাসেমের বাড়ীর হযরত আলীর মেয়ে নাজনীন (১৬)। সে নরসিংদী এলাকায় একটি গার্মেন্টস-এ চাকুরী করে। ঘটনার দুইমাস আগে মোবাইলে সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়ার জেবল চেয়ারম্যান বাড়ীর আহমদ নবীর ছেলে নাছির উদ্দিন (২৪) এর সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং চট্টগ্রাম আসতে বলে। নাছিরের কথা বিশ্বাস করে গত ৯ নভেম্বর নাজনীন চাকুরীর বেতন পেয়ে নরসিংদী থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।

নাছির পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একই দিন রাত সাড়ে ৯ টায় অলংকার মোড়ে নাজনীনের সাথে সাক্ষাৎ করে। সেখান থেকে কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ এসে শ্যামলী যাত্রীবাহী বাসে উঠে কেরানীহাট এসে নামে নাছির এবং নাজনীন। সেখানে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে একই এলাকার মৃত নুরে আলমের ছেলে সিএনজি চালক মো. রফিকুল ইসলাম (২৮) ও নাছিরের বন্ধু একই এলাকার মো. আবদুল গফুরের ছেলে মো. ইসমাইল (২৫) এর সাথে নিয়ে রফিকের নম্বরবিহীন সিএনজি করে নাজনীন সহ সিএনজিতে উঠে। বাইতুলইজ্জত বিজিবি’র ট্রেনিং সেন্টারের সড়ক দিয়ে কাঁচা গ্রাউন্ডের পাশে গাড়ি থামিয়ে নাজনীনকে নিয়ে পায়ে হেঁটে তিনজনই পাহাড়ের দিকে চলে যায়।

সেখানে একটি গাছের পাশে নিয়ে নাজনীনের কানের দুল টান দিয়ে ছিনিয়ে নেয় নাছির। নাজনীনের সাথে থাকা বেতনের ১৭শ টাকা ও মোবাইল ফোনটিও ছিনিয়ে নেয়। এ সময় নাজনীন নাছিরকে তার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলার সাথে সাথে নাছির ও ইসমাইল নাজনীনের গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে গলায় পেছিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। মৃত নাজনীনকে কাঁদে করে সিএনজিতে উঠায় নাছির। পরে সিএনজি টেক্সীটি রফিক চালিয়ে প্রধান সড়ক হয়ে জামিরজুরী রাস্তার মাথায় এসে রাত ২ টায় ফেলে দেয়। পরদিন ১০ নভেম্বর সকালে স্থানীয়রা মহিলার লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন।

পরবর্তীতে নাজনীনের বড় ভাই মো. জামাল মিয়া চন্দনাইশ থানায় এসে লাশের ছবি দেখে সনাক্ত করে। তিনি ১৩ নভেম্বর বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। সে মামলার সূত্র ধরে পুলিশ গত ২৪ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর টেরীবাজার এলাকা থেকে আসামী নাছির উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। নাছির থেকে নাজনীনের সিমটিও উদ্ধার করা হয়। নাছির গত ২৫ নভেম্বর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তার জবানবন্দীর সূত্র ধরে গত শুক্রবার রাতে সাতকানিয়া কেঁওচিয়া এলাকার নিজ বাড়ী থেকে সিএনজি চালক রফিক ও মো. ইসমাইলকে আটক করে থানা পুলিশ।

গতকাল ২৬ নভেম্বর আটককৃত আসামী রফিক ও ইসমাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় বলে পুলিশ জানায়। এদিকে মামলার বাদী নাজনীনের বড় ভাই মো. জামাল মিয়া জানান, তার বোনকে গত ৯ নভেম্বর তারই বান্ধবী তাদের ভাড়াটিয়া মুক্তা কৌশলে বাড়ী থেকে বের করে নিয়ে যায়। ঐ দিন রাতে চট্টগ্রাম থেকে একজন নাজনীনের মোবাইল থেকে তার মুক্তিপণ হিসেবে ১৬ হাজার টাকা দাবী করে। তারা গরীব বিধায় এত টাকা দিতে পারবে না বলে জানালে, অপরদিক থেকে মোবাইলে তার বেতনে রাখা তার মায়ের কাছে গচ্ছিত ৩ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিতে বলে।

পরদিন ১০ নভেম্বর দশটায় তাদের দেয়া বিকাশ নম্বরে ৩ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয় জামাল মিয়া। টাকা পাঠানোর পর তারা বলে যে, তার বোনকে গাড়ীতে তুলে দিয়েছে, বিকাল ৪ টায় ঢাকাস্থ সায়দাবাদ বাস ষ্টেশনে পৌছে যাবে। তার বোনের মোবাইলটি তাকে দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোবাইল কিনে নিতে বলে। পরে তার বোনের লাশ পাওয়ার খবর আসে থানা থেকে। তখন তারা নাজনীনের বান্ধবী মুক্তাকে পার্শ্ববর্তী মাধবদী থানার ওসির নিকট পৌছে দিতে গেলে তাদেরকে লাশ আনার জন্য চন্দনাইশ থানায় যেতে বলে।

এ সময় মাধবদী থানার ওসি মুক্তাকে ছেড়ে দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। মামলার বাদী নাজনীনের বড় ভাই মো. জামাল মিয়া হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.