এমপি-মন্ত্রী ও স্বজনদের নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগ

0

জুবায়ের সিদ্দিকী : সারাদেশে দেড়ড়জনের বেশী সংসদ সদস্য ও তাদের আত্বীয় স্বজন ক্যাডার বাহিনী নানা অপকর্মে বিব্রত শাসকদল আওয়ামী লীগ। এমনকি তাদের অনেকের অতিকথনেও কখনও অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের। ক্ষমতার টানা দ্বিতীয় মেয়াদের পৌনে ৩ বছরের বেশি সময়ের মাথায় যখন বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোলমড়েল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে ঠিক তখনই এসব এমপির এমন কর্মকান্ডে এ অর্জনকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দিচ্ছে। এতে করে ক্ষমতাসীনদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।

বিতর্কিত সংসদ সদস্য ও তাদের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদকব্যবসা, চোরাচালান, জমিদখল সহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, এদের কারো কারো বিরুদ্ধে রয়েছে খুনের অভিযোগও। এর মধ্যে একজন সংসদ সদস্য খুনের অভিযোগ মাথায় নিয়ে কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। আরেক সংসদ সদস্যকে দুর্নীতির দায়ে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া গরীবের চাল আত্বসাৎ, টিআর খাবিকা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লুটপাট, অনিয়ম সহ দলের ভেতর কোন্দল জিইয়ে রাখারও অভিযোগ রয়েছে তাদের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ গাইবান্দার সাঁওতাল পল্লীতে হামলা লুটপাট এবং ব্রাম্মনবাড়িয়ার নাছিরনগর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনায় উঠে এসেছে এ সংসদ সদস্যের নাম। সংশ্লিষ্টদের মতে, সংসদ সদস্য এবং তাদের পোষা ক্যাডারদের এসব অপকর্মে ক্ষুদ্ধ হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধেও নিতে পারছেনা কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।

এসব ঘটনা যদি মিডিয়ায় প্রচার হয় এবং সরকারের উপর মহলের সবুজ সংকেত মেলে, শুধু সে ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে চুড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে নানা চাপে ধীরে চলা নীতি অনুসরন করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। ভাল চোখে দেখছেন না কোন নীতিনির্ধারকরা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় দলের একাধিক সভায় এসব বিতর্কিত সংসদ সদস্যকে সতর্ক করেছেন। ভবিষ্যতে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ার করেছেন তিনি। এরপরও অনেক সংসদ সদস্য ও তাদের ঘনিষ্টরা অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকবর্গ মনে করেন, বেপরোয়া সংসদ সদস্যদের লাগাম টেনে না ধরতে পারলে তা সরকারের জন্যই বুমেরাং হবে। এখনও সময় আছে, সরকারের উচিত বিতর্কিতভাবে যারা রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ভাবে ব্যবস্থা নিতে সরকারের এখনই লাগাম টেনে ধরা। বেপরোয়া হয়ে উঠা নেতা, এমপি, সাবেক মন্ত্রী, বর্তমান মন্ত্রী সহ যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের দমন করতে হবে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের মতে, সংসদ সদস্যদের মুল কাজ হচ্ছে আইন প্রনয়ন। সংসদ ও সংসদীয় কমিটিতে সরকারের কর্মকান্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই হচ্ছে তাদের কাজ। এগুলো না করে তারা যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমে। এতে অনেক সংসদ সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক, দলীয় ও সংসদীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারন, তারা দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছেন, আইন ভাঙ্গছেন, এমনকি সংসদকেও অবমাননা করছেন।

সংসদীয় কমিটির সদস্যরা যদি বেপরোয়া হয়ে উঠে তবে এলাকাবাসীর মধ্যে ভয়ভীতি, শ্রদ্ধা, আস্থা, বিশ্বাস, উন্নয়ন কোন কিছুরই নির্ভরতা কাজ করে না। জামায়াত ও বিএনপির অনেক নেতাকর্মী সংসদ সদস্যদের হাত ধরে ডিগবাজি দিয়ে দলে ভিড়েছেন। এরা এখন দলের অন্যতম কান্ডারী। দলের অগ্রভাগে থাকেন তারাই। জামায়াতের মার্কামারা লোক এমপি নিজাম উদ্দিন নদভী সাতকানিয়াতে পরপর ২ বার এমপি হয়েছেন। কিভাবে এরা দলে প্রবেশ ও বোল পাল্টে রাতারাতি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আত্বহারা হয়ে উঠেন, তাদের লেবাস বদলালেও মুখোশ বদলায়নি। চট্টগ্রামে এমপি-মন্ত্রীদের সব সময় ঘিরে রাখে হাইব্রীড়, সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানীরা। তৃনমুলের কোন ত্যাগী নেতাকর্মীরা তাদের পাশে এখন যেতে পারেন না।

জীবনে কোনদিন আওয়ামী লীগের ধরাপাতও পড়েনি এবং জামায়াত সংশ্লিষ্ট ছিলেন এমন ব্যক্তিরা মহানগরীর এমপির আসন দখলই না চট্টগ্রাম বন্দরকেও গিলে খাচ্ছে। কিছু সুবিধাবাধী সংসদ সদস্য চট্টগ্রামে বেপরোয়া হয়ে উঠায় এরা এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। এদের আমলনামা যাছাই বাছাই করা হচ্ছে। এদের ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। উড়ে এসে জুড়ে বসে অরাজনৈতিক ব্যক্তি দলীয় সাইনবোর্ডে এমপি হয়ে এরা এখন সব কাজের কাজী। রাজনীতির মাঠে নেই, দলের দুর্দিন-সুদিনে কোনভাবেই যারা রাজনীতির মানচিত্রে ছিলেন না, তারা কিভাবে সরকারী সকল কর্মকান্ডে প্রভাব বিস্তার করে? এটাও এখন আওয়ামী লীগের ও অংগসংগঠনের নেতাকর্মীদের ভাবিয়ে তুলেছে। চামচা চাটুকার, হাইব্রীড ও দালালরা কিভাবে দলের অভ্যন্তরে মুখচেনা নেতাদের ম্যানেজ করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তৃনমুলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতা এখন সুবিধাভোগীদের দ্বারা পরিবেশিত। যে কারনে ছিটকে পড়েছে রাজনীতি থেকে। মুল্যায়ন হচ্ছে না কোনভাবেই দু:সময়ের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের।

রাজনীতি সরকারীদলের কাছে কোন কোন নেতার ব্যবসায় রুপান্তর করার প্রয়াস দু:খজনক। যার কারনে রাজনীতি এখন হাইব্রীড় ও চামচা চাটুকারদের হাতে চলে গেছে। এক সময় বলা হতো, যার নাই কোন গতি, সে করে রাজনীতি। এটাই এখন বাস্তব। বৃহত্তর চট্টগ্রামে কোন কোন উপজেলায় ও জেলা শহরে সরকারীদলের অনেক নেতাকর্মীগন রাজনৈতিক প্রভাব প্রশাসনে প্রয়োগ করে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। এটা একটা বড় রাজনৈতিক ব্যধি। এই ব্যধি দুর করতে উদ্যোগ সরকারীদলের হাইকমান্ডের নেই। যার কারনে মাদকে, সন্ত্রাসে ও অপরাধে জড়িয়ে পড়া সরকারীদলের বখে যাওয়া কর্মীদের বশে আনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। কোন ভাবেই নষ্ট রাজনীতির গ্রাসে সরকারীদলের রাজনীতি যেন গনমানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেদিকে দলের হাইকমান্ডকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। দলের শৃঙ্খলা, ভাবমুর্তি, সুনাম রক্ষায় ও মানুষের জানমাল রক্ষায় নেতাদের পেটোয়া বাহিনী ও লোহালক্কর পার্টিকে সামাল দেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

যে নেতা দলের নেতাকর্মীদের নিজের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রন করতে ব্যর্থ হন তিনি কোন ধরনের নেতা হন-আমার বোধগম্য হয়না। কোন কোন এমপি মন্ত্রীর কাছে একজন পাবলিক দশবার গেলেও চেনেন না। জিজ্ঞেস করেন ’ওবা তোঁয়ারে ন’চিনিলাম। কিল্লাই আইস্যছ’দে। আবার অনেকে দেখেও না দেখার ভান করেন। মোবাইল তো বেশিরভাগ এমপি-মন্ত্রী রিসিভই করেন না। এ হচ্ছে চিত্র বাস্তবতায়। নেতারা ক্ষমতায় থাকলে একরকম, ক্ষমতার বাইরে থাকলে অন্যরকম।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.