মুকুলে ছেয়ে গেছে আমগাছ
মো. দেলোয়ার হোসেন,চন্দনাইশ : ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতে চন্দনাইশ অঞ্চলের মধু মাসের আগমনী বার্তা বইতে শুরু করেছে। এখানকার বাতাস এখন আমের মুকুলের সুগ্রানে ভরপুর। আম গাছগুলো মুকুলে ছেয়ে গিয়ে হলদে রং ধারন করেছে। মুকুলের আধিক্য দেখে ভালো ফলনের আসায় বুক বেধেছেন এ অঞ্চলের আম গাছের মালিকেরা।
বাঙালীর জীবনের সাথে আম্রফল বা আমের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এ কালে হয়তো সবার পক্ষে নগদ পয়সায় বহু মূল্যে আম কিনে রসা সাধন সম্ভব হয় না। কিন্তু এক সময় পল্লী বাংলার প্রতি গৃহস্থের বাড়িতেই আমবৃক্ষ বা আম গাছ থাকত। সে সুবাদে এখনকার তুলনায় অনেক কম জন অধ্যুষিত সেকালের বাংলাদেশ সবার পক্ষে এ পরম সুস্বাদু মধু ফলের মহনীয় রসা সাধন সম্ভব হত। মূলতঃ মধু মাসের প্রধান ফল আমের সাথে বাঙালীর যে নিবিড় আত্মীয়তা তার সূত্রপাত ও সংহতি গড়ে উঠা এভাবে। সন্দেহাতীতভাবে সেটা ঘটেছে সেকালের সে দিনের প্রাচীন বাংলায়। আমরা কেবল তার উত্তরাধিকার হয়ে চলেছি।
কিন্তু ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছি বলা কঠিন হবে। কেননা জীবন ধারণ ও জীবিকা অর্জনের তাগিদেই এখন সমাজ বিন্যাস, জনগণ ও জনবসতী বিন্যাসের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও নতুন নিয়মনীতি এসেছে। ফলের রাজ্যে আমের সাথে বাঙালীর যে সম্পর্ক নৈকট্যের তা বোধ করি আর কোন ফলের সাথে নেই। তাই বুঝি আমের মুকুল গাছে এলেই বাঙালীর মন আকুল হয়ে উঠে। বাঙালী আরো অনেক আকুলতার মত আম্র আকুলতাও ভাষায় উপস্থাপন কষ্টসাধ্য। বাঙালীর প্রবল প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাই হয়তো গেয়ে উঠেন “আনো আমের মুকুল”।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. বখতিয়ার উদ্দিন বলেছেন, সাধারণতঃ এ মাসেই আমের মুকুল আসার সময়। আমের মুকুল আসার সাথে সাথেই পোকাও আসতে শুরু করে। মুকুলের মধ্যে পোকা ঢুকে পড়ে। এ সময় স্প্রে করে কীটনাশক দিয়ে পোকা তাড়াতে হবে। অন্যথায় সে পোকা থেকে মুকুল থেকে পরবর্তীতে আমফলে প্রবেশ করবে। আমের কলি আসার সময়ও কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এটা কিছুদিন পর পর অব্যাহত রেখে আম সংগ্রহ করার ১৫ দিন পূর্বে স্প্রে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় কীটনাশকের ক্ষতিকারক দিক রোধ হবে না। আম পাকার ১৫ দিন পূর্বে স্প্রে বন্ধ করলে কীটনাশকের মেয়াদ শেষ হলে সে আম নিরাপদে খাওয়া যাবে। কৃষকদের এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন মজুমদার বলেছেন, চন্দনাইশের পাহাড়ি অঞ্চলে বেশকিছু আমের বাগান রয়েছে। যেসব বাগানে আমের মুকুল এসেছে তাতে সময়মত কীটনাশক দিয়ে পোকা থেকে রক্ষা করতে হবে। মুকুল থেকে আম কলিতে আসার পর পরিচর্যার মাধ্যমে আমের ফলন ধরে রাখার জন্য কৃষকদের তিনি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।
বিজ্ঞানীদের মতে আমের মুকুল আসার আগে যেমন আবহাওয়ার প্রয়োজন বর্তমানে তা বিরাজমান। ডিসেম্বরের শেষ থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমগাছে মুকুল আসার আদর্শ সময়। এ সময়ে মুকুলের প্রধান শত্রু কুয়াশা। এখনো পর্যন্ত কুয়াশা কম আকাশে উজ্জ্বল রোদ থাকায় আমের মুকুল সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। কিছু আম গাছের মুকুলে পাথর দানা দেখা গেলেও এতে আতংকের কিছুই নেই।
গাছে যে পরিমাণ মুকুল এসেছে পাথর দানার কারণে আমের উৎপাদন তেমন ব্যাহত হবে না। আমের উৎপাদন বাড়াতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। একটু সতর্ক হলেই শতভাগ ফলন পাওয়া সম্ভব। সাধারণত আমের মুকুল আসার পর হোপার, পোকার আক্রমন ও অ্যানথ্রাকনোজ রোগ হয়ে থাকে। এ জন্য আমের গুটি মটর দানার মত হওয়ার পর দু’বার গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
এ কীটনাশক ব্যবহার করতে প্রতি লিটার পানিতে মেশাতে হবে ইমিডাক্রোপিড গ্রুপের তরল কীটনাশক ০.২৫ গ্রাম। আর দানাদার কীটনাশক হলে ০.২ গ্রাম। এর সাথে ম্যানাকোজ জাতীয় ছত্রাক নাশক ০.২ গ্রাম। এ নিয়মে আম গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এতে আম গাছ পোকামাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষা পাবে এবং ভালো ফলনও হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমের গুটি দেখা যাবে। উপজেলার পাহাড়ি এলাকা তথা সৈয়দাবাদ, লর্ট এলাহাবাদ, ধোপাছড়ি এলাকায় বেশকিছু আমের বাগান বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করা হয়েছে। এখানকার আম খুবই সুস্বাদু। এখন আম চাষীরা তাদের বাগান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।