শ্যামল রুদ্র,রামগড় (খাগড়াছড়ি) : চলতি বর্ষা মৌসুমে ফেনী নদীর করাল গ্রাসে খাগড়াছড়ির রামগড় ও মাটিরাঙ্গার বির্স্তীণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতি নিয়তই নতুন নতুন এলাকা ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে রামগড় ও মাটিরাঙ্গার বিশাল ভূখন্ড দেশের মানচিত্র থেকে চীরতরে হারিয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পিলারের ১৬টি ফেনী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক এই প্রতিবেদককে বলেন, সীমান্ত পিলার মানে একটি স্পর্শকাতর বিষয়। যৌথ নদীকমিশনের সার্ভে দলের মতামতের ভিত্তিতে নদী সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব প্ল্যানিং কমিশনে আছে, বরাদ্ধ পেলে কাজ শুরু হবে।
মাটিরাঙ্গার ৪০ বিজিবির(বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) আওতায় আমতলী বিওপি (বর্ডার আউট পোষ্ট) সংলগ্ন বিস্তীর্ণ ফসলী জমি পানির তোড়ে ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর প্রচন্ড স্রোতে দেওয়ানবাজার ও অযোদ্ধা সীমান্তে বাংলাদেশের প্রায় এক কিলোমিটার পরিমান জমিতে ভাঙ্গন ভযাবহ আকার ধারণ করেছে। দেওয়ান বাজার এলাকায় পলাশপুর বিজিবি কমান্ডার লে.কর্নেল মো. খালিদ আহমেদ পিএসসির উদ্যোগে পাউবি (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ভাঙ্গরোধে সিসি ব্লক স্থাপন করলেও কাজে আসছে না।
স্থানীয় কৃষক মো. সাইদ মিয়া ও মো. মনির হোসেন বলেন, নদীর ভাঙ্গনে তারা আতঙ্কে মধ্যে রয়েছেন । দেশের বিশাল ভূখন্ড নদীর করাল গ্রাসে চীরতরে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে ফসলের জমি কমছে অব্যাহত ভাবে। নদী গ্রাস করে নিচ্ছে অনেক কষ্টে গড়ে তোলা জমি ও ফসলাদি। ভাঙ্গণ রোধে সংশিষ্ট বিভাগের জরুরি উদ্যোগ চান তাঁরা।
জানতে চাইলে,আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল গণি বলেন পলাশপুর বিজিবি জোন কমান্ডার ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে(ইউএনও) জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ভূখন্ড রক্ষায় নদী তীরবর্তী স্থানে সিসি ব্লক স্থাপন অত্যন্ত জরুরী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বি এম মশিউর রহমান বলেন, ভাঙ্গল কবলিত এলাকার আলোকচিত্রসহ তথ্যাদি জেলাপ্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েছেন তিনি। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানতে চাইলে,পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী খ ম জুলফিকার তারেক বলেন, খাগড়াছড়ি শহর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় পুরো জেলায় কাজ হবে। ইতিমধ্যে বিভাগীয় টেকনিক্যাল কমিটি সরেজমিন ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও বোর্ড মিটিং এর পর একনেক কর্তৃক অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করতে পারব।
এদিকে, রামগড়ের বল্টুরাম, আনন্দপাড়া, রামগড় বাজার ঘাট, থানা ঘাট, দারোগা পাড়া, মহামুনি, ফেনীরকুল এলাকায় ফেনী নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বহু পূর্বে স্থাপিত সিসি ব্লক নষ্ট হয়ে উপকূল বাসীর সুরক্ষায় নির্মিত বাধ ধ্বসে পড়ছে। রামগড় লাচাড়ি পাড়া বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন কলসীমুখ খ্যাত আড়াইশ একর আয়তনের সীমান্ত গ্রামটিতে ৫০টি ত্রিপুরা ও মারমা স¤প্রদায়ের প্রায় তিন শতাধিক মানুষের বাস। এই পুরো গ্রামটিই ফেনী নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে।
রামগড় পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাদের ঘুরে এসে এই প্রতিনিধিকে বলেন, সুরক্ষাবাধ মজবুত করা না হলে একসময় বাংলাদেশর ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে চিত্তাকর্ষক পর্যটন স্পট লাচাড়ি পাড়া তথা কলসীমুখ সাদৃশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মনোরম এই স্থানটি। স্থানীয় মেম্বার থৈমং মারমা এই প্রতিনিধিকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের
সংশ্লিষ্টদের জানানোর পরও কোন ধরনের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। রামগড় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. আল মামুন মিয়া ভাঙ্গনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।