রাইফা হত্যা,চিকিৎসকরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?

0

গোলাম সরওয়ার,সিটি নিউজ : সরকার সবসময় বলেন,অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অনিয়মের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। কারণ বাংলাদেশে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো,চিকিৎসকরা কি আইনের ঊর্ধ্বে? তাদের কোনো ভুলত্রুটি নেই। তাদের মধ্যে কি কেউ অপরাধ করতে পারেন না? তাদের অপরাধ, অবহেলা বা উদাসীনতার কারণে কোনো রোগী মারা গেলে, তার প্রতিকার কি চাওয়া যাবে না? এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া যাবে না? প্রতিকার চাইতে গেলেই তারা রোগীদের সহমর্মিতার পরিবর্তে হুমকি ধমকি প্রদান করেন। চিকিৎসা ব্যবস্থার এমন নৈরাজ্যের মধ্যেই এখন আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের সমালোচিত ট্রিপল মার্ডারের হোতা বিএমএ নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী নিজেই এককভাবে যে কোন কর্মবিরতির কর্মসূচি চাপিয়ে দেন চিকিৎসকদের ওপর।

চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ভুল চিকিৎসা ও দায়িত্বে অবহেলার ঘটনা বাড়ছে। এতে বাড়ছে মৃত্যুর অভিযোগও। তবে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটলেও তার প্রতিকার পান না কেউই। বরং বিচার চাইতে গেলে উল্টো হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন ভুক্তভোগীরা। যদিও নানা সীমাবদ্ধতার দোহায় দেন হাসপাতাল মালিক সমিতির নেতারা।

গত ২৯ জুন শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম ম্যাক্স হাসপাতালে মুত্যু হয় সাংবাদিক রুবেল খানের আড়াইবছরের সন্তান রাইফিদা খান রাইফা । বর্তমানে রাইফা হত্যার প্রতিবাদে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সরাদেশে।

এদিকে এখনো সন্তান হারানোর কষ্ট বয়ে বেড়ান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহ আলম। গত বছরের অক্টোবরে নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল ন্যাশনালে মারা যায় তার নবজাতক শিশু। শাহ আলমের অভিযোগ, জন্মের পর সব ঠিকঠাক থাকলেও জোর করে আইসিইউতে নেয়া হয় তার নবজাতককে।

ফলে, সেখানেই মারা যায় শিশুটি। স¤প্রতি ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠে বেশ কিছু নামী বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কেবল তা নয়, শিশু চুরি, বদল ও জীবিত শিশুর পরিবর্তে মৃত শিশু গছিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও তার প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা। যেমন ২০১২ সালে ছেলের ভুল চিকিৎসার জন্য সর্বস্ব হারিয়ে এখনো বিচার পাননি দেলোয়ারা বেগম। চট্টগ্রাম নগরীতে নিবন্ধিত বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে দেড় শতাধিক। এসব হাসপাতালে সেবা কার্যক্রমে নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন মালিক সমিতির নেতারা। শুধু এটাই নয়, সা¤প্রতিক সময়ে অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারনে নগরীতে অন্তত ৮ জন মা ও শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠে।

তবে চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের পেশাজীবি সংগঠনগুলোর দৌরাত্ম্য ও প্রভাবের কারণে মানসম্মত সেবা পাচ্ছেনা সাধারণ মানুষ। ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার প্রতিবাদ করলেই সড়ক অবরোধ করে, ধর্মঘট ডেকে বন্ধ করে দেয়া হয় সকল চিকিৎসা সেবা। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বিএমএ নেতাদের এমন আচরণ আইন ও সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞার সামিল বলে মনে করা হচ্ছে। রোগীদের জিম্মি করার অধিকার চিকিৎসকদের সংগঠন সংরক্ষণ করে না। চিকিৎসকরা অপরাধ করলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে না এটি গোষ্ঠীগত দাম্ভিকতা।’ ২০১৬ সালের ২৫ ও ২৬শে জানুয়ারি চট্টগ্রামে রোগীর স্বজনদের করা দু’টি মামলায় তিন চিকিৎসকের জামিন মঞ্জুর করে আদালতের আদেশের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলা হয়।

এছাড়া চাপ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ চট্টগ্রাম শাখাকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু আদালতের এইসব নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি দেখিয়ে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেছে বিএমএ’র নেতারা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী জানান, ডাক্তাররা বিচারের ঊর্ধ্বে নন, যদি আইন কর্তৃক ডাক্তাররা সাক্ষীর মাধ্যমে অব্যাহতি পান সেক্ষত্রে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু ভয় দেখিয়ে অবরোধ ও প্রতিরোধের কথা বলে বিচার কার্যক্রমকে ব্যহত করা যাবেনা বলেও জানান তিনি। ২০১৬’র ১০ই জানুয়ারি সার্জিস্কোপে হাসপাতালে রীমা নামে এক রোগীর মৃত্যু ও ২০১৩ সালের ২৮শে জানুয়ারি ছাত্রের মলদ্বারে অস্ত্রোপচারের পর সুঁই রেখে সেলাই দেয়ার ঘটনায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করেছিল চিকিৎসকরা।

সর্বশেষ চলতি বছরের গেল ২৯শে জুন রাত ১১টায় সমকালের সাংবাদিক রুবেল খানের আড়াই বছরের মেয়ে রাইফা ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়ার পর অভিযুক্ত চিকিৎসক বিধান রায় চৌধুরী তিন নার্সকে আটক করে পুলিশ। কিন্তু বিএমএ নেতারা থানায় গিয়ে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেন। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন চিকিৎসকরা কি আইনের ঊর্ধ্বে? ধর্মঘট ডেকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করার ক্ষমতা কোন চিকিৎসকের নেই জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের অবহেলা ও ত্রুটি হলে ছাড় দেয়া হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান কাজী জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ”ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্স ত্রুটিপূর্ণ, বিধি মোতাবেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেয়া হবে। একজন ডাক্তার সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক তার বলার কোন অধিকার নেই আমি রোগীর চিকিৎসা করবো না। চিকিৎসকদের আইন অমান্য করার প্রবণতা মোটেই বরদাশত করা যায় না।

ভুল চিকিৎসায় শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে চট্টগ্রামসহ সর্বস্তরের মানুষ। অবিলম্বে অভিযুক্ত চিকিৎসকসহ ফয়সাল ইকবালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক সমাজ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.