আবছার উদ্দিন অলি –
মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বিশ্বজনীন মানবাধিকার। মানবাধিকার পরিস্থিতিই হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতির মাপকাঠি। অসহায়, বঞ্চিত, নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষকে সহায়তা প্রদান এবং সচেতন করে তোলার জন্যই বিশ্বে মানবাধিকার সংগঠনসমূহের সৃষ্টি। মানবাধিকার লংঘন একটি দন্ডনীয় অপরাধ। স্বাধীন দেশে অবাধ বিচরণ, বাক স্বাধীনতা, ধর্ম স্বাধীনতা ও সসম্মানে জীবনমান পরিচালনাই মানিবাধিকার। এই অধিকার হরণ বা হরণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দেশে বিদ্যমান আইনের আওতায় সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশার অধিকার জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের আছে। তাই দেশের যে প্রান্তেই হোক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো পরিপূরক হিসেবে একযোগে কাজ করছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে মানবাধিকার সু-শাসনের পূর্ব শর্ত। বাংলাদেশে বর্তমানে মানবাধিকার বিষয়ে নানারকম সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, এরই মাধ্যমে মানুষ সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছে। গণমাধ্যম এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। দেশে মানবাধিকার রক্ষায় বর্তমান সরকার অত্যন্ত সচেতন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
মানবাধিকার চর্চা ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত অসমান্ত রয়েছে বহু কাজ, বহু চ্যালেঞ্জ এখনও মোকাবেলার অপেক্ষায়। আমাদের বিশ্বাস মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। এ কথা দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যারা দেশ পরিচালনা করেন, তারা এ ব্যাপারে কতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনের পর দেশটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শাসন ব্যবস্থায় এক নাজুক পরিস্থিতির শিকার। বাংলাদেশ সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে সংগ্রাম হয়েছে প্রচুর। কিন্তু মানবাধিকার আর মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা গণতন্ত্রের উত্তরকালেও জনগণের কাছে ডুমুরের ফুল হয়ে থাকে। যে কারণে দেশে দূর্নীতি, বেকারত্ব, মানবাধিকার লংঘন, নারী শিশু নির্যাতন বিশ্ব রেকর্ডের পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোনো সভ্য মানুষ মানবাধিকারকে উপেক্ষা করতে পারে না। কিন্তু বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগেও আমাদের দেশসহ বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে নানাভাবে মানবাধিকার চরমভাবে লংঘিত হচ্ছে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের সংবিধানে প্রতিটি মানুষের প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণের বিধান থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে তা চরমভাবে লংঘিত হচ্ছে যা কোনভাবেই মেনে নেয়ার নয়। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বের সকল মানুষ আজ মানবাধিকার রক্ষায় সংকল্পবদ্ধ। এই অধিকার রক্ষার জন্য দরকার সচেতন মানবিক গুণাবলী, যা বিবেককে জাগ্রত করবে।
মানবাধিকার লংঘন এত ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করছে যে, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। অর্থ-বিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, পেশীশক্তি, গোষ্ঠীগত, রাজনৈতিক এমনকি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছেও দলিত মথিত, নিষ্পেষিত হচ্ছে মানবাধিকার। মানবাধিকার সংরক্ষন ও প্রতিষ্ঠায় অবহেলার কারণেই অপরাধ, অপকর্ম, অনাচার-ব্যাভিচার ইত্যাদি কোন কিছ্ইু নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না। চলে যাচ্ছে সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি-উন্নয়ন ইত্যাদির সব প্রচেষ্টা। সকল সফলতা- ব্যর্থতার মূলে রয়েছে মানবাধিকার। এটা পরীক্ষিত সত্য যে, যে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির যত উন্নত সে দেশের সার্বিক অবস্থাও তত ভালো। আজ ১০ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। এই দিবসের অঙ্গীকার হোক মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আমরা আরো বেশী আন্তরিক হব।