চট্টগ্রামে নয় ছয় তৃনমুল এবং হাইব্রীড আওয়ামীলীগার

জুবায়ের সিদ্দিকী –

সম্মেলনের মাধ্যমে শক্তিশালী কমিটি গঠনে তৎপর রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃনমুল আওয়ামী লীগের সকল ইউনিট কমিটি গঠনে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানা হয়নি সেই নির্দেশ। ফটিকছড়িতে তৃনমুলের ভোট বা মতামত ছাড়াই ২টি ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই নিয়ে তৃনমুল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের চেয়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ড নাজুক। কার্যকরী কমিটির সভা কবে হয়েছে কেউ বলতে পারে না। সাধারন সম্পাদক এম.এ সালাম জেলা পরিষদ নিয়েই ব্যস্ত। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদোতীর্ন হলেও নতুন কমিটির দেখা নেই। কোন কোন ইউনিটে নতুন কমিটি গঠন করা হলেও পুর্নাঙ্গ কমিটি এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠন না হওয়ায় বিভিন্ন ইউনিটে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব বেড়েছে। এতে করে গ্রুপ উপগ্রুপ গুলো সক্রিয় থাকলেও সংগঠন হচ্ছে নিস্ক্রিয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের অধীনে ফটিকছড়ি ছাড়া সব কমিটির মেয়াদ আছে। এ কথা সভাপতিও বলেছেন। তাহলে ফটিকছড়িতে মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি কাজ করে কিভাবে চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্ধারন করলেন জোড়াতালির তৃনমুল। সাংগঠনিকভাবে দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলেও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের অবস্থান নড়বড়ে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা রয়েছে। সকলে নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দলের ব্যাপারে সম্পর্ন উদাসীন।
ফটিকছড়িতে ইউপি নির্বাচনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দেওয়া হবে। এ ছাড়াও প্রত্যেক উপজেলায় মেয়াদোর্ত্তীর্ন ইউনিয়ন কমিটিগুলো নতুনভাবে করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এভাবে চট্টগ্রাম তৃনমুলের রাজনীতি এখন এক হযবরল অবস্থায় আছে। কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা না থাকায় উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি কাগজে থাকলেও বাস্তবে নেই।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শক্তিশালী বিরোধীদল মাঠে না থাকায় নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভুত হচ্ছে আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতার দোর্দন্ড প্রতাপ বেড়ে যাচ্ছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের। যে কারনে প্রতিদিন শহর বা গ্রামের কোন না কোন এলাকায় নিজেরা নিজেরাই সংঘর্ষ ও দলাদলীতে জড়িয়ে আছে। এতে করে শৃঙ্খলা ভঙ্গের পাশাপাশি সংগঠন হচ্ছে গতিহারা। দলের সিনিয়র নেতারাও এমন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকায় সাংগঠনিক রাজনীতির পরিবর্তে প্রশাসন নির্ভর রাজনীতিতে ঝুঁকছে দলীয় নেতারা। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় এক শ্রেনীর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতা, পাতি নেতা, ক্যাডার এখন এলাকার নিরহ ব্যবসায়ী, ছাত্র ও পেশাজীবিদের জামায়াত-শিবির বানিয়ে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে থানায় তদন্তের প্রতিবেদন চাওয়া সহ হয়রানীতে রেখেছে মানুষকে। এতে করে অনেকে বাড়িঘর ছাড়া, একটি চক্র পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মামলা দেওয়া, ছাড়িয়ে নেওয়া, তদন্ত রিপোর্টকে প্রভাবিত করা ছাড়াও নানা অপকর্মে জড়িয়ে অবৈধ অর্থ আদায় করছে। এসব অনেক নেতার ব্যবসায় পরিনত হয়েছে। চরতি ইউনিয়নে শীর্ষস্থানীয় জামায়াত নেতার পুত্র সেজেছে আওয়ামী লীগের হর্তাকর্তা। আওয়ামী লীগের টিকিটে তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার খোয়াব দেখছেন। তার কথায় থানা উঠবস করে। তারই ইংগিতে চরতির অনেক লোকজন পুলিশের ভয়ে বাড়িছাড়া। আওয়ামী লীগের মধ্যে স্বার্থের লড়াইয়ের কারনে দলাদলী বাড়ছে। কেউ টাকার স্বার্থে, কেউ ক্ষমতার স্বার্থে এমন অপকর্মের সাথে যুক্ত হচ্ছে। মুজিব কোট পরে নেতাগীরি দেখাতে গিয়ে অনেকে নানা প্রশ্নেরও সৃষ্টি করছেন। আজকের সুর্যোদয়কে সেদিন এক একান্ত সাক্ষাতকারে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন,’আওয়ামী লীগে হাইব্রীড় নেতা ও কর্মীদের আখের গোছানোর উৎসব চলছে। বাস্তব সত্য কথা তিনি বলেছেন। এখন শহর কি গ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে জামায়াত শিবির, ক্রিমিনাল, ধান্ধাবাজ, জমির দালাল থেকে শুরু করে পেশাদার অপরাধী চক্র। এদের দাপটও এখন বেশি। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতেই ডজনখানেক আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা জামায়াত থেকে এসেছে।
যদিও আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে শুদ্ধি অভিযান চালাতে যাচ্ছে। শুদ্ধি অভিযানে দল ও বিভিন্ন কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার মত কঠোর শাস্তিমুলক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দলটি। এ ছাড়া দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে সতর্ক করার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রথমবারের মত লঘু অপরাধীদের সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হবে। তবে সতর্কবার্তা পাওয়া নেতাদের অন্তত ৫ বছর দলের কোন স্থরের মনোনয়ন না দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
টেন্ডারবাজি, ঠকবাজি, অবৈধ ব্যবসা, প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার সহ নানা অপকর্মের হোতাদের নামের তালিকা করা হচ্ছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। এই তালিকা দলের সভানেত্রীর কাছে যাবে। এদিকে নাম সর্বস্ব কিছু সংগঠনের ব্যানারে কোন কোন এমপি মন্ত্রী নানা ইস্যুতে সভা সমাবেশে, সাংবাদিক সম্মেলনে বেফাস কথাবার্তা বলে তা বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনের অপচেষ্টাকে বিবেচনায় গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছে। এতে করে এসব সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান কয়েকজন সাংসদকে হয়তো ভবিষ্যতে বাদ পড়তে হতে পারে। এসব চিহ্নিত নেতারা দলে এব্ং দলের বাইরেও বিপাকে পড়তে পারেন। আওয়ামী লীগের বেশকিছু সাংসদ ডিগবাজি দিয়ে রাজনীতি ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়াতে এরা বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের সৃষ্টি করছে। কোন সাংসদ বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করছে, কোন সাংসদ ইয়াবা ব্যবসা করছে, কোন সাংসদ প্রবাসে গিয়ে নানা ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। দাম্ভিকতা, অহংকার, দালালীতে, ধান্ধাবাজিতে ব্যস্ত শীর্ষ অনেক নেতার কর্মকান্ড চট্টগ্রামে প্রশ্নবিদ্ধ। এদের অতীত ছিল দুষিত, এখনও সেই রকম দুষিত হয়েই আছে। তৃনমুল ও ত্যাগী নেতাদের ত্যাগ করে সুবিধাবাদী ও দালাল পরিবেষ্টিত হচ্ছে অধিকাংশ এমপি। এতে করে ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যক্রম থেকে দুরে সরে আসছেন। নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অবলেহিত, বঞ্চিত, ত্যাগী নেতাকর্মীগন। চামচা, চাটুকার, দালাল ধান্ধাবাজদের অবাধ বিচরনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দলীয় কর্মকান্ড। ব্যাহত হচ্ছে দলের ভাবমুর্তি। সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ধান্ধাবাজ, দালাল, স্বাধীনতা বিরোধী অনেকে এখন আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড়ের আড়ালে রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিনত করে এখন কোটিপতি। এই কোটিপতি নেতারা ক্ষমতার দোর্দন্ড প্রতাপে মানুষকে মানুষ বলছে না। এদের নাদুস নুদুস চেহারাতে কোটিপতি নেতার ভাব। যে কারনে ফরিয়াদী বা দলীয় সাধারন নেতাকর্মীগন শুধু বঞ্চিতই হচ্ছে না, সাধারন মানুষও তাদের দাপটে তটস্থ। দল এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিলে দলের ভাবমুর্তির বারোটা বাজবে নি:সন্দেহে।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.