আজকের সূর্যোদয়ের রির্পোট ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কৃতজ্ঞতা

জুবায়ের সিদ্দিকী – 

একজন বীর উত্তম বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল মাওলা। একাত্তরের রনাঙ্গনে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে দেওয়া হয়েছিল বীরউত্তম উপাধি। এই বীরউত্তম খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা জীবিত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাননি। গত বছরের ২৬ শে নভেম্বর তিনি মারা যান। আজকের সূর্যোদয় গত ১২-১৮ এপ্রিল ২০১৬ সংখ্যায় “একজন বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন না উল্টো ভূমিদূস্যর কবলে” শিরোনামে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়। এতে করে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল মাওলার স্ত্রী গত সপ্তাহে জানান, আজকের সূর্যোদয় এবং আপনাকে ধন্যবাদ। স্থানীয় প্রশাসন আমার বাড়ীতে লোক পাঠিয়েছে। স্কুল নির্মাণের উদ্যেগ সরকার নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তার স্বামীর শেষ ইচ্ছা ছিল চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলাধীন নাওপুরা গ্রামে নিজের জায়গায় স্কুল নির্মাণ করা। এই লক্ষ্যে তিনি সরকারকে জমি দান করেন। সরকারও বিদ্যালয় নির্মাণে ৫০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেন।

কিন্তু বাঁধ সাধে একটি কুচক্রিমহল। মামলা করে দেয় আদালতে। অতএব থমকে পড়ে নির্মাণ কাজ। এখন এই রিপোর্ট লেখার পর প্রশাসন উদ্যেগ গ্রহন করায় আজকের সূর্যোদয় পরিবার অভিনন্দন জানচ্ছে প্রশাসনকে। আমরা আশাকরি এই মহতী উদ্যেগ বাস্তবায়নে সরকার হার্ডলাইনে গিয়ে বিদ্যালয় নির্মাণের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ এবং আদালতের মামলা দায়ের কারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। এই বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবদশায় অনেক লড়াই করেছেন আইনীভাবে। আজ তার পরিবার এই মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন বাস্তাবয়ানে পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের ও সংবাদপত্রের দুয়ারে ধর্না দিয়েছেন। ভূমিদূস্যরা এই জমি আতœসাৎ করে ভোগাদখল করার চক্রান্ত করেছিল বলে জানান এলাকাবাসী। আজকের সূর্যোদয়ের রির্পোট প্রকাশের পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসায় এখন এই পরিবারটি আলোর মুখ দেখছে দেখে গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সাথে দেশবাসী ও আনন্দিত বলে আমাদের বিশ্বাস। নিজের নির্ভেজাল জমির উপর বিপনিকেন্দ্র, ভাড়াঘর বা কল-কারখানা স্থাপন না করে শিক্ষার আলো ছড়াতে যে মানুষটি জীবনের শেষ সময়ে এসে একটি যুদ্ধাশেষে আরেকটি যুদ্ধ করেছিলেন আইনগত ভাবে ভূমিসূস্যর বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে এখন শাস্তি হাওয়া উচিত। তবেই তার আতœা শান্তি পাবে। নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যপারে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহন করলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়–ক গ্রামের মেঠোপ্রান্তরে ঘরে ঘরে। হাসি ফুটে উঠুক গ্রামের শিশু-কিশোরের মুখে। এই প্রত্যাশায় আমরা আজ আশাবাদী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশ্বাসী এই সরকার আন্তরিক বলে আমাদের বিশ্বাস।

এদিকে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও লজ্জার বিষয় যে, এই বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল মাওলা বীর উত্তম সরকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন না। জীবিত অবস্তায় নিজে নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য হিসাবে ৬ মাস অন্তর পেয়েছেন ১০ হাজার টাকা করে। এখন তার পরিবার তা পাচ্ছেন। এই বীরমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে সকল কাগজপত্র পাঠালেও পাছেন না কোন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পাচ্ছেন না কোন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। সিরাজুল মাওলার পরিবার আজ বঞ্চিত, তাদের সরকার কর্তৃক দেওয়া প্রাপ্য থেকে। একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধ পরিবার যদি মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা না পায় তবে প্রশ্ন জাগে এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড নিয়ে। যে মানুষটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌবাহিনীর সদস্য হিসাবে কর্মরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের অংশ নিয়ে হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন এবং আহত অবস্তায় ফিরেছেন রনাঙ্গন থেকে।

এমন একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আজ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই লজ্জা জাতীর, এই লজ্জা দেশবাসীর। এমনতো হওয়ার কথা ছিলনা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রি জননেত্রি শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নানাভাবে সাহায্য করছেন। এই সরকারের আমলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল মাওলার পরিবার ভূমিদূস্যের কবলে মামলায় জড়িয়ে হচ্ছেন হয়রানীর শিকার । বঞ্চিত হচ্ছেন প্রাপ্য অধিকার থেকে। এই অনিময়ের অবসান এই সরকারের আমলেই সম্ভব বলে জানান এলাকাবাসী। এদিকে বীর উত্তমের স্ত্রী নাজমা আক্তার জানান, আমার স্বামীর শেষ ইচ্ছা গ্রামে আমাদের নিজস্ব জমিতে স্কুল নির্মানের সরকারী উদ্যোকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমার পরিবারকে আগলে রেখেছি স্বামীর স্মৃতি নিয়ে দুঃখ কষ্টে, সুখে-দুখে। আমার সন্তানদের কাছে সবচেয়ে বড় অংহকার যে, তাদের বাবা ছিলেন একজন বীরউত্তম মুক্তিযোদ্ধা। এটা আমারও আজ বড় অহংকার জীবনের সকল দুঃখকষ্টকে ভূলিয়ে রাখে। আমার স্বামীর দুঃসাহসিক অবদান দেশের জন্য ছিল। আমার স্বামী ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সাদামাটা জীবন ও পরহেজগার ছিলেন। কোন লোভ, লালসা, তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আমার জীবন সার্থক, আমার গর্ব, আমার অহংকার, আমার স্বামী বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজুর মাওলা বীর উত্তম। আমার জীবনেরও কোন চাওয়া পাওয়া নেই। আমার স্বামীর শেষ স্বপ্ন স্কুল নির্মাণ হলেই শিক্ষার আলোর সাথে আমাদের হৃদয়ে আসবে প্রশান্তির পরশ।

মানুষের ও মাটির গন্ধে এবং বঙ্গবন্ধুর আহব্বানে নৌবাহিনী থেকে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহন করে সাহসিকতার সাথে যুদ্ধে আহত হন আমার স্বামী। তারপরেও লড়াই করেছেন দেশ শক্রমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে। আমার সন্তানেরা আগামীতে বেড়ে উঠুক তাদের পিতার আদর্শকে বুকে ধারন করে। আজকের সূর্যোদয় মুক্তিযোদ্ধাদের ফরিয়াদ ও তাদের পরিবারের সুখদুঃখের রির্পোট প্রকাশের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ আপনাদের এভাবে মানুষের পাশে দাড়াঁনোর সুযোগ দেবেন, এই প্রত্যশা ও দোয়া করছি।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.