কাপ্তাই হ্রদে পানিবন্দি ২০ হাজার পরিবার

0

মোঃ সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি : রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে অতিরিক্ত পানি বেড়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ২০ হাজার পরিবারের মানুষ। বর্তমানে পানিবন্দি এসব মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দুর্গত লোকজনের ত্রাণ সহায়তায় প্রকৃত তালিকা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলাসহ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে।

এদিকে কাপ্তাই লেকে পানি বেড়ে যাওয়ায় রাঙামাটি শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত: ২০ হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। শুধু রাঙামাটি পৌর এলাকায় প্রকৃত পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১০ হাজার বলে জানান ২ নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর আবদুল করিম।

এছাড়া সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নসহ বাঘাইছড়ি, বরকল, লংগদু, নানিয়ারচর, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার বিভিন্ন নিম্ন এলাকায় আরও প্রায় ১০ হাজারের অধিক পরিবারের লোকজন পানিবিন্দ হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে কাপ্তাই লেকের পানির উচ্চতা বিপদসীমা পার করছে। সদ্য বর্ষণে উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ লেকে অতিরিক্ত পানি বেড়ে যায়। পানির চাপ কমাতে কাপ্তাই বাঁধের ¯িপ্রলওয়ের ১৬টি গেট খুলে দিয়ে পানি ছাড়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, বর্তমান সময়ে লেকে পানির উচ্চতা থাকার কথা ১০৭ এমএসএল (মীন সি লেভেল)। কিন্তু তা অত্রিকম করে বর্তমানে লেকে সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল লেভেলের কাছাকাছি- যা রয়েছে বিপদসীমায়।

আরো জানা যায়, কাপ্তাই লেকে অতিরিক্ত পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে রাঙামাটি শহরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত লোকজন চরম দুর্দশার মধ্যে। গভীরে তলিয়ে গেছে রাঙামাটির মনোরম ঝুলন্ত সেতুটি।

রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, কাপ্তাই লেকে অতিরিক্ত পানি বাড়ায় রাঙামাটির মনোরম ঝুলন্ত সেতুটি ইতোমধ্যে প্রায় ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জেলার কাপ্তাইয়ে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর ওপর দিয়ে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। এতে সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ-যার আয়তন প্রায় সাড়ে ৭শ’ বর্গকিলোমিটার। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই লেকের পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। এতে প্লাবিত হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন লেক সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের মানুষ।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান বলেন, কাপ্তাই লেকে নির্ধারিত সীমার নিচে বাড়িঘর বা স্থাপনা তৈরিসহ বসবাসের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। লেকের লেভেল সীমার উচ্চতা সর্বোচ্চ ১২০ ফুট। কিন্তু শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অনেকে এ সীমারেখার নিচে লেক সংলগ্ন এলাকায় বাড়িঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছেন। তবে এদের সংখ্যা খুব একটা বেশি না। কিন্তু প্রতি বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই লেকে পানি বাড়লে সেইসব নিম্ন লেভেলে বসবাসকারীরা পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়ে। এবারও একই দুর্দশার কবলে তারা। কবলিত লোকজনের ভোগান্তি সরাতে লেকের অতিরিক্ত পানি কমানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ক্ষতিপূরণের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার বলেন, জেলায় পানিবন্দি লোকজনের সঠিক সংখ্যা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে নিজ নিজ এলাকায় ডুবে যাওয়া প্রকৃত পরিবার ও ঘরবাড়ির তালিকা প্রণয়ন করে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা, ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। বিস্তারিত তালিকা এখনও পাওয়া যায়নি। তালিকা পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইতোমধ্যে রাঙামাটি পৌর এলাকার শান্তিনগর, মুসলিমপাড়া, ফিশারি বাঁধ এলাকা, এসপি অফিস সংলগ্ন এলাকা, গর্জতলী, আলম ডক, তবলছড়ি, আসামবস্তি, মাঝের বস্তিসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করে দুর্গত লোকজনের খোঁজখবর নিয়েছেন পৌরসভা মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী।

তিনি বলেন, সদ্য বর্ষায় উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই লেকের পানির উচ্চতা দ্রুত বেড়ে এখন বিপদসীমায়। এতে পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বহু লোকজন পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাদের ত্রাণ সহায়তার জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কাপ্তাই লেক সংলগ্ন ১১০ ফুট উপর থেকে ১২০ ফুট লেভেলের মধ্যে যারা বাড়িঘর করে বসবাস করছেন তাদেরকে সরিয়ে অন্যত্র পুনর্বাসনের চিন্তাভাবনা চলছে। পরে জেলা প্রশাসনের পরামর্শে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.