‘আঁই জানি আঁর পোয়া আরে ন তুয়াইবু’

0

মো: সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি : লিলু প্রভা দাশ, স্বামী অমূল্য কান্তি দাশ বাড়ি তালুকদার পাড়া বাঙ্গাল কাটি খাগড়াছড়ি সদর, খাগড়াছড়ি জেলায়। গত এক মাস হচ্ছে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়েছে। পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেরাচ্ছেন তিনি। ছেলে আজো তার খোঁজ নিতে আসে নি, তাই তিনি মনে মনে ধারণ করে আছে তার ছেলে আর কখনো তাকে নিতে আসবে না। তাই তিনি চিৎকার করে বলেন ‘আঁই জানি আঁর পোয়া আরে ন তুয়াইবু’ যারা অর্থ ‘আমি জানি আমার ছেলে আমাকে আর খুঁজবে না’।

এই প্রতিবেদক শনিবার দুপুর তিনটার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি এলাকায় গাড়ি থেকে দেখতে পান একজন বৃদ্ধ মহিলা রাস্তার পাশে চিৎকার করে কি যেনো বলেছে আর কান্না করছে। কৌতুহলবশত গাড়ি থেকে নেমে মহিলাটির পাশে গিয়ে জানতে চেষ্টা করি তাঁর কি হয়েছে।

তখনি এই মহিলা বলেন, আমার স্বামী আমাদের বিয়ের কিছু দিন পরে ছেড়ে চলে যায় এবং অন্য একটি বিয়ে করেন। আমার ঘরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। মেয়েটি চট্টগ্রামে গার্মেন্টসে কাজ করতো। এখন কোথায় আছে আমি জানি না। আর ছেলে উজ্জল খাগড়াছড়িতে টমটম চালায়। তার বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় ৭ বছর হচ্ছে, তার ঘরেও বাচ্চা রয়েছে। ছেলে তার বউ আর শাশুড়ির কথামত সব সময় মা’র ওপরে নির্যাতন করেন। শুধু ছেলে নয়, ছেলের বউয়ের নির্যাতন থেকেও রক্ষা পান না প্রায় ৫১ বছর বয়সি এই মহিলা।

তার থেকে যখন এই ঘটনার কথা জানতে চাওয়া হয় তখন তিনি বারবার আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে তার উপরে চলা সেই সকল নির্যাতনের কথা বলতে থাকেন। কিন্তু একটা কথা অবিশ্বাস্য যে তার সন্তান তার শরীরে আঘাত করেছে। কিন্তু এতে তার কোন অভিযোগ নেই। তিনি বারবার বলছে ‘আর পুয়া এখনো কিছু ন বুঝে, তার বউ ও শাশুড়ির কথা উনিয়েরে এই কাম গরজিদে, তার কোন দোষ নাই’ (‘আমরা ছেলে এখনো তেমন কিছু বুঝে না, তার বউ আর শাশুড়ির কথা শুনে সে এই কাজ করেছে, তার কোন দোষ নেই’)। তিনি আরো বলেন, তাঁর ছেলে এখন বেশ টাকা আয় করছে টমটম চালিয়ে। সে নিজেই একটি টমটমের মালিক এখন।

কথার মাঝে তিনি ছেলেকে লালন-পালন’র এই স্মৃতিগুলো মনে করে কান্না করছেন আর বারবার চোখের জল মুছেই চলেছেন। তবুও চোখের জল যেনো শেষ হওয়ার নয়। এই চোখ যেনো একটি সমুদ্র, যাতে ছেলের সকল দোষ গভিরে তলিয়ে গেছে। শুধু মাত্র তার বউ, শাশুড়ি আর তার স্বামীর দোষগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে।

বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলে তিনি জানান, আমরা বাবার বাড়ি এই রাঙামাটিতে, কিন্তু বাবা-মা নেই, শুধু মাত্র ভাই-ভাবি রয়েছে। তাদের কাছে কিছু দিন থাকলেও তারা তাকে বের করে দিয়েছে। পরে তিনি রাঙামাটির বেশ কয়েকটি বাড়িতে দৈনিক কাজ করেছেন। কিন্তু এখন তিনি কিছুই করে না। বাড়ি যেতে ইচ্ছে হলেও তিনি বাড়ি যাবেন না। কারণ তার ছেলে ও বউ এবার তাকে মেরেই ফেলবে। পরে জানতে চাইলে, তিনি এখন কোথায় যাবেন? তখন তিনি বলেন, আমি এই রাস্তায় থাকবো আর কোন মঠ-মন্দিরে আশ্রয় নিবো, তবুও বাড়ি ফিরে যাবো না।

পরিশেষে একটা কথা বলেন তিনি ‘ভগবান আর পোঁয়ারে বুজিবার শক্তি দিও, তারে সুখে রাখিও’ (সৃষ্টিকর্তা আমার ছেলেকে বুঝার শক্তি দাও, তাকে সুখে রেখো’)।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.