দূর্গাপূজা বাঙালি সম্প্রদায়ের সামাজিক মহামিলনের মহোৎসব

0

আবছার উদ্দিন অলি : ঢাক ঢোল বাজিয়ে আবার এলো শারদীয় দূর্গাপূজা। সাজ সাজ রব সর্বত্র। পূজার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গ্রাম গঞ্জে শহর বন্দরে মন্ডপগুলো সেজেছে বর্ণিল সাজে। ৭ অক্টোবর ষষ্ঠী দিয়ে পূজা শুরু হবে, ১১ অক্টোবর বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে। ইতিমধ্যে সকল পাড়া মহল্লা পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। আনন্দঘন আয়োজনে শুরু হবে শারদীয় দূর্গাপূজা। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা। ধর্মের দিক থেকে এটি দেবী দুর্গার বার্ষিক শারদীয় পূজা। এ পূজা মূলত ধর্মীয় হলেও তা পরিণত হয়েছে বাঙালি হিন্দুর বার্ষিক সামাজিক আনন্দ-উৎসবে। দূর্গাপূজা পরিণত হয়েছে দূর্গোৎসবের সামাজিক মহোৎসবে। প্রতি বছর দূর্গোৎসব হয় শরৎকালে। দূর্গোৎসবের মূল বাণী মঙ্গল প্রতিষ্ঠার, অমঙ্গল নাশের। যে দূর্গার পূজা হয় তিনি অসুরবিনাশিনী, শক্তিদায়িনী, ভাগ্য-কৃষ্টি প্রদায়িনী। মানুষের মনের কালিমা ঘুচিয়ে তিনি আসেন আলোর নিশানা দেখাতে।

এ উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় আশ্বিন মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে – দেবীর বোধনের মাধ্যমে। তারপর পূজা চলে নবমী পযন্ত। আশ্বিনে দূর্গোৎসব শুরু হলেও এর প্রস্তুতি শুরু হয় অন্তত মাসখানেক আগে থেকে। পাড়ায় পাড়ায় সর্বজনীন দূর্গাপূজার উদ্যোগ-আয়োজন চলতে থাকে। সেইসঙ্গে ঘরবাড়ি মেরামত করে সুন্দর করা, নতুন জামাকাপড় ও আসবাবপত্র কেনাকাটার কাজ শুরু হয় পূজার আগেই। দোকানের দোকানে সাজানো হয় নতুন নতুন ফ্যাশনের জামাকাপড় ও নানারকম পণ্য। মহালয়ার সকালে চন্ডীপাঠ শুরু হলেই বোঝা যায় এসে গেছে পূজা। দশমীর দিন পর্যন্ত পূজামন্ডপগুলো সেজে থাকে আলোকমালায়। কোথাও কোথাও মেলা বসে।

হরেক রকম দোকান বসে পসরা সাজিয়ে, বসে নানারকম খাবারের দোকান। শরতের নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, আর ঢাকের বাজনায় উৎসবে পরিবেশ হয়ে ওঠে অনুপম। দলে দলে মানুষ নতুন সাজপোশাক পরে ঘুরে বেড়ায় আলোময় সুসজ্জিত পূজামন্ডপে। শত্রু মিত্র সবাই উজ্জীবিত হয় সম্প্রীতি ও সম্মিলন-চেতনায়। সবাই ঘরে ঘরে তারই আমেজ পাওয়া যায় মিষ্টান্ন বিতরণে, বিনিময়ে। যাত্রা, নাচ, গান, মেলা উৎসবের পরিবেশকে করে তোলে আনন্দ-বিনোদনমুখী, করে তোলে আরো মনোরম। সর্বস্তুরের মানুষ যোগ দেয় এ উৎসবে। এ উৎসব উপলক্ষে গান, বেতার ও টিভিতে প্রচারিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। বিজয়া দশমীতে বাজে বিদায়ের করুণ সুর।

বিষর্ণতার মূর্ছনা জাগে সবার অন্তরে। সেদিন দেবীর বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয়া পূজার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পালা শেষ হয়। প্রিয় বিসর্জনের বেদনায় অনেকের চোখে জল নামে। বেদনার্ত মন দিয়ে ঘরে ঘরে চলে গুরুজন প্রণাম, কোলাকুলি ও প্রতিসম্ভাষণ বিনিময়। বিসর্জনের পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে চলে বিজয়ার শুভেচ্ছ বিনিময় এবং সেই সঙ্গে প্রীতি মিলন, ভোজ ও আপ্যায়ন। দূর্গাপূজায় হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে কোলাকুলি আর মিষ্টিমুখ করে গড়ে তোলে সম্প্রীতির বন্ধন। এ পূজা কেবল পূজা নয়, এ বাঙালি সম্প্রদায়ের সামাজিক মহামিলনের মহোৎসব। দূর্গাপূজার আনন্দ পৌঁছে যাক সবার ঘরে ঘরে। সুন্দর সুষ্ঠ হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে পূজার সকল কার্যক্রম সমাপ্ত হোক এমনটি প্রত্যাশা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.